মার্কিন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব মেনে নিতে প্রস্তুত ইউক্রেইন

মঙ্গলবার সৌদি আরবের জেদ্দা শহরে ইউক্রেইনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আট ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আলোচনা করেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
রাশিয়ার সঙ্গে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রস্তাব গ্রহণ করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে ইউক্রেইন। কিইভের এ সম্মতির পর যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সহায়তা ফের শুরু ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করতে রাজি হয়েছে বলে দেশ দু’টি এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে।
মঙ্গলবার সৌদি আরবের জেদ্দা শহরে ইউক্রেইনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আট ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আলোচনার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, যুক্তরাষ্ট্র এখন এই প্রস্তাব নিয়ে রাশিয়ার কাছে যাবে আর বল মস্কোর কোর্টে থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কথা উল্লেখ করে রুবিও সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের আশা রাশিয়া যত দ্রুত সম্ভব ‘হ্যাঁ’ বলবে, যেন আমরা এর দ্বিতীয় পর্যায়ে চলে যেতে পারি, সেটাই আসল আলোচনা হবে।”
তিনি জানান, ওয়াশিংটন ‘যত দ্রুত সম্ভব’ রাশিয়া ও ইউক্রেইনের মধ্যে একটি পূর্ণ চুক্তি চায়।
“প্রত্যেকদিন এটা চলছে, যুদ্ধ অব্যাহত আছে, লোকজন মারা যাচ্ছে, লোকজনের ওপর বোমা ফেলা হচ্ছে, এই লড়াইয়ে উভয় দিকের লোকজন জখম হচ্ছে,” বলেন রুবিও।
রয়টার্স জানিয়েছে, ওয়াশিংটনের প্রস্তাবে মস্কো কী প্রতিক্রিয়া জানাবে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির পুতিন জানিয়েছেন, তিনি একটি শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছেন। কিন্তু তিনি ও তার কূটনীতিকরা বারবার বলেছেন, তারা যুদ্ধবিরতির বিরুদ্ধে আর এমন একটি চুক্তি চান যা দীর্ঘমেয়াদে রাশিয়ার সুরক্ষা নিশ্চিত করবে।
২০ জানুয়ারি পুতিন তার নিরাপত্তা পরিষদকে বলেন, “কোনো স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতি হওয়া উচিত হবে না, বাহিনীগুলোকে পুনর্গঠিত করার আর পরবর্তীতে সংঘাত অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে পুনঃস্ত্রীকরণের জন্য কোনো ধরনের অবকাশও নয়, কিন্তু একটি দীর্ঘমেয়াদি শান্তি।”
তিনি ভূখণ্ডগত ছাড় দেওয়ার বিষয়টিও বাতিল করেছেন। তিনি বলেছেন, ইউক্রেইনকে অবশ্যই রাশিয়ার দাবিকৃত ও আংশিক নিয়ন্ত্রণে থাকা চারটি অঞ্চল থেকে পুরোপুরি সরে যেতে হবে।
বুধবার রাশিয়ার একজন প্রভাবশালী আইনপ্রণেতা বলেছেন, “আপস রফার জন্য প্রয়োজনীয় সব বোঝাপড়াসহ যে কোনো সমঝোতা আমাদের শর্তে হবে, আমেরিকার নয়।”
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেইনের মঙ্গলবারের আলোচনার পর রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুধু বলেছে যে তারা মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ ‘বাতিল করেনি’।
ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সৌদি আরবে অবস্থান করলেও আলোচনায় অংশ নেননি। তিনি বলেছেন, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবটি ‘ইতিবাচক’, এটি স্থলপথের যুদ্ধকেও আওতায় এনেছে, শুধু সাগর বা আকাশপথের লড়াইকে নয়।
রাশিয়া সম্মত হলেই প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা শুরু হয়ে যাবে বলে জেলেনস্কি জানিয়েছেন।
রুবিও জানিয়েছেন, বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে রাশিয়াকে প্রস্তাবের বিষয়ে অবহিত করা হবে। ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পুতিনের নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবেন আর ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য চলতি সপ্তাহে মস্কো সফর করার পরিকল্পনা করেছেন।
তিন বছর আগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেইনে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ শুরু করেছিল রাশিয়া। তারপর থেকে বিভিন্ন সফলতার মধ্যে দিয়ে এখন তারা এখন ইউক্রেইনের এক পঞ্চমাংশ (ক্রাইমিয়াসহ) অঞ্চল দখল করে নিয়েছে।