বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ফাল্গুন ২৮ ১৪৩১, ১২ রমজান ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের পাল্টা গাজা পুনর্গঠন পরিকল্পনা মিশরের

 প্রকাশিত: ১৯:০৪, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ট্রাম্পের পাল্টা গাজা পুনর্গঠন পরিকল্পনা মিশরের

মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ছবি: রয়টার্স

যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা পুনর্গঠনের জন্য একটি নতুন পরিকল্পনা তৈরি করেছে মিশর। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজার ফিলিস্তিনিদেরকে অন্য কোথাও না সরিয়েই ভূখণ্ডটি পুনর্গঠনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে গাজার দখল নিয়ে ভূখন্ডটি পুনর্গঠনের বিতর্কিত প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তার সেই ‘গাজা দখল’ প্রস্তাবেরই বিকল্প হিসেবে মিশরের এই উদ্যোগ।

মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাতি বলেছেন, গাজার দ্রুত পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মানের জন্য কায়রো সক্রিয়ভাবে কয়েক ধাপের একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তৈরি করছে।”

সোমবার দেশটির সরকারি সংবাদপত্র আল-আহরাম এ খবর জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিশর আশা করছে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে এ পরিকল্পনা চূড়ান্ত হবে এবং এর প্রথম ধাপ শুরু হবে কায়রোয় ২৭ ফেব্রুয়ারিতে আয়োজিত জরুরি আরব শীর্ষ সম্মেলনের পর।

তার আগে বৃহস্পতিবার সৌদি আরব এই পরিকল্পনা নিয়ে রাজধানী রিয়াদে মিশর, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডানের কর্মকর্তাদের বৈঠক আয়োজন করবে।

ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজে ফিরে এসে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে তিনি বারবার গাজা দখলের কথা বলেছেন।

গাজার বাসিন্দাদের নেওয়ার জন্য তিনি মিশর ও জর্ডানকে চাপ দিয়েছেন। কিন্তু উভয় দেশই এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি, প্রস্তাবটিকে মানবাধিকার সংস্থাগুলো "জাতিগত নির্মূল" পরিকল্পনা বলেও নিন্দা করেছে।

মিশরের আল-আহরাম পত্রিকায় বলা হয়েছে, কায়রোর বিকল্প পরিকল্পনায় গাজার ভেতরে একটি 'নিরাপদ এলাকা' প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে, যেখানে ফিলিস্তিনিরা বাস করবে। মিশরীয় ও আন্তর্জাতিক নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত অবকাঠামো অপসারণ ও পুনর্গঠনের কাজ শেষ না করা পর্যন্ত ফিলিস্তিনিরা ওই নিরাপদ এলাকায় থাকবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই মিশরীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় তিনটি ধাপ থাকবে এবং তা শেষ হতে পাঁচ বছর লাগবে।

'মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যুক্তি খণ্ডন'

মিশরের আল-আহরাম পত্রিকা জানিয়েছে, কায়রো নিজস্ব পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত নীতির যুক্তি খণ্ডন করতে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে গাজার ভৌগোলিক ও জনসংখ্যাগত কাঠামো পরিবর্তনের যে কোনও পরিকল্পনা মোকাবেলা করা যাবে।

মিশরের কর্মকর্তারা বলছেন, গাজা পুনর্গঠনের সময় ফিলিস্তিনিদের সেখানে থাকতে দেওয়া হবে। গাজার ভেতরে তিনটি "নিরাপদ অঞ্চল" গড়ে তোলা হবে। প্রাথমিকভাবে ছয় মাসের পুনর্গঠন চলার সময়ে ফিলিস্তিনিরা ওই এলাকাগুলোতে থাকবে।

আল-জাজিরা জানায়, নিরাপদ অঞ্চলগুলোতে ভ্রাম্যমাণ ঘর ও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি থাকবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিশরীয় কর্মকর্তাদের মতে, এই পুনর্গঠন প্রচেষ্টায় গাজার জনগণের জন্য কয়েক হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

আরব ও ইউরোপীয় কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, কায়রো ইউরোপীয় কূটনীতিকদের পাশাপাশি আরব অংশীদার সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গেও তাদের পরিকল্পনার অর্থায়নের উপায় নিয়ে আলোচনা করেছে। এছাড়াও, গাজার পুনর্গঠনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে।

ওদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের গাজা দখলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইসরায়েল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে সোমবার মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, ট্রাম্প গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণে নিতে ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজা পুনর্গঠন ও তার নতুন কাঠামো গড়তে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও-ও ট্রাম্পের পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে চলতি সপ্তাহে সৌদি আরব সফর করেছেন। জেরুজালেমে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠকের এক দিন পরই নেতানিয়াহু ওই ঘোষণা দেন।

এদিকে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সোমবার ঘোষণা করেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের "স্বেচ্ছায় প্রস্থান" নিশ্চিত করতে একটি বিশেষ অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হবে।

ইসরায়েলের ‘কো-অর্ডিনেটর অব গভর্নমেন্ট অ্যাক্টিভিটিস ইন দ্য টেরিটরিজ’ একটি প্রাথমিক প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে, যাতে গাজার যে কোনও বাসিন্দা তৃতীয় কোনো রাষ্ট্রে অভিবাসন করতে চাইলে তাকে 'ব্যাপক সহায়তা' দেওয়া হবে।

নেতানিয়াহু আরও বলেছেন, ১৫ মাসের যুদ্ধ শেষে গাজার নিয়ন্ত্রণ হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ—কারও হাতেই থাকবে না। এ যুদ্ধে এরই মধ্যে ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। সেখানে চরম মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে।

হামাস বলেছে, তারা গাজার শাসন থেকে সরে দাঁড়াতে প্রস্তুত। রোববার গোষ্ঠীটির এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, হামাসের অংশগ্রহণ ছাড়াই ফিলিস্তিনি ঐক্যের সরকার গঠন করা হলে বা ছিটমহলের পরিচালনার জন্য টেকনোক্র্যাটদের একটি কমিটি গঠিত হলে, তারা সেটি মেনে নেবে।