ইয়েমেনে হুতিদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা

এই জাহাজ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় ইয়েমেনে।
ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের ওপর শক্তিশালী বিমান হামলা চালানোর কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
এর কারণ হিসেবে তিনি লোহিত সাগরে চলাচলকারী জাহাজের ওপর সশস্ত্র গোষ্ঠীটির আক্রমণের কথা বলেছেন।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “ইরানের অর্থায়নে হুতি দুর্বৃত্তরা মার্কিন বিমানে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং আমাদের সেনা ও মিত্রদের নিশানা করেছে।
“তাদের জলদস্যুতা, সহিংসতা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করেছে এবং জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছে।”
হুতি পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত ও নয়জন আহত হয়েছেন।
গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় সাগরে জাহাজ নিশানা করে আক্রমণ চালিয়ে আসছিল হুতি। গোষ্ঠীটি এখন বলেছে, তাদের বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাব দেবে।
সৌদি আরবের সীমান্তবর্তী বিদ্রোহীদের শক্ত ঘাঁটি সানা ও উত্তরাঞ্চলীয় সাদাহ প্রদেশে শনিবার সন্ধ্যায় বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের খবর দিয়েছে হুতিরা। সাদাহয় বিদ্রোহীদের শক্তিশালী ঘাঁটি রয়েছে।
বিবিসি লিখেছে, ইরান সমর্থিত এ বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে শত্রু হিসেবে দেখে ইসরায়েল। ওই সশস্ত্র গোষ্ঠী সানা এবং ইয়েমেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে। তবে দেশটির সেই সরকার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়।
কয়েকটি ছবিতে সানার বিমানবন্দর এলাকায় কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে, যার মধ্যে একটি সামরিক স্থাপনাও রয়েছে। তবে সেই সব ছবি যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
হুতিরা এক বিবৃতিতে ইয়েমেনের রাজধানী সানায় আবাসিক এলাকা নিশানা করে ‘আক্রোশমূলক’ আগ্রাসনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে দোষারোপ করেছে। যদিও শনিবারের মার্কিন হামলায় যুক্তরাজ্য অংশ নেয়নি বলে মনে করা হচ্ছে। তবে তারা নিয়মিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে জ্বালানি সহায়তা দিচ্ছে।
হুতিদের হামলাকে সহ্য করা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প।
তিনি বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আমরা অপ্রতিরোধ্য প্রাণক্ষয়ী শক্তি ব্যবহার করে যাব।”
হুতিদের ভাষ্য, গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধে তারা ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে কাজ করছে। তারা কেবল ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্য সংশ্লিষ্ট জাহাজকে নিশানা করছে।
হুতিরা ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে কয়েক ডজন বাণিজ্যিক জাহাজকে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও ছোট নৌকায় করে হামলা চালিয়েছে। তারা দুটি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে, জব্দ করেছে আরেকটি জাহা ; চার ক্রুকে মেরে ফেলেছে।
বাণিজ্যিক জাহাজের সুরক্ষায় পশ্চিমা যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন কিংবা হুতিদের সামরিক স্থাপনা নিশানা করে একাধিক মার্কিন ও ব্রিটিশ হামলাতেও দমেনি বিদ্রোহী এ গোষ্ঠী।
ইসরায়েলও গত জুলাই থেকে হুতিদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। ৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়ার প্রতিশোধ হিসেবে এসব হামলা চালানোর কথা বলছে ইহুদি দেশটি। তাদের ভাষ্য, ওইসব অস্ত্র ছোড়া হয়েছিল ইয়েমেন থেকে, যার বেশিরভাগই ভূপাতিত করা হয়েছে।
বিবিসি লিখেছে, হুতির আক্রমণের কারণে শীর্ষ শিপিং কোম্পানিগুলি লোহিত সাগর ব্যবহার বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। বৈশ্বিক সমুদ্র বাণিজ্যে ওই পথের হিস্যা ১৫ শতাংশের মত। এর বিকল্প হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা ঘুরে দীর্ঘ পথ ব্যবহার করতে হচ্ছে।
ট্রাম্প বলেছেন, ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে লোহিত সাগরকে যুক্ত করা সুয়েজখাল ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাবাহী সবশেষ জাহাজ গেছে এক বছরেরও বেশি সময় আগে। আর মাস চারেক আগে একটি মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ পূর্ব আফ্রিকা ও আরব উপদ্বীপের জলসীমা দিয়ে গেছে।
সরাসরি হুতিদের উদ্দেশে ট্রাম্প লিখেছেন, যদি তারা না থামে, ‘এমন নরকযন্ত্রণা নেমে আসবে’ যা তারা আগে কখনো দেখেনি।
তবে হুতিরা তাদের অবস্থানে অটল থাকার কথা জানিয়ে বলেছে, এই আগ্রাসনের কারণে ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের সমর্থন কমবে না।
“এই আগ্রাসন বিনা জবাবে পার পাবে না। আমাদের ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী আরও শক্তি বৃদ্ধি করে জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে।”
এদিকে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছেন, হুতিদের ‘পৃষ্ঠপোষক’ ইরানকে ‘নজরদারিতে' রাখা হয়েছে।
মার্কিন কংগ্রেসের তথ্য অনুযায়ী, হুতিরা ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবরের মধ্যে লোহিত সাগরে ১৯০টি আক্রমণ করেছে।
এর আগে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে যৌথ নৌ ও বিমান হামলা চালিয়েছে। হুতির সঙ্গে যোগ রয়েছে-এমন লক্ষ্যবস্তুতে আলাদা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলও।
হুতিদের প্রতি সমর্থন বন্ধে ইরানকে সতর্ক করে দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, ওয়াশিংটন এটা ভালোভাবে নেবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করেন, হুতি প্রশ্নে জো বাইডেন নেতৃত্বাধীন সাবেক হোয়াইট হাউজ প্রশাসন ‘দুঃখজনকভাবে নমনীয়’ ছিল।