গাজায় পূর্ণ শক্তি নিয়ে যুদ্ধ শুরু: নেতানিয়াহু

গাজায় ইসরায়েল আবারও পূর্ণ শক্তি নিয়ে যুদ্ধ শুরু করেছে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। মঙ্গলবার রাতে টেলিভিশনে এক ভাষণে তিনি এ কথা জানান।
এদিন সকাল থেকেই গাজায় ইসরায়েলের হামলা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়, যাতে অন্তত ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। নেতানিয়াহুর ঘোষণার পর মঙ্গলবার রাতের হামলায় আরও ১৩ জন নিহত হয়েছে।
ফিলিস্তিনের ওয়াফা বার্তা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, রেড ক্রিসেন্টের চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন, আল-মাওয়াসি মানবিক অঞ্চলের কাছে এক তাঁবুতে ড্রোন হামলায় দুইজন বেসামরিক নাগরিক নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন।
দুই মাসের যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টায় ভেস্তে দিয়ে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করেছে। বুধবার জাতিসংঘ দফতরে ইসরায়েলের হামলায় দুইজন কর্মী নিহত ও আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জাতিসংঘ জানিয়েছে।
হামাস-শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের বিমান হামলাকে এই হতাহতের জন্য দায়ী করেছে এবং গুরুতর আহত পাঁচজন বিদেশিকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে। তবে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী দেইর আল-বালাহর জাতিসংঘ কম্পাউন্ডে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের একটি সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে, যেখান থেকে গোষ্ঠীটি ইসরায়েলের দিকে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। হামাসের জাহাজগুলোতেও হামলা করা হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, বুধবারের হামলা মঙ্গলবারের তুলনায় কিছুটা কম হলেও নতুন করে শুরু হওয়া আক্রমণ অবিরামভাবে চলছে।
জাতিসংঘের মানবিক ও জরুরি ত্রাণবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল টম ফ্লেচার বলেছেন, "নিহতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।"
ফিলিস্তিনের ওয়াফা বার্তা সংস্থা জানায়, বুধবার ভোররাতে খান ইউনিসের উত্তরে ইসরায়েলের হামলায় এক নারী ও এক শিশু নিহত হয়েছে। এছাড়া, গাজা সিটিতে হামলায় আরও চারজন নিহত হয়েছে। তবে সর্বশেষ হামলায় মোট কতজন নিহত হয়েছে, তা এখনও নিশ্চিত করেনি গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গত ১৯ জানুয়ারি হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি ও বন্দি বিনিময়ের চুক্তি হয়েছিল। তবে মঙ্গলবারের হামলা ছিল যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় হামলা। চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়েছে।
চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে গাজা থেকে ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহারের কথা ছিল, তবে তা না করে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপটি বাড়ানোর পক্ষে অবস্থান নেয়। এতে আরও জিম্মি মুক্তি ও ফিলিস্তিনি বন্দি বিনিময়ের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
নেতানিয়াহু পূর্ণ শক্তি নিয়ে গাজায় হামলা চালানোর সিদ্ধান্তকে ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, "আমাদের মূল লক্ষ্য হলো জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা এবং হামাসকে ধ্বংস করা।"
তবে জিম্মিদের পরিবারের অনেকে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন, তারা বলছেন, এতে বোঝা যাচ্ছে যে সরকার তাদের প্রিয়জনদের পরিত্যাগ করেছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, হামাসের হাতে এখনও ৫৯ জন জিম্মি আছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, মিশর ইসরায়েলের নতুন করে হামলাকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির "স্পষ্ট লঙ্ঘন" বলে অভিহিত করেছে।
মধ্যস্থতাকারীরা হামাসকে কিছু জিম্মি মুক্তি দিতে রাজি করানোর চেষ্টা করছেন, যাতে সংঘর্ষ কিছুটা কমানো যায়। তবে নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, "এবার যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হবে লড়াই চলার মধ্যেই।"