জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর: মিথ্যা প্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের বাংলাদেশ সফরে দেশবিরোধী যে কোনো মিথ্যা প্রচার ও অস্থিতিশীল করার চেষ্টাকে প্রতিহত করবে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
শনিবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক যৌথ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, "জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশবিরোধী ভুয়া তথ্য প্রচার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার এই সফর যে কোনো ধরনের মিথ্যা প্রচার ও অস্থিতিশীলতার চেষ্টাকে প্রতিহত করবে।"
‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে সফরের গুরুত্ব: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এ সফরকে বাংলাদেশের জন্য একটি ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, "মহাসচিব এমন এক নতুন বাংলাদেশের গঠনপর্ব প্রত্যক্ষ করছেন, যা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের স্বপ্ন দেখেছে।"
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানান, মহাসচিব তার সফরের সময়ে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে যুবসমাজ, সুশীল সমাজ এবং সংস্কার কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
"এই কমিশনই ‘জুলাই চার্টার’-এর রূপরেখা তৈরি করছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথনির্দেশিকা ও রাজনৈতিক, বিচারিক, নির্বাচনী, প্রশাসনিক, দুর্নীতি দমন ও পুলিশ সংস্কারের দিকনের্দেশনা দেবে।"
রোহিঙ্গা সংকট ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান: শুক্রবার জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধান উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, "মহাসচিব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করেছেন এবং তাদের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন।"
জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় সেখানকার বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। তিনি ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের রোহিঙ্গা বিষয়ক সম্মেলনের সফল আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দেন।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও জাতিসংঘের সমর্থন: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, "জাতিসংঘ মহাসচিব আরও প্রত্যক্ষ করেছেন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় কী ধরনের উত্তরাধিকার পেয়েছে। তিনি একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের প্রকৃত রূপান্তরের জন্য সংস্কার প্রক্রিয়ার জটিলতাগুলো উপলব্ধি করেছেন। তিনি জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এই সংস্কার প্রক্রিয়ায় পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।"
“মহাসচিব বলেছেন যে, তিনি যা কিছু করতে পারেন, তার সবকিছু দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করবেন এবং বাংলাদেশ ও এর জনগণের পাশে থাকবেন।”
তৌহিদ হোসেন বলেন, “তার এই সফর যে কোনো ধরনের মিথ্যা প্রচার ও অস্থিতিশীল করার চেষ্টাকে প্রতিহত করবে। তার এই সমর্থন আমাদের সংস্কার প্রক্রিয়াকে সফল করতে এবং জনগণের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে।”