নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত পোপ ফ্রান্সিস, অবস্থা ‘সঙ্কটাপন্ন’

দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভোগা পোপ ফ্রান্সিসের শারীরিক অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক’ বলে খবর দিয়েছে ভ্যাটিকান।
বিবিসি লিখেছে, রোমান ক্যাথলিকদের শীর্ষ ধর্মগুরুর অবস্থা শনিবার আরো একটু খারাপ হয়েছে। এর মধ্যে তাকে রক্তও দিতে হয়েছে।
এক বিবৃতিতে ভ্যাটিকান বলেছে, ৮৮ বছর বয়সী পোপ সচেতন আছেন, তার আর্মচেয়ারেও বসতে পারছেন। তবে তাকে ‘উচ্চ প্রবাহের’ অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। শারীরিক অবস্থা সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে।
রোমের জেমেলি হাসপাতালে পোপের নিউমোনিয়ার চিকিৎসা চলছে। রক্তশূন্যতার কারণে প্লেটলেট কমে যাওয়ায় তাকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়।
ভ্যাটিকান বলেছে, “হলি ফাদারের অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। তিনি এখনো বিপদমুক্ত নন।”
বিবিসি লিখেছে, পোপ তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে তথ্য প্রকাশের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়ার পর ভ্যাটিকান প্রতিদিন বিবৃতি দিয়ে তার শারীরিক অবস্থা জানাচ্ছে। তবে সেই বিবৃতির ভাষা আর দৈর্ঘ্য একেক সময় একেক রকম হয়। তার মধ্যে থেকে প্রকৃত অবস্থা বুঝতে গলদঘর্ম হতে হয়।
তবে শনিবারের বিবৃতিতে ভ্যাটিকান যা বলেছে, তাতে পোপের অবস্থার অনেক বেশি খোলামেলা এবং বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে, যেমনটা সাধারণত হয় না।
চিকিৎসকরা আগের দিনও বলেছিলেন, প্রথমবারের মত ওষুধে সাড়া দিচ্ছেন পোপ। তবে পোপের অবস্থা যে বেশ জটিল, সেটা তার ডাক্তারদের কাছেও স্পষ্ট।
শুক্রবার তারা বলেছিলেন, পোপের অবস্থা এতটাই নাজুক যে পরিস্থিতির সামান্যতম পরিবর্তনেও বিপর্যয় ঘটে যেতে পারে।
চিকিৎসকদের একজন বলেছিলেন, “তিনি পোপ। কিন্তু তিনিও তো একজন মানুষ।”
টানা কয়েক দিন শ্বাসকষ্টে ভোগার পর গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পোপকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বিবিসি লিখেছে, ২১ বছর বয়সে পোপ ফ্রান্সিসের ফুসফুসের একটি অংশ অপসারণ করতে হয়েছিল। পরে বেশি বয়সে তার ফুসফুসের চারপাশে এক ধরনের প্রদাহ তৈরি হয়। সে কারণে তিনি ফুসফুস সংক্রমণের ঝুঁকিতে ছিলেন।
রোমের জেমেলি হাসপাতালের বাইরে পোপের জন্য মোমবাতি, ফুল ও চিঠি রাখছেন শুভাকাঙ্ক্ষীরা। ছবি: রয়টার্স
গত ১২ বছরে এই আর্জেন্টাইনকে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালের মার্চ ব্রঙ্কাইটিসে আক্রান্ত হয়ে তিনি ৩ রাত হাসপাতালে ছিলেন।
বিবিসি লিখেছে, পোপের সর্বশেষ যে অবস্থা ভ্যাটিকান জানাল, তা বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিকদের উদ্বিগ্ন করবে, যারা সর্বক্ষণ পোপের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর রাখছেন।
ক্যাথলিক চার্চের জয়ন্তী বছর হওয়ায় এবছর রোমে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর সমাগম ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিভিন্ন আয়োজনে পোপের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। আর সাধারণত তিনি নিষ্ক্রিয় থাকতে ভালোবাসেন না।
এমনকি এ সপ্তাহে হাসপাতালে থেকেও তিনি চ্যাপেলে গিয়েছিলেন প্রার্থনা করতে। সেখানে চেয়ারে বসে বাইবেল পড়েছেন বলে তার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
ভ্যাটিকান আগেই জানিয়েছিল, পোপের যে শারীরিক অবস্থা, তাতে এই রোববারের প্রার্থনায় তাকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যাবে না । তার মানে টানা দ্বিতীয় সপ্তাহ তিনি এই প্রার্থনা অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকছেন।
রোমের জেমেলি হাসপাতালের বাইরে পোপের জন্য সপ্তাহজুড়ে মোমবাতি, ফুল ও চিঠি রেখে যাচ্ছেন শুভাকাঙ্ক্ষীরা। শনিবার সন্ধ্যায় ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকার বাইরে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি, বড় কোনো জমায়েতও সেখানে হয়নি।
তবে ওই এলাকা দিয়ে যাওয়া লোকজন বলেছেন, তারা পোপের খোঁজখবর রাখছেন।
একজন ইতালীয় বিবিসিকে বলছিলেন, “আমরা রোমের এখানে- পোপকে খুব কাছের অনুভব করি। আমরা খোঁজখবর রাখছি এবং আমরা উদ্বিগ্ন।”