হামাসকে ট্রাম্পের শেষ সতর্কবার্তা

নিজের ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে দেওয়া এক দীর্ঘ পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হামাসকে কঠোর ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “ইসরায়েলকে কাজ শেষ করার জন্য যা যা দরকার, আমি সব পাঠাচ্ছি। যদি আমার কথা না মানো, তবে হামাসের একজন সদস্যও নিরাপদ থাকবে না।”
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের এই বক্তব্যের পর হামাস অভিযোগ করেছে যে, তিনি ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করতে উস্কানি দিচ্ছেন।
হোয়াইট হাউজ ও হামাসের গোপন আলোচনা: হোয়াইট হাউজ নিশ্চিত করেছে যে, ফিলিস্তিনের ছিটমহল গাজায় বন্দি থাকা মার্কিন জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হামাসের সঙ্গে গোপনে সরাসরি আলোচনা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপরই ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
যদিও এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র হামাসের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ এড়িয়ে চলেছে, কারণ মার্কিন নীতিতে সংগঠনটিকে ‘সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত’ গোষ্ঠী হিসেবে গণ্য করা হয়।
ট্রাম্পের কঠোর বার্তা: ট্রাম্প তার পোস্টে আরও লেখেন, “যদি জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া হয়, তবে ‘নারকীয় পরিণতি’ ভোগ করতে হবে।” তবে তিনি ইসরায়েলকে কী ধরনের সহায়তা দিচ্ছেন, তা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেননি বলে জানিয়েছে বিবিসি।
হামাস নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এখনও সময় আছে, গাজা ছাড়ো।” পাশাপাশি, গাজার সাধারণ মানুষের উদ্দেশেও তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এক সুন্দর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে, তবে তা কেবল জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে। যদি তাদের আটকে রাখ, তাহলে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে!”
হামাসের প্রতিক্রিয়া: হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেছেন, ট্রাম্পের এ ধরনের হুমকি যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে আরও জটিল করে তুলছে এবং ইসরায়েলকে চুক্তির শর্ত বাস্তবায়ন থেকে বিরত থাকার উৎসাহ দিচ্ছে।
এর আগেও ট্রাম্প হামাসকে হুমকি দিয়েছিলেন। গত ডিসেম্বরে তিনি বলেছিলেন, জিম্মিরা মুক্তি না পেলে ‘ভয়াবহ পরিণতি’ হবে।
যুক্তরাষ্ট্র-হামাস আলোচনা: হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট নিশ্চিত করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে হামাসের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করছে। মার্কিন জিম্মি বিষয়ক বিশেষ দূত অ্যাডাম বোলার এ আলোচনার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
ফিলিস্তিনি এক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, কয়েক সপ্তাহ ধরে দোহায় বোলার ও হামাসের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক চলছে। তবে হামাসের পক্ষে কে আলোচনা করছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বোলার গাজা যুদ্ধ শেষ করার সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করছেন।
হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি লেভিট বলেছেন, “হামাসের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার কর্তৃত্ব বোলারের আছে।” ইসরায়েলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করা হয়েছে। তবে হামাসের সঙ্গে আলোচনা শুরু করার আগে না পরে ইসরায়েলের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছে লেভিটের কথা থেকে তার কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র ও হামাসের মধ্যে সরাসরি বৈঠকের খবর প্রকাশ করেছে অ্যাক্সিওস। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, দোহায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে জিম্মিদের মুক্তি ও যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
গাজার বর্তমান পরিস্থিতি: ইসরায়েল ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে হামাসের নজিরবিহীন হামলার জবাবে সামরিক অভিযান শুরু করে। ওই হামলায় প্রায় ১,২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে বন্দি করা হয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৪৮,৪৪০ জন নিহত হয়েছে।
ইসরায়েল বলছে, এখনও ৫৯ জন জিম্মি গাজায় রয়েছে, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। জিম্মিদের মধ্যে পাঁচজন মার্কিন নাগরিকও রয়েছেন। তাদের মধ্যে এডান আলেকজান্ডার জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে, বাকিরা নিহত হয়েছে বলে ধারণা।
বিশেষজ্ঞদের মতামত: সাবেক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা মিক মুলরয় মনে করেন, “যুক্তরাষ্ট্রের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত।” তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, এই আলোচনা ইসরায়েলের বন্দি উদ্ধারের পরিকল্পনায় জটিলতা তৈরি করতে পারে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, তারা এই আলোচনা সম্পর্কে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে, তবে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
কাতারের মধ্যস্থতা: যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র কাতার একাধিক আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছে, যার মধ্যে ইরান, তালেবান ও রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনাও অন্তর্ভুক্ত। গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তির আলোচনাতেও কাতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।