সার্ক ভিসা স্কিমের অধীনেও ভারতে ভিসা পাবে না পাকিস্তানিরা, একাধিক সিদ্ধান্ত দিল্লির

কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় হতাহতের ঘটনার পর সার্ক ভিসা স্কিমের অধীনেও পাকিস্তানিদের ভিসা দেওয়া বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। একই সঙ্গে প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থল সীমান্ত বন্ধের পাশাপাশি ঐতিহাসিক সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে ভারতের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির জরুরি বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে পাকিস্তানের বিষয়ে পাঁচটি সিদ্ধান্ত আসার খবর দিয়েছে এনডিটিভিসহ দেশটির সংবাদমাধ্যম।
বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি এসব তথ্য জানান।
জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে ভারতের সর্বোচ্চ এ কমিটির সিদ্ধান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, বৈঠকে জঙ্গি হামলার পেছনে আন্তসীমান্ত সংযোগের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এ হামলা এমন এক সময়ে করা হয়েছে যখন সফল একটি নির্বাচনের পর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের সূচনা হয়েছিল।
হামলার প্রকৃতি ও গুরুত্ব বিবেচনা করে কমিটি এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে তিনি তুলে ধরেন।
এরপর সিদ্ধান্তগুলো জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে স্থলপথে আটারি-ওয়াঘা চেকপোস্ট অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়া হবে। এ পথ দিয়ে যারা ভারতে এসেছেন তাদের ১ মে এর মধ্যে ফিরে যেতে হবে।
ভারত-শাসিত কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পহেলগামে মঙ্গলবার ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত আরও ১০ জন। কাশ্মীরে ঘুরতে গিয়ে তারা এই হামলার শিকার হয়েছেন। প্রিয়জন হারিয়েছেন নানা প্রান্তের মানুষ।
‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) নামের একটি জঙ্গি সংগঠন এই ভয়াবহ হামলার দায় স্বীকার করেছে। এই সংগঠনটি পাকিস্তান-ভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা। টিআরএফ এর পেছনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর হাত আছে বলে ধারণা করা হয়।
পাকিস্তানের বিষয়ে নেওয়া ৫ সিদ্ধান্ত
>> ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত থাকবে। বিশ্বাসের সঙ্গে অপরিবর্তনীয়ভাবে যতদিন না পাকিস্তান সীমান্ত সন্ত্রাসবাদের সমর্থন প্রত্যাখ্যান করছে, ততদিন এটি স্থগিত থাকবে।
>> তাৎক্ষণিকভাবে সমন্বিত আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত চেকপোস্ট বন্ধ হবে। বৈধ নথিপত্র নিয়ে যারা আটারি-ওয়াঘা পার হয়েছেন, তারা ওই পথ ধরে ১ মের মধ্যে ফেরত যেতে পারবেন।
>> সার্ক ভিসা এক্সেম্পশন স্কিমের (এসভিইএস) আওতায় পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারতে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে না। পাকিস্তানি নাগরিকদের এর আগে দেওয়া যেকোনো এসভিইএস ভিসা বাতিল বলে ধরা হবে। ভারতে এ ভিসায় অবস্থান করা পাকিস্তানি নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়তে হবে।
>> দিল্লিতে পাকিস্তানি হাই কমিশনের সামরিক ও প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা যেমন- নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের অবাঞ্চিত (পার্সোনা নন গ্রাটা) ঘোষণা করা হয়েছে। তারা ভারত ছাড়তে এক সপ্তাহ সময় পাবেন। একইভাবে ইসলামাবাদে ভারতীয় হাই কমিশন থেকে নৌ ও বিমান উপদেষ্টা প্রত্যাহার করছে ভারত। উভয় হাই কমিশনের এসব পদ তাৎক্ষণিকভাবে বাতিল হিসেবে ধরা হয়েছে। এছাড়া উভয় দেশের হাই কমিশনের ‘সার্ভিস অ্যাডভাইজারের’ পাঁচজন কর্মীকেও তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হবে।
>> হাই কমিশনের সামগ্রিক লোকবল ৫৫ থেকে কমিয়ে ৩০ জনে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ১ মের মধ্যে এটি কার্যকর করতে হবে।