বন্দি মুক্তিতে যে কারণে বেঁকে বসলেন নেতানিয়াহু

হামাস যোদ্ধার কপালে চুমু খাচ্ছেন ইসরায়েলি বন্দি।
বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়ায় হঠাৎ বেঁকে বসলেন দখলদার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস গত শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ছয় ইসরায়েলি বন্দিকে ছেড়ে দিলেও ছয় শতাধিক ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত করেছেন তিনি।
এটিকে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়ায় আরেকটি সম্ভাব্য ‘বড় সংকট’ বলে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
নেতানিয়াহু হঠাৎ কেন এভাবে নাখোশ হলেন, কেন নিলেন এই হেয়ালি সিদ্ধান্ত—এ নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে।
স্কাই নিউজের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গতকাল দুই জায়গায় ছয়জনকে মুক্তি দেয় হামাস। এর মধ্যে গাজার নুসেইরাত অঞ্চলে রেডক্রসের কাছে হস্তান্তর করা হয় ইসরায়েলি বন্দি এলিয়া কোহেন, ওমের শেম-টোভ, ওমের ওয়েঙ্কার্ট ও হিশাম আল-সাইদকে। এ সময় তাদের খুবই উৎফুল্ল দেখাচ্ছিল। তাদের মুক্তি উপলক্ষে আয়োজিত হস্তান্তর অনুষ্ঠানের মঞ্চে এলিয়া কোহেনকে হামাস যোদ্ধাদের মাথায় চুমু খেতেও দেখা যায়।
যদিও রাফায় মুক্তি দেওয়া তাল শোহাম ও আভেরা মেঙ্গিস্তু হস্তান্তর অনুষ্ঠানে নুসেইরাতের সেই উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি। এই দুইজনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে মঞ্চে আনার সময় হামাসের দুই নিরাপত্তারক্ষী দুপাশ থেকে তাদের বগলদাবা করে মঞ্চে আনেন।
মূলত এ আনুষ্ঠানিকতা নিয়েই আপত্তি ইসরায়েলের। তারা এটাকে ‘অপমানজনক’ বলে সমালোচনা করছে। বলছে, এই হস্তান্তর অনুষ্ঠান বন্ধ করতে হবে।
নেতানিয়াহু এ বিষয়ে বলেছেন, যতক্ষণ না এই ধরনের প্রচারমূলক আয়োজন বন্ধ করা হবে, ততক্ষণ বন্দিদের মুক্তির প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করা হবে না।
তার দপ্তর থেকে আরও জানানো হয়, নির্ধারিত ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। মুক্তির প্রক্রিয়া তখনই আবার শুরু হবে, যখন পরবর্তী ইসরাইয়েলি জিম্মিদের নিরাপদ মুক্তি নিশ্চিত হবে এবং তা কোনো অপমানজনক আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই তা সম্পন্ন হবে।
রাফার ঘটনাকে ইসরায়েল ‘অজুহাত’ হিসেবে দেখালেও বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, নুসেইরাতের অনুষ্ঠানটিও হামাসের পক্ষে গেছে, যা পরোক্ষভাবে ইসরায়েলেরই বিপক্ষে গেছে।
হামাসের যোদ্ধাদের মাথায় ইসরায়েলি বন্দির চুমু খাওয়া মূলত তেল আবিব ও তার পশ্চিমা মিত্রদের প্রচারণাকে ভুল প্রমাণ করেছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। তারা বলছেন, ইসরায়েল ও তার পক্ষের পশ্চিমারা বন্দিদের সঙ্গে হামাসের ‘নিষ্ঠুর’ আচরণের প্রচারণা চালিয়ে আসছিল এতদিন। কিন্তু নুসেইরাতের ঘটনাটি সেই প্রচারণায় পানি ঢেলে দিয়েছে। উপরন্তু, হামাস যে বন্দিদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছে, সেটিই প্রতীয়মান হয়েছে।
টাইমস অব ইসরায়েলের খবর অনুসারে, হামাস ছয়জন বন্দি ছেড়ে দেওয়ার পর ৬০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি বন্দি দখলদার ইসরায়েলের ওফার কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য বাসে উঠেছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাদের বাস থেকে নামিয়ে নেওয়া হয় এবং মুক্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়।
নেতানিয়াহুর এই আকস্মিক সিদ্ধান্ত গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকরা। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর এই পদক্ষেপকে ‘প্রতারণামূলক বিলম্ব’ এবং ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছে হামাস।
এদিকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম পর্যায়ে হামাসের পক্ষ থেকে ছয় জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার পর বাকি সব বন্দিকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে তেলআবিবে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে ইসরায়েলিরা।