গাজায় ইসরায়েলি অবরোধে চরম মানবিক বিপর্যয়, ভয়াবহ খাদ্য ও ওষুধ সংকট

ইসরায়েলের সাত সপ্তাহের সামরিক অবরোধ গাজাকে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে। সাধারণ মানুষ, চিকিৎসক ও মানবিক সহায়তা কর্মীরা জানান, এই অবরোধ যুদ্ধকালীন সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে। খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের অভাবে মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। গাজাবাসীরা এখন বিমান হামলার চেয়েও ক্ষুধাকে ভয় পাচ্ছেন।
উত্তর গাজার বাসিন্দা হিকমত আল-মাসরি জানান, তিনি অনেকবার নিজের খাবার সন্তানকে দিয়েছেন। দুই মাসের যুদ্ধবিরতির সময় সংগৃহীত খাবার শেষ হয়ে গেছে, মানুষ খালি হাঁড়ি নিয়ে রান্নাঘরের সামনে লাইনে দাঁড়াচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, বাজারে পণ্যের দাম বেড়েছে ১৪০০ শতাংশ। নতুন করে ইসরায়েলি স্থানচ্যুতির আদেশে ৪ লাখ ২০ হাজার মানুষ আবার ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
অক্সফামের তথ্য অনুযায়ী, বেশিরভাগ শিশু দিনে এক বেলারও কম খাবার পাচ্ছে। অবরোধ ও হামলার কারণে ৯৫% ত্রাণ সংস্থা কার্যক্রম স্থগিত করেছে। ফেব্রুয়ারি থেকে আন্তর্জাতিক কর্মীদের গাজায় প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইসরায়েল। সাধারণ ওষুধ, এমনকি ব্যথানাশকও পাওয়া যাচ্ছে না।
ইসরায়েলি বাহিনী উত্তর গাজা ও রাফাহ শহরে হামলা বাড়িয়েছে, যার ফলে গাজা মিসরের সঙ্গে সংযোগ হারিয়েছে। জাতিসংঘ জানায়, গাজার ৭০% অংশ ইসরায়েলি সামরিক বাফার জোন বা সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশাধীন। রাফাহতে নতুন নিরাপত্তা অঞ্চল গাজার এক-পঞ্চমাংশ। এতে ২৩ লাখ মানুষের নিরাপদ আশ্রয়, ত্রাণ ও চিকিৎসা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
ইসরায়েল মার্চ থেকে সবরকম সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে এবং আগের সরিয়ে নেওয়া স্থলবাহিনী আবার মোতায়েন করেছে। তারা দাবি করেছে, ৭ অক্টোবর হামলায় আটক বাকি জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত সহায়তা চালু হবে না। এই অবরোধ অষ্টম সপ্তাহে গড়িয়েছে এবং এটিকে দীর্ঘতম অবরোধ বলা হচ্ছে।
গাজার মানুষ আশঙ্কা করছে, ইসরায়েল স্থায়ী সেনা মোতায়েন এবং জমি দখলের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে বাস্তুচ্যুত করতে চাইছে। সাম্প্রতিক হামলায় খান ইউনিস ও গাজা সিটির প্রধান হাসপাতালগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানবিক কর্মীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক কর্মীদের উপস্থিতি একসময় নিরাপত্তার প্রতীক ছিল, এখন সেটিও আর নিশ্চয়তা দিচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধবিরতির আলোচনা পুনরায় শুরুর চেষ্টা করছে, তবে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।