রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনে নিহত ১৫
কিয়েভ জানিয়েছে, রাশিয়া শনিবার রাতভর ইউক্রেনের আবাসিক ভবন ও জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্য করে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছে।
ইউক্রেনের পোলতাভা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
মস্কোর কুরস্ক অঞ্চলের ইউক্রেনের-অধিকৃত শহর সুদজায় বেসামরিক নাগরিকদের আশ্রয়দানকারী একটি বোর্ডিং স্কুলে হামলার জন্য ইউক্রেন এবং রাশিয়া একে অপরকে দোষারোপ করেছে। যেখানে কিয়েভ গত আগস্টে একটি বড় আন্তঃসীমান্ত আক্রমণ শুরু করেছিল।
ইউক্রেনের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, হামলায় চারজন নিহত হয়েছে। উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করার সময় আরও কয়েক ডজন মানুষকে উদ্ধার করার কথা জানিয়েছেন। তবে রাশিয়া এখনও কোনো সংখ্যা জানায়নি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রায় তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধের উত্তেজনা হ্রাসের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শুক্রবার থেকে শনিবার রাতভর মধ্য ও পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছেন।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, পোলতাভা শহরের একটি আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে এক শিশুসহ এগারোজন নিহত হয়েছেন।
ঘটনাস্থল থেকে এএফপির ছবিতে, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের একটি ভবনের ধোঁয়াটে ধ্বংসাবশেষের মধ্য দিয়ে তল্লাশি চালাতে দেখা যাচ্ছে।
পাশের এক ভবনের বাসিন্দা ওলেনা সভিরিড বলেন, ঈশ্বর আমাদের রক্ষা করেছেন।
এএফপিকে তিনি বলেন, আমাদের বিপরীতে পঞ্চম তলা থেকে আমার একজন মহিলা বন্ধুকে বের করে আনা হয়। কিন্তু সে আর তখন বেঁচে নেই।
সে দেয়ালে চাপা পড়েছিল। অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি জানান।
পোলতাভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র কাতেরিনা ইয়ামশ্চিকোভা বলেন, উদ্ধার অভিযান চলমান রয়েছে।
তিনি এএফপিকে বলেন, হাসপাতালের ডাক্তাররা আমাদের আহতদের জন্য লড়াই করছেন। ইউক্রেন শনিবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেছে, রাশিয়া কুরস্ক অঞ্চলের সুদজা শহরে বেসামরিক নাগরিকদের আশ্রয়দানকারী একটি বোর্ডিং স্কুলে হামলা চালিয়ে চারজনকে হত্যা করেছে।
এই অঞ্চল কিয়েভ পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে দখল করে রেখেছে।
রোববার মস্কো কিয়েভের বাহিনীকে সুদজা আক্রমণ চালানোর জন্য অভিযুক্ত করে প্রতিক্রিয়া জানায়।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১ ফেব্রুয়ারি, ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী সুদজা শহরের একটি বোর্ডিং স্কুলকে লক্ষ্যবস্তু করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আরেকটি যুদ্ধাপরাধ করেছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কোনও মৃত্যুর কথা উল্লেখ করেনি। তবে কুরস্ক অঞ্চলের গভর্নর আলেকজান্ডার খিনস্টাইন বলেন, নিহতদের সংখ্যা সম্পর্কে এখনও কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই।
কিয়েভ গত আগস্টে কুরস্ক অঞ্চলে আকস্মিকভাবে সীমান্ত আক্রমণ করে। সুদজার আঞ্চলিক কেন্দ্রসহ কয়েক ডজন গ্রাম এবং ছোট শহর দখল করে। যেখানে যুদ্ধের আগে প্রায় ৬ হাজার লোক বাস করত।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর জেনারেল স্টাফ এক টেলিগ্রাম বার্তায়, জানান রাশিয়ার বিমানবাহিনী কুরস্ক অঞ্চলের সুদজা শহরে একটি বোর্ডিং স্কুলে বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপ করে আঘাত করেছে।
এতে আরো বলা হয়েছে হামলাটি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয়েছে। হামলার সময় স্থানীয় বাসিন্দারা ভবনের ভেতরে ছিলেন এবং উদ্ধার কাজ চলছে।
অন্য একটি পোস্টে বলা হয়েছে, ধ্বংসস্তূপ অপসারণের সময় ৮৪ জন বেসামরিক ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং তাদের চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা সন্তোষজনক। চারজনের অবস্থা গুরুতর এবং চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়াকে ’অভদ্র’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন, যেখানে একটি ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের পাশাপাশি একজন আহত ব্যক্তিকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
জেলেনস্কি এক্স প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে বলেন, তারা ভবনটি ধ্বংস করে দিয়েছে, যদিও সেখানে কয়েক ডজন বেসামরিক লোক ছিল। রাশিয়ার বোমা ইউক্রেনের বাড়িঘর ধ্বংস করেছে। এমনকি তাদের নিজস্ব বেসামরিক লোকদের বিরুদ্ধেও রাশিয়ার সেনাবাহিনী একই কৌশল ব্যবহার করে।