প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে ফের সরিয়ে নিলেন ট্রাম্প
প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প আবারো যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরিয়ে নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই এ পদক্ষেপ নেন তিনি।
এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গতকারী দেশকে এক দশকের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে চলা বৈশ্বিক লড়াই প্রচেষ্টা থেকে সরিয়ে নিলেন ট্রাম্প।
সোমবার ওয়াশিংটন ডিসির স্পোর্টস ভেন্যু ক্যাপিটাল ওয়ান এরিনায় সমবেত সমর্থকদের সামনে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে প্রত্যাহারের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প।
স্বাক্ষর করার আগে তিনি বলেন, “আমি অবিলম্বে ওই অন্যায্য, একপেশে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি প্রতারণা থেকে প্রত্যাহার করছি। চীন যখন দায়মুক্তি পাচ্ছে তখন যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের নিজেদের শিল্পের ক্ষতি করতে পারে না।”
রয়টার্স লিখেছে, এই পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্র পুরো বিশ্বের মধ্যে ২০১৫ সালের ওই চুক্তির বাইরে থাকা তিন দেশ ইরান, লিবিয়া ও ইয়েমেনের পাশে স্থান পেল।
ওই চুক্তিতে বিশ্বব্যাপী সরকারগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব এড়াতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি শিল্প বিপ্লবের আগের স্তর থেকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (২ দশমিক ৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) মধ্যে রাখতে সম্মত হয়েছিল।
এই চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ে ট্রাম্পের সন্দেহ প্রতিফলিত হলো, যাকে তিনি ‘ধাপ্পাবাজি’ বলে অভিহিত করে আসছেন। এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলোকে সর্বোচ্চ উৎপাদনের জন্য প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত করার তার বৃহত্তর পরিকল্পনার সঙ্গেও খাপ খায়।
টেক্সাস, নিউ মেক্সিকো ও অন্য অঞ্চলগুলোতে কয়েক বছর ধরে ড্রিলিং ব্যাপকভাবে বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষে আছে। ইউক্রেইনে রাশিয়ার আক্রমণের পর বিশ্বব্যাপী তেল-গ্যাসের দাম চড়ে যাওয়ার পরিস্থিতিতে ফ্র্যাকিং প্রযুক্তি প্রয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্র এ সাফল্য পেয়েছে।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার বিষয়টি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। তারপর চুক্তির শর্ত অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত এক বছর পর কার্যকর হবে।
ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে তার প্রথম মেয়াদেও যুক্তরাষ্ট্রকে এই চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করেছিলেন। তবে তখন সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার প্রক্রিয়ায় কয়েক বছর লেগে যায় আর ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় এসেই যুক্তরাষ্ট্রকে আবার চুক্তিতে ফেরান। তবে এবার এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে সময় কম লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কারণ চুক্তির প্রাথমিক তিন বছরের প্রতিশ্রুতির বাধ্যবাধকতায় আর আটকে নেই ট্রাম্প।
এখন বিশ্বের শীর্ষ গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমণকারী দেশ চীন। তবে এর পরেই আছে যুক্তরাষ্ট্র। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার এই পদক্ষেপের কারণে গ্রিনহাউজ গ্যাস কমানোর বৈশ্বিক প্রচেষ্টা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।