যুদ্ধের মোড়: কুরস্ক থেকে পশ্চাদপসরণ ইউক্রেনীয় বাহিনীর

যুদ্ধের মোড়: কুরস্ক থেকে পশ্চাদপসরণ ইউক্রেনীয় বাহিনীর নতুন কৌশল
কিয়েভ, ইউক্রেন – চলমান যুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মোড়, ইউক্রেনীয় বাহিনী রাশিয়ার সীমান্তবর্তী শহর সুদজাহ থেকে পশ্চাদপসরণ করেছে। টানা কয়েক মাসের তীব্র লড়াই এবং রাশিয়ার আক্রমণের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ইউক্রেনীয় বাহিনীর প্রধান সরবরাহ লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ঘেরাও এড়াতে তাদের শহরটি ছাড়তে বাধ্য হতে হয়।
কৌশলগত সিদ্ধান্ত, না কি বড় পরাজয়?
বিশ্লেষকরা বলছেন, কুরস্ক থেকে পশ্চাদপসরণ ইউক্রেনের জন্য একটি কঠিন সিদ্ধান্ত হলেও এটি ছিল বাস্তব পরিস্থিতির আলোকে নেওয়া একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। ইউক্রেনীয় বাহিনী প্রতিরক্ষা বজায় রাখতে না পেরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমা অস্ত্র ফেলে আসতে বাধ্য হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১০টি এম১ আব্রামস ট্যাংক এবং ৮০টিরও বেশি এম২ ব্র্যাডলি পদাতিক যুদ্ধযান রয়েছে।
এক সামরিক কর্মকর্তা জানান, "আমাদের বাহিনীর সুরক্ষাই প্রধান লক্ষ্য। এই পশ্চাদপসরণ সাময়িক হলেও আমাদের পুনর্গঠনের সুযোগ করে দেবে।"
নেতৃত্বে পরিবর্তন ও নতুন কৌশল
পরিস্থিতি সামাল দিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মেজর জেনারেল আন্দ্রি হ্নাতভকে নতুন চিফ অব জেনারেল স্টাফ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল আনাতোলি বারহিলেভিচের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিবর্তন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা কৌশলে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে। প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের নতুন নেতৃত্ব ও কৌশল প্রয়োজন।"
রাশিয়ার অগ্রযাত্রা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ইউক্রেনীয় বাহিনী পিছু হটার পর রাশিয়ার সেনারা কুরস্ক অঞ্চলে আরও গভীরে প্রবেশ করেছে। সামরিক বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, রাশিয়া আরও অগ্রসর হলে ইউক্রেনের সরবরাহ লাইন আরও হুমকির মুখে পড়তে পারে, যা কিয়েভের প্রতিরক্ষা প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে দেবে।
রাশিয়ার কর্মকর্তারা এই বিজয়কে বড় সাফল্য হিসেবে দেখছেন, তবে ইউক্রেন প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেন এখন প্রতিরক্ষামূলক কৌশলে মনোযোগ দেবে, যাতে বড় শহরগুলোকে রক্ষা করা যায় এবং পাল্টা আক্রমণের সুযোগ নেওয়া যায়।
যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা নিয়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা
যুদ্ধের উত্তেজনার মধ্যেই কূটনৈতিক আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। তবে পুতিন এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি, যা কূটনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনাকে অনিশ্চিত করে তুলছে।
বিশ্ব সম্প্রদায় সতর্ক নজর রাখছে এই যুদ্ধ পরিস্থিতির দিকে এবং এর ভূরাজনৈতিক প্রভাব মূল্যায়ন করছে। ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়ই নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যা এই সংঘাতকে আরও দীর্ঘায়িত করতে পারে।