পূর্বশত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে: উপ–প্রেস সচিব

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সম্প্রতি বিতর্কের মুখে অন্তর্বর্তী সরকার স্পষ্ট করে জানিয়েছে, দেশের পররাষ্ট্রনীতি এখন থেকে শুধুমাত্র “বাংলাদেশপন্থী” হবে, যা জাতীয় স্বার্থে পরিচালিত হবে। প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার আজ শুক্রবার তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ কথা জানান।
আজাদ মজুমদার বলেন, “বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কি পাকিস্তানপন্থী হয়ে যাচ্ছে?”— এমন প্রশ্ন আমাদের অবাক করেনি। কিছু মানুষ সবসময়ই থাকবে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীন পরিচয়ে পুরোপুরি বিশ্বাস করে না। তবে আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এখনকার পররাষ্ট্রনীতি হবে বাংলাদেশের নিজস্ব স্বার্থে পরিচালিত নীতি।
তিনি বিভিন্ন ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন, “বিশ্বে পূর্বশত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার বহু উদাহরণ রয়েছে। যেমন, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড শতাব্দী ধরে যুদ্ধ করলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে একত্র হয়েছিল। আবার যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান একই যুদ্ধে শত্রু ছিল, পরে তারা ঘনিষ্ঠ মিত্রে পরিণত হয়।”
সম্প্রতি সফররত পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার দাবি, সম্পদের বণ্টন, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসনসহ কয়েকটি অমীমাংসিত বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে উত্থাপন করা হয়।
আজাদ মজুমদার জানান, ১৯৭৪ সালের একটি অনুমিত হিসাব অনুযায়ী, পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনা প্রায় ৪.৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পাশাপাশি, ১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের জন্য দেওয়া বৈদেশিক অনুদানের প্রায় ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ফেরত চেয়েছে বাংলাদেশ। এই অর্থগুলো ১৯৭১ সালের আগে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঢাকার অফিসে জমা ছিল, যা পরে লাহোরে স্থানান্তরিত হয়।
এছাড়াও তিনি জানান, ১৯৭১ সালের পর আটকে পড়া পাকিস্তানিদের মধ্যে মাত্র ১.২৫ লাখ জনকে ফেরত নিয়েছিল পাকিস্তান, অথচ বাংলাদেশের ১৪টি জেলায় থাকা ৭৯টি শিবিরে ৩.২৫ লাখ মানুষ অবস্থান করছিল।
উপ-প্রেস সচিব বলেন, “এই বিষয়গুলোই দুই দেশের মধ্যে সুস্থ, ভবিষ্যৎমুখী সম্পর্ক গড়ে তুলতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সমস্যা সমাধানের সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হলো আলোচনা। অন্তর্বর্তী সরকার সেই পথেই অগ্রসর হচ্ছে।”
আজাদ মজুমদার আরও জানান, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত ডিসেম্বরে মিশরে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে এক বৈঠকে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধানে আহ্বান জানান। সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বালুচের সঙ্গে বৈঠকে তিনি একই আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বলেন, এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক অপরিহার্য।
তিনি বলেন, “ভবিষ্যতের জন্য অতীতের ইস্যুগুলোর সমাধান এখন সময়ের দাবি। এখনই হয়তো বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের একসঙ্গে কাজ করে এগিয়ে যাওয়ার সেরা সময়।”