মিয়ানমারে ভূমিকম্পে মৃত ১৬০০ ছাড়াল

মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে ধসে পড়া একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপে কাজ করছেন উদ্ধারকারীরা।
মিয়ানমারে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১৬০০ ছাড়িয়ে গেছে।
দরিদ্র, যুদ্ধকবলিত দেশটির সামরিক শাসকরা শনিবার কয়েকশ বিদেশি উদ্ধারকর্মীকে দেশটিতে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছেন।
ভূমিকম্প-বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমারে গত ২০ বছরের মধ্যে এত তীব্র ভূমিকম্প আর দেখা যায়নি।
শুক্রবারের ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পটি গত শতাব্দীতে দেশটিতে হওয়া ভূমিকম্পগুলোর তুলনায়ও বেশি শক্তিশালী। চলমান গৃহযুদ্ধের মধ্যে এই ভূমিকম্পের ধাক্কায় মিয়ানমারের বিমানবন্দর, সেতু ও মহাসড়কগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গৃহযুদ্ধের কারণে আগে থেকেই দেশটির অর্থনীতি স্থবির আর লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে আছেন; এখন ভয়াবহ ভূমিকম্পে সার্বিক পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বার্মিজ বিবিসির খবর অনুযায়ী, মিয়ানমারে শনিবার মৃতের সংখ্যা ১৬৪৪ জনে দাঁড়িয়েছে বলে দেশটির সামরিক সরকার জানিয়েছে।
মিয়ানমারের প্রতিবেশী থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে একটি নির্মাণাধীন আকাশচুম্বী ভবন ধসে পড়েছে, পাশাপাশি বহু ভবন ভয়ানকভাবে কেঁপে উঠেছে। এই দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত নয়জনের।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের নিকটবর্তী মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়ে শুক্রবার ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মানুষজনকে উদ্ধারে ভারী যন্ত্রপাতির অভাবে বেপরোয়া লোকজন খালি হাতে উদ্ধারপ্রচেষ্টা শুরু করে। বহু জায়গায় কর্তৃপক্ষের কোনো উপস্থিতি দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
শনিবার ব্যাংককে ধসে পড়া ৩৩তলা ভবনের স্থানটিতে উদ্ধারকাজ অব্যাহত ছিল। সেখানে এখনও ধ্বংসাবশেষের নিচে ৪৭ জন নিখোঁজ অথবা আটকা পড়ে আছেন, তাদের মধ্যে মিয়ানমার থেকে যাওয়া শ্রমিকরাও আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের এক মডেলের হিসাব অনুযায়ী, এই ভূমিকম্পে মিয়ানমারে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে আর ক্ষয়ক্ষতি দেশটির বার্ষিক অর্থনৈতিক উৎপাদনকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।
শুক্রবার ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান জ্যেষ্ঠ জেনারেল মিন অঙ হ্লাইং আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন। শনিবার তিনি ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মান্দালয় পরিদর্শন করেন। তিনি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে অনুসন্ধান ও উদ্ধার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে এবং যে কোনো জরুরি প্রয়োজনে সাড়া দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে জান্তা সরকার।
মিয়ানমারের বিরোধীদলগুলোর জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) জানিয়েছে, অন্তত ২৯০০টি ভবন, ৩০টি মহাসড়ক ও সাতটি সেতু ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এক বিবৃতিতে এনইউজি বলেছে, “উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হওয়ায় নেপিদো ও মান্দালয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।”
পরিস্থিতি সম্পর্কে জানেন এমন এক ব্যক্তি রয়টার্সকে জানিয়েছেন, নেপিদো বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ার ধসে পড়েছে।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য মিয়ানমারের জান্তার মুখপাত্রকে ফোন করা হলেও তিনি রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেননি।