মঙ্গলবার ২১ জানুয়ারি ২০২৫, মাঘ ৮ ১৪৩১, ২১ রজব ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ব্যাপক পরিবর্তনের অঙ্গীকার দিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নিলেন ট্রাম্প

 আপডেট: ০৯:৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫

ব্যাপক পরিবর্তনের অঙ্গীকার দিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নিলেন ট্রাম্প

কথায় কথায় অনিশ্চয়তা তৈরি করা তার অনেক দিনের অভ্যাস; তবে সবাই যা ভাবতে পারেননি সেই অনিশ্চয়তা জয় করেই ডনাল্ড ট্রাম্প ইতিহাস গড়েছেন। হারানো ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার সেই মাহেন্দ্রক্ষণে বললেন, যুক্তরাষ্ট্রকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে ফিরিয়ে নিতেই সৃষ্টিকর্তা তাকে বাঁচিয়েছেন।

হার মানা যেন তার স্বভাবে নেই, যে কারণে ২০২০ সালের ভোটে হেরেও পরাজয় মানতে অস্বীকার করেছিলেন। তবে সেখান থেকে বীরের বেশে ফিরে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শাসনভার নিলেন তিনি; দ্বিতীয় মেয়াদে চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউজের বাসিন্দা হলেন।

সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প। বিশ্বের সবার নজর তখন ওয়াশিংটনে তার অভিষেক অনুষ্ঠানে। পাদপ্রদীপের আলোর পুরোটা জুড়েই ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান মানুষ হতে যাওয়া ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিতে নামা ডনাল্ড ট্রাম্প।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুই বাইবেলে হাত রেখে শপথ নেন এই রিপাবলিকান। শপথ নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্বর্ণযুগ’ শুরুর ঘোষণা দেন নাটকীয় প্রত্যাবর্তনের গল্প তৈরি করা এই রাজনীতিক।

তার এই যাত্রার মধ্য দিয়ে কেবল যুক্তরাষ্ট্রই নয়, আরেক ‘ট্রাম্প যুগে’ প্রবেশ করল গোটা বিশ্বও। অথচ গল্পটা ভিন্নও হতে পারত।

কেননা বছরের পর বছর নানা বিতর্ক জন্ম দিয়ে রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ার ঝুঁকিতে ছিলেন। অভিশংসিত হয়েছেন, একাধিক ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হয়েছেন, বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছেন, দোষীও সাব্যস্ত হয়েছেন। এগুলোর মধ্যে আততায়ীর বুলেট এড়িয়ে, আমেরিকার ইতিহাসে সবাইকে তাক লাগিয়ে বীরদর্পেই হোয়াইট হাউজে প্রত্যাবর্তন হয়েছে ট্রাম্পের।

সোমবার ওয়াশিংটন ডিসির কংগ্রেস ভবনে ‘ক্যাপিটল রোটুন্ডায়’ ‘প্রত্যাবর্তনের’ নজরকাড়া অভিষেকে ট্রাম্প বক্তব্য শুরু করেন ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ও বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিসসহ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে।

এর আগে দুটো বাইবেলে হাত রেখে শপথ নেন ট্রাম্প। এর একটি তার মায়ের দেওয়া। অন্যটি আব্রাহাম লিংকনের, যেটিতে শপথ নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের আগের কয়েকজন প্রেসিডেন্টও। ১৮৬১ সালে আব্রাহামও এ বাইবেল ছুঁয়ে শপথ নিয়েছিলেন।

দেড়শ বছরের সেই পুরোনো বাইবেল ছুঁয়ে ট্রাম্প দৃঢ়কণ্ঠে শপথ বাক্য উচ্চারণ করেন। এরপর আরও জোরালো কণ্ঠে বললেন, "ঠিক এ মুহূর্ত থেকে শুরু হল যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণযুগ। আজ থেকে আমাদের দেশ সমৃদ্ধ এবং সম্মানিত হবে। আমি যুক্তরাষ্ট্রকে সর্বাগ্রে রাখব।”

যুক্তরাষ্ট্র যেন শ্রেষ্ঠত্বের আসন ফিরে পায়, সে জন্যই সৃষ্টিকর্তা তাকে আততায়ীর হাতে থেকে বাঁচিয়েছিলেন মন্তব্য করে ট্রাম্প বলেন, মার্কিনিদের ব্যবহার করে অন্য দেশ সমৃদ্ধ হবে, সেটা তিনি আর ঘটতে দেবেন না।

স্বভাবসুলভভাবেই, আমরিকার পথে যারা বাধা হয়ে দাঁড়াবে তাদেরকে হুমকি দিয়েছেন নতুন প্রেসিডেন্ট।

নিজের দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা পুনরুদ্ধার এবং ন্যায়বিচারের দাঁড়িপাল্লায় ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র আবার নিজেদেরকে বর্ধনশীল একটি জাতি হিসেবেই গণ্য করবে এমন আশা জাগিয়ে ট্রাম্প ‘আমেরিকার সম্পদ এবং ভূখণ্ড বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি’ দিয়েছেন ভাষণে।

অভিষেকের ভাষণে তিনি বিশ্বের জন্যও দিয়েছেন কড়া বার্তা। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও ঐক্য বজায় রাখায় ভূমিকা নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন।

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকরের কথাও তিনি সংক্ষেপে তুলে ধরেছেন।

তার ভাষণটি ছিল বিশ্বকে দেওয়া আরেক কঠোর এবং চ্যালেঞ্জিং বক্তব্য। আর তাতে ছিল আমেরিকার শক্তি ও সম্ভাবনার ফুলঝুরি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের ‘নতুন যুগে’ বিশ্ব কেবল তার প্রথম মেয়াদের (২০১৭-২০২১) পুনরাবৃত্তিই দেখবে না, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো বেশি নিপীড়নমূলক, বর্ণবাদী ও আত্মগরিমাপূর্ণ চরিত্র সামনে আসারও যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

কেমন হতে পারেন এবারের ট্রাম্প?

