‘জঘন্যতম’ অভিবাসীদের গুয়ানতানামো বেতে পাঠাবেন ট্রাম্প
গুয়ানতানামো বে কারাগারে যাতে হাজার ত্রিশেক অবৈধ অভিবাসীকে বন্দি রাখা যায়, সেজন্য সেখানে নতুন স্থাপনা নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
তিনি বলেছেন, কিউবায় যুক্তরাষ্ট্রের নৌঘাঁটিতে যে হাই-সিকিউরিটি সামরিক কারাগার রয়েছে, নতুন বন্দিশালাটি সেটি থেকে পৃথক হবে। এই বন্দিশালায় স্থান হবে সেই সব ‘জঘন্যতম’ অবৈধ অভিবাসীদের, যারা আমেরিকার জনগণের জন্য হুমকির কারণ।
বিবিসি লিখেছে, গুয়ানতানামো বে কারাগারে দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসীদের রাখা হচ্ছে, যা নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো সমালোচনা করে আসছে।
ট্রাম্পের ‘বর্ডার সিজার’ টম হোম্যান বুধবার বলেছেন, সেখানে বর্তমানে যে স্থাপনা সুবিধা রয়েছে তা বর্ধিত করা হবে। আর তা পরিচালনা করবে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)।
তিনি বলেন, সাগরে মার্কিন কোস্ট গার্ডের হাতে অভিবাসী ধরা পড়ার পর তাদের সরাসরি সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে এবং ওই বন্দিশালায় 'সর্বোচ্চ' মান নিশ্চিত করা হবে।
বিবিসি লিখেছে, বর্ধিত বন্দিশালা নির্মাণে কত খরচ হবে কিংবা কবে সেই কাজ শেষ হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।
কিউবা সরকার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এই পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ‘দখল করা’ ভূমিতে অবৈধভাবে আটক রাখা ও নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছে।
কথিত লেকেন রাইলি অ্যাক্টকে আইনে রূপান্তরের জন্য স্বাক্ষর করার সময় ট্রাম্পও ওই ঘোষণা দেন। ওই আইনে চুরি বা সহিংস অপরাধের জন্য গ্রেপ্তার অবৈধ অভিবাসীদের বিচারের জন্য কারাগারে রাখা বিধান রাখা হয়েছে।
গত বছর ভেনেজুয়েলার এক অভিবাসীর হাতে প্রাণ হারানো জর্জিয়ার এক নার্সের নামে ওই বিলটি করা হয়। গত সপ্তাহে বিলটি কংগ্রেসে পাস হয়, যেটিকে প্রশাসনের ‘প্রাথমিক আইনি বিজয়’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
হোয়াইট হাউজের ইস্ট রুমে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেন, গুয়ানতানামোর নতুন নির্বাহী আদেশে প্রতিরক্ষা ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগকে ৩০ হাজার শয্যার এ স্থাপনার 'প্রস্তুতি শুরু করতে' নির্দেশ দেওয়া হবে।
"তাদের (অভিবাসীদের) মধ্যে কিছু এতটাই খারাপ যে, তাদের ধরে রাখার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকেও বিশ্বাস করি না, কারণ আমরা চাই না তারা ফিরে আসুক। তাই আমরা তাদের গুয়ানতানামোতে পাঠাতে যাচ্ছি। সেখান থেকে বের হওয়া খুব কঠিন ব্যাপার।”
ট্রাম্পের নির্দেশনা অনুযায়ী, অবৈধ অভিবাসীদের জন্য গুয়ানাতানামোর ধারণক্ষমতা দ্বিগুণ করা হবে।
সেখানে অভিবাসীদের রাখার জন্য আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের একটি বন্দিশালা রয়েছে, যেটি গুয়ানতানামো মাইগ্রেন্ট অপারেশন্স সেন্টার নামে পরিচিত। কয়েক দশক ধরে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় আমলেই সেটি ব্যবহৃত হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল রিফিউজি অ্যাসিস্টেন্স প্রজেক্ট ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে অভিযোগ করেছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার সাগরে অভিবাসীদের ধরে গোপনে সেখানে নিয়ে ‘অমানবিক’ অবস্থায় রাখছে।
বিবিসি লিখেছে, সেখানে মূলত সাগরে ধরা পড়া অভিবাসীদের রাখা হয়েছে এবং ওই স্থাপনার তথ্য প্রকাশের জন্য সম্প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিল আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন।
জবাবে বাইডেন প্রশাসন বলেছে, “এটি কোনো বন্দিশালা নয় এবং সেখানে কোনো অভিবাসীকে আটক রাখা হয়নি।”
যে বিল নিয়ে রিপাবলিকানরা কাজ করছে, তার অংশ হিসেবে বন্দিশালা সম্প্রসারণের খরচ কংগ্রেসের কাছে চাওয়া হবে বলে জানা গেছে।
হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি প্রতিমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম বলেন, এই অর্থ ‘রিকনসিলেশন অ্যান্ড অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন্স’ এর মাধ্যমে বরাদ্দ করা হবে।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলার পর কয়েক দশক ধরে গুয়ানতানামোর এই সামরিক কারাগারে হেফাজতে রাখা বন্দিদের আটকে রেখেছে ওয়াশিংটন।
কারাগারটিতে যখন সর্বোচ্চ বন্দি ছিল, তখন শত শত মানুষ সেখানে ছিল। বারাক ওবামাসহ বেশ কয়েকজন ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট তা বন্ধ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। বর্তমানে সেখানে ১৫ জন বন্দি রয়েছেন।
এই স্থাপনা সম্প্রসারণের খবর পাওয়া মাত্র কিউবান সরকার নিন্দা জানিয়েছে। তাদের চোখে, দীর্ঘদিন ধরে গুয়ান্তানামো বেকে ‘দখল’ করে রাখা হয়েছে। ১৯৫৯ সালে ফিদেল কাস্ত্রো ক্ষমতায় আসার পর থেকে দ্বীপটিতে মার্কিন নৌঘাঁটির অস্তিত্ব নিয়ে নিন্দা প্রকাশ করে আসছে কিউবা।
কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল দিয়াজ-কানেল বারমুদেজ এক্স পোস্টে বলেছেন, “নৃশংসতার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকার ঘোষণা দিয়েছে- তারা অবৈধভাবে দখল করা কিউবার ভূখণ্ডে অবস্থিত গুয়ানতানামো নৌঘাঁটির যে কারাগার নির্যাতন ও অবৈধ আটকের জন্য পরিচিত, তার কাছে জোর করে বিতাড়িত হাজার হাজার অভিবাসীকে রাখবে।”
কিউবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রদ্রিগেজ বলেছেন, এই ঘোষণা 'মানবিক পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি অবজ্ঞার' বহিঃপ্রকাশ।