প্রবল বন্যায় তছনছ কুইন্সল্যান্ড
ছয় দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার তোড়ে ভেসে গেছে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের প্রধান একটি মহাসড়কের অংশ বিশেষ।
বিবিসি লিখেছে, মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে রাজ্যটির উত্তরে একজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি ঘরছাড়া হয়েছে হাজারো মানুষ। উপকূলীয় শহর টাউন্সভিল, কার্ডওয়েল ও মফস্বল শহর ইংহামের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়।
সেখানে রেকর্ড বৃষ্টিপাত চলছে জানিয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্যা কবলিত অঞ্চলের অনেক জায়গায় শনিবার থেকে ১ দশমিক ৩ মিটার বৃষ্টি ঝরেছে। তাতে উপচে পড়ছে বাঁধ ও নদীর পানি।
প্রধানমন্ত্রী অ্যানটনি আলবানিজ সোমবার ব্রিফিংয়ে দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে অস্ট্রেলিয়ানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি এক্স পোস্টে লিখেছেন, “অস্ট্রেলিয়ানদের একজনের বিপদে আরেকজনকে এগিয়ে আসতে আমি দেখেছি। দুর্গত এলাকায় 'বন্যার পানিতে সৃষ্ট শঙ্কা' কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে।”
বিবিসি লিখেছে, কুইন্সল্যান্ডের রাজধানী ব্রিসবেনের সঙ্গে রাজ্যের আঞ্চলিক কেন্দ্রগুলোর সংযোগকারী ব্রুস হাইওয়ের কিছু অংশ ধসে পড়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি নগর ও মফস্বল শহরে উদ্ধারকারী দল পাঠানোর উদ্যোগ ব্যাহত হচ্ছে।
পণ্য পরিবহনকারীদের সংগঠন দ্য কুইন্সল্যান্ড ট্রাকিং অ্যাসোসিয়েশন এবিসিকে বলেছেন, বাঁধের পানিতে একটি সেতু ধসে যাওয়ায় বাড়তি ৭০০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে। তাতে গুরুত্বপূর্ণ পণ্য সরবরাহের গতি কমেছে।
কুইন্সল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী ডেভিড ক্রিসাফুলি ‘ভ্রাতৃত্বের’ শহর ইংহামে ৬৩ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যুতে সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। রোববার স্টেট ইমার্জেন্সি সার্ভিসের (এসইএস) উদ্ধার তৎপরতার মধ্যে ডিঙ্গি নৌকা ডুবে ওই নারী মারা যান।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে ক্রিসাফুলি জানিয়েছেন, সোমবার তিনি উত্তর কুইন্সল্যান্ড পরিদর্শনে যাবেন।
বন্যায় যেসব এলাকা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, কথিত সেই ‘ব্ল্যাক জোনে’ এখনই না ফিরতে বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ডেভিড ক্রিসাফুলি। এরমধ্যে টাউন্সভিলের ছয়টি উপশহর রয়েছে, যেসব এলাকায় ঝুঁকি তৈরি করেছে পাশের রস নদী।
অস্ট্রেলিয়ের আবহাওয়া ব্যুরো বলছে, ওই এলাকায় ৩ দিনে ছয় মাসের সমান বৃষ্টি ঝরেছে। টাউন্সভিল স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থপনা গ্রুপ সতর্ক করেছে, দুই হাজার বাড়ি প্লাবিত হতে পারে, কিছু বাড়ির তৃতীয় তলাতেও পানি উঠতে পারে।
বিবিসি লিখেছে, আবহাওয়ার প্রতিবেদন অনুসারে জলোচ্ছ্বাস ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে, কিন্তু ওই অঞ্চলের জলপথ ফুলে ফেঁপে উঠছে। হাবার্ট, রস, বোহল, হোর্টন এবং বুর্দেকিন নদীর উপরিভাগ সংলগ্ন এলাকায় প্রবল বন্যার সতর্কতা রয়েছে।
জরুরি উদ্ধারকর্মীরা দিন-রাত সমানতালে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। স্টেট ইমার্জেন্সি সার্ভিস রোববার রাত থেকে সোমবার পর্যন্ত ৪৮০টি কল পেয়েছে এবং ১১টি উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
বিবিসি লিখেছে, ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাটের খবর আসছে, কিছু এলাকার মানুষের পক্ষে সহায়তার জন্য কল করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
স্টেট ইমার্জেন্সি সার্ভিসের উপকমিশনার শেন চেলেপি জনগণকে সতর্ক থাকার এবং যেখানেই সম্ভব তাদের প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, টাউন্সভিল, ইংহাম ও কার্ডওয়েলের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রায় ৪০০ মানুষকে রাখা হয়েছে।
বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়, ঝড় ও বন্যার জন্য ঝুঁকিতে রয়েছে গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে অবস্থিত উত্তর কুইন্সল্যান্ড। তবে উষ্ণ মহাসাগর ও উষ্ণ পৃথিবী আরও তীব্র এবং ঘন ঘন চরম বৃষ্টিপাত পরিস্থিতি তৈরি করছে বলে সতর্ক করেছেন জলবায়ু বিজ্ঞানীরা।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, চলতি বন্যা গত ৬০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হতে পারে।