মঙ্গলবার ০১ এপ্রিল ২০২৫, চৈত্র ১৮ ১৪৩১, ০২ শাওয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

যুদ্ধবিরতি: মধ্যস্থতাকারীদের দেওয়া নতুন প্রস্তাবে রাজি হামাস

 প্রকাশিত: ১৯:৩৮, ৩০ মার্চ ২০২৫

যুদ্ধবিরতি: মধ্যস্থতাকারীদের দেওয়া নতুন প্রস্তাবে রাজি হামাস

উত্তর গাজার ধ্বংসস্তূপের উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে একটি পাখি।

মধ্যস্থতাকারী মিশর ও কাতারের কাছ থেকে দুইদিন আগে পাওয়া গাজা যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত নতুন এক প্রস্তাবে হামাস সম্মত হয়েছে বলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটির শীর্ষ এক নেতা জানিয়েছেন।

“দুইদিন আগে আমরা মধ্যস্থতাকারী মিশর ও কাতারের কাছ থেকে একটি প্রস্তাব পেয়েছি। আমরা ভালোভাবে এটিকে পর্যালোচনা করে দেখেছি এবং মেনে নিয়েছি।

“আশা করছি (ইসরায়েলি) দখলদাররা এতে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না,” শনিবার টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে খলিল আল-হায়া এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় শুরু হওয়া হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে বিরতি নিশ্চিতের লক্ষ্যে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে যে অপ্রত্যক্ষ আলোচনা চলছে তাতে হায়া হামাসের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

নতুন এ প্রস্তাবে কী আছে তার বিস্তারিত জানায়নি হামাস।

তবে বৃহস্পতিবার একাধিক নিরাপত্তা সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছিল, অন্তর্বর্তীকালীন পর্যায়সহ নতুন একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে মিশর ইসরায়েলের দিক থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে।

ওই প্রস্তাবে হামাসকে প্রতি সপ্তাহে তাদের হাতে থাকা ৫ জন জিম্মি মুক্তি দেওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছে, বলেছে সূত্রগুলো।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সেসময় জানিয়েছিল, তারা মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাব নিয়ে সিরিজ আলোচনা করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে পাল্টা একটি প্রস্তাব মধ্যস্থতাকারীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে।

শনিবার হামাস যে প্রস্তাবে সম্মত হওয়ার কথা জানিয়েছে, তাতে ইসরায়েলও রাজি কিনা তা জানতে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কাছ থেকে কোনো জবাব পায়নি রয়টার্স।

১৫ মাসের টানা যুদ্ধ শেষে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি দুই পক্ষের মধ্যে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে হামাসের হাতে থাকা কয়েক ডজন জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলও কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দিয়েছিল।

তিন ধাপের ওই যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয়। এই ধাপে হামাসের হাতে থাকা বাদবাকি জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে গাজা থেকে সব ইসরায়েলি সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা ছিল।

হামাস পরে জানায়, নতুন করে যে প্রস্তাবই আসুক না কেন, তাতে দ্বিতীয় ধাপ শুরুর বিষয়টি থাকতেই হবে। অন্যদিকে ইসরায়েল চাইছিল প্রথম ধাপের মেয়াদ আরও ৬ সপ্তাহ বাড়াতে।

হামাসকে ‘নিরস্ত্র করতে’ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যে আহ্বান, তার প্রত্যুত্তরে শনিবার হায়া বলেন, তাদের অস্ত্রাগার হচ্ছে যে কোনো আলোচনার ক্ষেত্রে ‘রেড লাইন’, এবং তারা কখনোই নিরস্ত্র হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ‘ইসরায়েলি দখলদারিত্ব’ বলবৎ থাকবে।

তেল আবিব ও ওয়াশিংটন বলছে, যুদ্ধপরবর্তী গাজার যে কোনো বন্দোবস্তে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকতে পারবে না।

এদিকে শনিবারও গাজায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত ছিল। এদিন তাদের হামলায় ভূখণ্ডটিতে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।

ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ গাজায় তাদের নিরাপত্তা অঞ্চল বিস্তৃত করতে রাফার জেনিনা এলাকায়ও ‘স্থল কার্যক্রম’ শুরু করেছে।

চলতি মাসের ১৮ তারিখ থেকে তেল আবিব তাদের ভাষায় ‘জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসের ওপর চাপ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে’ ফের গাজায় বোমাবর্ষণ ও স্থল অভিযান শুরু করে।

ইসরায়েলি ভূখণ্ডে রকেট হামলাকে কারণ দেখিয়ে তারা এরই মধ্যে গাজার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার বাসিন্দাকে সরে যাওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে।

ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

ওই বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের কয়েক হাজার যোদ্ধা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ঢুকে পড়ে প্রায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা ও ২৫১ জনকে জিম্মি করার পর তেল আবিব গাজায় সর্বাত্মক যুদ্ধে নামে।