সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা ট্রাম্পের, আশ্রয় আবেদনের অ্যাপ বন্ধ
অভিবাসন ঠেকাতে ওভাল অফিসে বসার পরপরই একগুচ্ছ নির্বাহী আদেশ ও ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
জন্মগত নাগরিকত্বের সংজ্ঞা নির্ধারণের আদেশ থেকে শুরু করে অবৈধ অভিবাসন বন্ধে সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার মতো নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি।
তবে এসব আদেশের মধ্যে বিশেষত জন্মগত নাগরিকত্বের সংজ্ঞা পরিবর্তনের যেকোনো আদেশ প্রচণ্ড আইনি বিরোধিতার মুখে পড়তে পারে।
ট্রাম্প এর আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বাইডেন প্রশাসনের ‘ধ্বংসাত্মক’ নীতিগুলো ‘পাঁচ মিনিটের মধ্যে’ বাতিল করা হবে। নতুন প্রশাসন ‘সিবিপি ওয়ান’ অ্যাপ বাতিল করার কয়েক ঘণ্টা আগে হাজার হাজার অভিবাসন প্রত্যাশীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট বাতিল করা হয়। ওই অ্যাপের মাধ্যমে সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের জন্য আগে থেকেই বুকিং করতে হয়।
ট্রাম্প তার উদ্বোধনী ভাষণে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ‘সমস্ত অবৈধ প্রবেশ বন্ধ করা হবে’ এবং লক্ষাধিক ‘অবৈধ অভিবাসীকে’ ফেরত পাঠানো হবে।
জন্মগত নাগরিকত্বের সংজ্ঞা মোকাবেলার আদেশ থেকে শুরু করে সীমান্তে অবৈধ অভিবাসনকে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার আদেশ, ট্রাম্প মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্ত কঠোর করার প্রতিশ্রুতি থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
মেক্সিকোর মাদক চক্রগুলোকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করে একটি আদেশেও স্বাক্ষর করেছেন তিনি।
এর আগে ওয়াশিংটনের ক্যাপিটাল ওয়ান এরিনায় এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বিগত বাইডেন প্রশাসনের প্রায় ৮০টি নির্বাহী আদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করেন, যেগুলোকে তিনি ‘উগ্রপন্থি’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।
ক্যাপিটল হিলে অভিষেক ভাষণে ট্রাম্প বলেন, “হুমকি ও আগ্রাসন থেকে আমাদের দেশকে রক্ষার চেয়ে বড় কোনো দায়িত্ব আমার নেই।”
এই বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে ‘সীমান্ত সিল করে দিতে’ এবং ড্রোন বিরোধী সক্ষমতাসহ অতিরিক্ত সম্পদ ও কর্মী নিয়োগের নির্দেশ দেবেন।
যদিও আদেশের বিস্তারিত এখনও জানা যায়নি, কর্মকর্তারা বলেছেন যে ট্রাম্প জন্মগত নাগরিকত্ব যুগ শেষ করার পরিকল্পনা করছেন। তার মানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানরা আর স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বলে গণ্য হবে না।
বিবিসি লিখেছে, জন্মগত নাগরিকত্বের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানেই আছে এবং এটি পরিবর্তন করতে হলে কংগ্রেসের উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট প্রয়োজন।
ট্রাম্প কীভাবে তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন তা স্পষ্ট করেননি তার কর্মকর্তারা।
ট্রাম্প প্রশাসন খুব দ্রুতই 'সিবিপি অন' মোবাইল অ্যাপ বাতিলের পদক্ষেপ নিয়েছে। এই অ্যাপ ব্যবহার করে অভিবাসী প্রত্যাশীরা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করত।
বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা এর আগে জানিয়েছিলেন, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে অ্যাপটি চালু হওয়ার পর থেকে তা সীমান্তে আটক হওয়া মানুষের সংখ্যা কমাতে সাহায্য করেছে। এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে আশ্রয় প্রার্থনা করার একমাত্র বৈধ উপায়।
কাস্টমস ও বর্ডার প্রোটেকশন বা সিবিপি’র ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এই অ্যাপটি আর কার্যকর নেই।
ব্যবহারকারীরা অ্যাপটিতে নতুন একটি তথ্য দেখতে পাচ্ছেন, যেখানে বলা হয়েছে 'সিবিপি অ্যাপের মাধ্যমে আগের নির্ধারিত অ্যাপয়েন্টমেন্টগুলো এখন আর বৈধ নয়'।
সিবিপি অন অ্যাপের মাধ্যমে আগামী তিন সপ্তাহের জন্য ৩০ হাজার অভিবাসীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট চূড়ান্ত করেছিল বাইডেন প্রশাসন।
বিবিসি লিখেছে, ওই অ্যাপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে প্রায় দুই লাখ ৭০ হাজার অভিবাসী মেক্সিকোতে অপেক্ষা করছিলেন বলে ধারণা করা হয়।
মেক্সিকোর মাদক কারবারিদের সহিংসতা থেকে বাঁচতে মৃগী আক্রান্ত ছেলেকে নিয়ে সীমান্ত শহর তিজুয়ানায় পালিয়ে আসেন ওরালিয়া। তিনি সিবিপি অন অ্যাপের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য সাত মাস ধরে অপেক্ষা করছিলেন।
ওরালিয়া বলেন, “আমি আশা করি, ঈশ্বর যেন তার (ট্রাম্পের) মনকে নরম করে।”