শনিবার ০৫ এপ্রিল ২০২৫, চৈত্র ২২ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মিয়ানমারে ভূমিকম্প: মৃত হাজার ছাড়াল, কারাবন্দি সু চি ‘নিরাপদে আছেন’

 প্রকাশিত: ১৪:৪৩, ২৯ মার্চ ২০২৫

মিয়ানমারে ভূমিকম্প: মৃত হাজার ছাড়াল, কারাবন্দি সু চি ‘নিরাপদে আছেন’

ভূমিকম্পে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ধসে পড়া একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ চলছে।

মিয়ানমারে আঘাত হানা ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির সামরিক বাহিনী।

আহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৭৬, নিখোঁজ ৩০। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা।

মান্দালয়, সাগাইং এবং ইয়াংগনের পাশাপাশি রাজধানী নেপিদোরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তবে সেখানে জেলে বন্দি অং সান সু চি নিরাপদে আছেন।

কারা কর্তৃপক্ষের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসির বার্মা বিভাগ।

২০২১ সালে সু চির দলকে উৎখাত করে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর থেকে শান্তিতে নোবেলজয়ী এ নেত্রীকে বন্দি করে রাখা হয়েছে।

২০২৩ সালে তাকে একবার জেল থেকে সরিয়ে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল, পরে আবার তাকে রাজধানীর একটি কারাগারে ফেরত আনা হয়।

শনিবার সকাল পর্যন্ত মিয়ানমারে আঘাত হানা ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে শনিবার সকাল পর্যন্ত কেবল মান্দালয়েই ৬৯৪ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। রাজধানী নেপিদোতে ৯৪, কাইয়ুক সে-তে ৩০ ও সাগাইংয়ে ১৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

শুক্রবারের এ ভূমিকম্পে মিয়ানমারের পাশাপাশি থাইল্যান্ডেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেখানেও অন্তত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। একটি বহুতল ভবনের নিচে আটকা পড়ে আছে কয়েক ডজন শ্রমিক।

ভূমিকম্প-বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমারে গত ২০ বছরের মধ্যে এত তীব্র ভূমিকম্প আর দেখা যায়নি।

ভূমিকম্প মিয়ানমারে নতুন নয়। ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে দেশটিতে শক্তিশালী ছয়টি ভূমিকম্প হওয়ার ইতিহাস আছে। মিয়ানমারের উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত সাগাইং চ্যুতিরেখা। সেকারণে প্রায়ই ভূমিকম্প হয় মিয়ানমারে।

১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর মিয়ানমারের কয়েক দশক কাটে রাজনৈতিক অস্থিরতা আর সামরিক শাসনেই।

২০১১ সালে দেশটি সেখান থেকে সরে আসা শুরু করে এব‌ং চার বছর পর একটি অবাধ নির্বাচন হয়, যেখানে জয়ী হন অং সান সু চি।

কিন্তু ২০২১ সালে জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের অভ্যুত্থানে সু চি ও তার সরকার উৎখাত হলে গণতন্ত্রের আশা ভেস্তে যায়।

তিনি সু চি ও তার সহযোগীদের আটক করে একের পর এক অভিযোগ আনতে থাকেন। আটকের কয়েক মাস আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতির অভিযোগও আনা হয় তাদের বিরুদ্ধে।

ওই ভোটে অবশ্য সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল।

সু চিকে আটকের পর ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয় মিয়ানমারে; বেসামরিক সরকারের দাবিতে প্রতিদিন সড়কে নেমে আসেন লাখো মানুষ।

ওই সময় বেসামরিক নাগরিক ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সহিংসতা বেড়ে যায়। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেটসহ ব্যাপক বল প্রয়োগ করে সেনাবাহিনী।

অনেক মানবাধিকার সংগঠনের বিশ্বাস, সেনাবাহিনীর ওই দমনপীড়নে কয়েকশ মানুষ নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হন।

দেশটিতে প্রথমে আন্দোলন শুরু হয়েছিল একটি দাবি নিয়ে। কিন্তু গণতন্ত্রপন্থী এবং জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো জড়িয়ে পড়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই তা ব্যাপক বিদ্রোহে রূপ নেয়, যা শেষমেশ গিয়ে ঠেকে সর্বাত্মক গৃহযুদ্ধে।

এরপর চার বছর কেটেছে, কিন্তু দেশটিতে যুদ্ধ-সংঘাত থামেনি। এরই মধ্যে সেনাবাহিনী দেশের বড় একটি অংশের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের প্রতি আনুগত্য কমেছে সেনাবাহিনীতে।

জাতিসংঘের হিসাব বলছে, চলমান গৃহযুদ্ধের কারণে মিয়ানমারের ৩৫ লাখের বেশি মানুষ ভিটেছাড়া হয়েছে। সহিংসতা অব্যাহত থাকলে এ সংখ্যা বাড়বে বলেও সতর্ক করেছে সংস্থাটি।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশটিতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ‘নজিরবিহীন’ পর্যায়ে চলে গেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেকের জন্য খাদ্যসামগ্রী ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।

এর মধ্যে গত সপ্তাহের শুরুতে মিয়ানমারের ১০ লাখের বেশি মানুষের খাদ্য সহায়তা কাটছাঁট করার ঘোষণা দেয় জাতিসংঘ। তহবিলের সংকট দেখিয়ে এ ঘোষণা দেয় তারা।

কয়েক মাস আগে ঘূর্ণিঝড় ইয়াগি মোকাবিলা করতে হয় দেশটিকে।

গত সেপ্টম্বরের ওই ঝড়ে অন্তত ২০০ মানুষের মৃত্যু হয়। ঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধসের কারণে নষ্ট হয় হাজার হাজার একর জমির ফসল।

এর মধ্যে শুক্রবারের ভূমিকম্প যে দেশটির পাঁচ কোটি মানুষের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

ভূমিকম্প আঘাত হানা সাগাইং শহরটি বিদ্রোহীদের শক্ত ঘাটি হিসেবে পরিচিত। কয়েক মাস আগেই বিদ্রোহীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর তুমুল লড়াই চলে সেখানে।