তেল আবিবকে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ার হুমকি ইরানের, ‘প্রস্তুত’ ইসরায়েল

ইরানের বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর (আইআরজিসি) জেনারেল ইব্রাহিম জব্বারি তেল আবিবকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার পর ইসরায়েল বলেছে তারা তেহরানের যে কোনো হামলা মোকাবেলায় প্রস্তুত।
গত এক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল ও ইরানের কর্মকর্তাদের মধ্যে এরকম সিরিজ হুমকি বিনিময় চলছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
তার মধ্যেই বৃহস্পতিবার জব্বারি চলমান এক মহড়ায় প্যারামিলিটারি বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, নির্ধারিত সময়েই ‘অপারেশ ট্রু প্রমিজ থ্রি’ হবে, আর তাতেই ইসরায়েলকে ধ্বংস হবে।
ইরান গত বছরের এপ্রিল ও অক্টোবরে দুই দফায় ইসরায়েলে যে হামলা চালিয়েছিল সেগুলো অপারেশন ট্রু প্রমিজ ও অপারেশন ট্রু প্রমিজ টু নামে পরিচিত।
“অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি হবে সঠিক সময়ে; নির্ভুলতার সাথে এ হামলা হবে যা ইসরায়েলকে ধ্বংস করবে এবং তেল আবিব ও হাইফাকে মাটিতে মিশিয়ে দেবে,” বৃহস্পতিবার বলেন জব্বারি।
এর জবাবে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সা’র বলেন, “ইতিহাস থেকে যদি ইহুদিরা কিছু শিখে থাকে, তা হলো তোমার শত্রু যদি বলে তোমাকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে, তাহলে সেটা বিশ্বাস করো। আমরা প্রস্তুত।”
জব্বারির দিন কয়েক আগে আইআরজিসির ডেপুটি কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলি ফাদাভি ও আইআরজিসির এরোস্পেস বাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলি হাজিজাদেও ইসরায়েলকে ধ্বংসের হুমকি দেন।
দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি এ হুমকি বিনিময় এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন আইআরজিসি তাদের ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়াচ্ছে।
ইরান সম্প্রতি চীনের কাছ থেকে রকেটের জ্বালানি বানাতে দরকারি রাসায়নিক পেয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে।
আইআরজিসি এর মধ্যে ‘দক্ষিণের কৌশলগত জলসীমায়’ হামলায় সক্ষম এমন ক্ষেপণাস্ত্রের নতুন একটি ভূগর্ভস্থ ঘাঁটির ছবিও প্রকাশ করেছে।
মিডল ইস্ট কোয়ার্টারলিতে শিগগিরই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে এমন এক নিবন্ধে কলিন উইনস্টনকে উদ্ধৃত করে জেরুজালেম পোস্টের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যদি ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র যৌথ হামলা করতে চায়, তাহলে এটাই সেরা সময়।
“হিজবুল্লাহ ও হামাস এই মুহূর্তে ইসরায়েলের জন্য হুমকি নয়। ইরানের ‘অক্ষ শক্তির’ অবস্থাও তথৈবচ। ইরান ও সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতাও অনেকখানি হ্রাস পেয়েছে,” বলেছেন ৩০ বছর মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-তে কাজ করা উইনস্টন।
আমেরিকান-ইসরায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটির সাবেক এ গবেষণা প্রধান আরও দাবি করেছেন, ইরান এরই মধ্যে একাধিক পারমাণবিক বোমা বানাতে সক্ষম এমন ইউরেনিয়াম উৎপাদনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে।
ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানাচ্ছে- এমন গোয়েন্দা তথ্যের জন্য অপেক্ষা করার দরকার নেই, এখনই সময় ইসরায়েল ও ওয়াশিংটনের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার, বলেছেন তিনি।
ইরান কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র-মানের ইউরেনিয়াম বানাতে পারে, আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থাও এমন অনুমান করছে বলে জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
জানুয়ারিতে একাধিক মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট ইসরায়েল চলতি বছরের মাঝামাঝি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে বলে জানিয়েছিল।
একই মাসে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি সতর্ক করে বলেছিলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো হামলা অঞ্চলজুড়ে ‘সর্বাত্মক যুদ্ধের’ সূচনা করতে পারে।
“ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক হামলা চালালে তা হবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ভুল,” কাতার সফরে গিয়ে আল জাজিরাকে এমনটাই বলেছিলেন তিনি।