বিশ্বব্যাপী ইউএসএইডের কর্মীদের ছুটি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার নির্দেশ
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) কর্মীদের শুক্রবার থেকে প্রশাসনিক ছুটি দিয়ে দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সরকারের জারি করা এক নির্দেশের বরাত দিয়ে এমনটি জানিয়েছে সিএনএন।
ইউএসএআইডির ওয়েবসাইটে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, “যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় সময় শুক্রবার রাত ১১টা ৫৯ মিনিট থেকে ইউএসএআইডির সরাসরি নিয়োগকৃত সকল কর্মী বিশ্বব্যাপী প্রশাসনিক ছুটিতে যাবে। শুধু মিশনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে, মূল নেতৃত্বে এবং বিশেষভাবে মনোনীত কর্মসূচীগুলোর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা এর বাইরে থাকবেন।”
ইউএসএআইডির ওয়েবসাইট গত সপ্তাহে বন্ধ থাকার পর এদিন আবার অনলাইনে ফিরে আসে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর অধীনে সংস্থাটি ৩০ দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার আয়োজন ও ভ্রমনের জন্য অর্থ দেবে। এরপর অত্যাবশ্যকীয় বলে নির্ধারিত না হওয়া কর্মীদের চুক্তি শেষ করবে।”
‘সরাসরি নিয়োগকৃত’ কর্মী বলতে তাদের বোঝানো হয়েছে যারা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের নিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তা। ইউএসএআইডির কর্মী বাহিনীর বিরাট একটি অংশ ঠিকাদারদের মাধ্যমে সংগ্রহ করা। এসব ঠিকাদারদের অনেককেই এরইমধ্যে বরখাস্ত অথবা ছাঁটাই করা হয়েছে।
প্রয়োজনীয় যে কর্মীরা কাজ চালিয়ে যাবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে তাদের বৃহস্পতিবার বিকালের মধ্যে জানানো হবে।
ওয়েবসাইটে থাকা বিবৃতিটি ‘আপনার সেবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ’ লেখা দিয়ে শেষ হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ত্রাণ সংস্থা ইউএসএআইডিকে বন্ধ করে দেওয়া ও প্রায় সব বৈদেশিক সাহায্য জব্দ করার মধ্যেই এই নির্দেশনাটি এলো।
সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ঘোষণা করেন, তিনি ইউএসএআইডির ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক হবেন। এর মধ্য দিয়ে বৈদেশিক সাহায্য সংস্থাটির কর্তৃত্ব মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে যাওয়া নিশ্চিত হয়।
সম্প্রতি ইউএসএআইডির বহু ঊধ্র্বতন কর্মকর্তাকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। সংস্থাটির কয়েক হাজার ঠিকাদারকে ছাঁটাই করা হয়েছে। আর চলতি সপ্তাহে কর্মীদের সংস্থাটির ওয়াশিংটন সদরদপ্তরে প্রতিবেদন না পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার থেকেই সংস্থাটির কর্মীরা ব্যক্তিগতভাবে ইমেইল পেতে থাকেন যেখানে তাদের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়।
মেইলে দেওয়া নোটিশে বলা হয়, “অন্য কোনো নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত আপনি সবেতন ছুটিতে থাকবেন।”
প্রশাসনিক ছুটিতে থাকাকালীন কর্মীদের ইউএসএআইডির প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে, সংস্থাটির নেটওয়ার্ক সিস্টেমে ঢুকতে নিষেধ করা হয় আর কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ছাড়া সংস্থাটিতে তাদের অবস্থান বা কর্তৃত্ব ব্যবহার বা ব্যবহার করার চেষ্টা করতেও নিষেধ করা হয়।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বলেন, “মনে হচ্ছে আপনি ধীরে ধীরে সংস্থাটিকে বন্ধ করতে যাচ্ছেন।”
এর উত্তরে ট্রাম্প হেসে বলেন, “তেমনই মনে হচ্ছে।” এরপর তিনি তার ‘সরকারি দক্ষতা বিভাগের’ নেতৃত্বে থাকা প্রযুক্তি ধনকুবের ইলন মাস্কের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “তিনি এই ইউএসএআইডিতে যে সমস্ত জালিয়াতি পেয়েছেন তা দেখুন। এটি দুর্নীতিগ্রস্ত।”
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির প্রশাসনের অধীনে ১৯৬১ সালে ইউএসএআইডি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এটি মার্কিন সরকারের ‘মানবিক হাত’ ছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী দারিদ্র বিমোচন, বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা এবং দুর্ভিক্ষ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাড়া দিয়ে শত শত কোটি ডলার ব্যয় করে আসছিল।