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ এখনই অনেকটা তার প্রথম মেয়াদের মতই অনিশ্চয়তায় ভরা ও টালমাটাল মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তার সঙ্গে আছে রিপাবলিকানদের মধ্যকার নানা কোন্দালও। নির্বাচনে জয়ের পর থেকে শপথ নেওয়ার আগ পর্যন্ত ট্রাম্প আইনি প্রক্রিয়ায় নিজের কর্তৃত্ব ফলিয়ে এসেছেন।

তার শপথ গ্রহণের দিন যতই ঘনিয়ে এসেছে ততই আগামী দিনগুলোতে বড় ধরনের ওলট-পালট ঘটারই আলামত মিলেছে। বিশেষ করে ট্রাম্প তার নতুন প্রশাসনে যেসব ব্যক্তিদের নিয়োগ করেছেন, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অভিজ্ঞতা যাচাই না করেই ট্রাম্প কেবল তার অনুগতদের নিয়োগ দিয়েছেন, যা নিয়ে হতবাক হয়েছেন এবং প্রশ্ন তুলেছেন ট্রাম্পের বেশ কিছু মিত্রও।

ট্রাম্পের কম যোগ্যতাসম্পন্ন এই অনুগতদের নতুন প্রশাসন সবলভাবে কতদূর যেতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তার ওপর নতুন এই প্রশাসনে আছেন ইলন মাস্কের মত শীর্ষ ধনী। রাজনীতিতে ট্রাম্পকে ছাপিয়ে ইতোমধ্যেই যার প্রভাব অনেকটাই প্রকাশ্যে এসেছে।

ট্রাম্প শপথ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক অর্থে, পবিত্র বাইবেলে হাত রাখা হয়ে গেছে ধনকুবের ইলন মাস্কেরও। আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এ সম্পর্ক নজিরবিহীন। উচ্চাকাঙ্ক্ষা, কট্টর ডানপন্থি রাজনীতি এবং সংবাদমাধ্যমের ওপর প্রভাব রাখাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সঙ্গে মিল আছে মাস্কের।

তবে যথেষ্ট মিল থাকলেও বিরাট প্রভাবশালী এ দুই মানুষের ভার হোয়াইট হাউজ বইতে পারবে কি না সেটি প্রশ্ন। মাস্ককে নিয়ে ট্রাম্প বড় ধরনের স্বার্থের সংঘাতে জড়াতে পারেন তেমন আশঙ্কা আছে। ট্রাম্প একজন কট্টর পুঁজিবাদী ব্যবসায়ী; রাজনীতি কিংবা কূটনীতির চেয়েও তার ব্যাবসায়িক স্বার্থকে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন।

ফলে ট্রাম্প দেশের স্বার্থকে নিজ স্বার্থের উর্ধ্বে স্থান দিতে অপারগ হওয়ারও সম্ভাবনা আছে। তাছাড়া ট্রাম্প শপথ গ্রহণের পরই ‘ডিপ স্টেট’ ভেঙে দিয়ে মার্কিন প্রশাসনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য আগেই পরিকল্পনা সাজিয়ে রেখেছেন।

ট্রাম্পের এবারের শাসনামলে কী কী ঘটতে পারে?

দেশটির ফেডারেল সরকারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও জোরদার করতে তিনি প্রস্তুত। প্রথম দিনেই একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে ফেডারেল সরকারের প্রায় ৫০ হাজার স্থায়ী কর্মীর চাকরির সুরক্ষা বাতিল করতে পারেন তিনি।

এতে এসব পদে স্থায়ী কর্মীর পরিবর্তনে ট্রাম্পের নিজের পছন্দের ও অনুগত লোকদের নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। ট্রাম্প প্রশাসন যত দ্রুত সম্ভব ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন বিভাগে কয়েক হাজার রাজনৈতিক নিয়োগ সম্পন্ন করার পরিকল্পনাও করেছে।

এর উদ্দেশ্য হল, সরকারের বিভিন্ন স্তরে অত্যন্ত অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত করা, যা সাম্প্রতিক যে কোনও প্রেসিডেন্টের তুলনায় অনেক বেশি। ট্রাম্প শপথ নেওয়ার আগেই মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের শীর্ষ তিন কূটনীতিকের পদত্যাগ চেয়ে ভবিষ্যতে ব্যাপক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

কারণ ট্রাম্পের মিত্ররা মনে করেন, প্রথম মেয়াদে বিচার বিভাগ, শিক্ষা বিভাগসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অসহযোগী আমলাদের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ফেডারেল কর্মক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন প্রায় এক ডজন শীর্ষ পর্যায়ের নিয়োগপ্রাপ্তদের।

ট্রাম্পের ভয়ঙ্কর নীলনকশা ‘প্রজেক্ট ২০২৫’বা ‘প্রজেক্ট টু থাউজ্যান্ড টোয়েন্টিফাইভ’ এর আওতায় ফেডারেল সিভিল সার্ভিসের গোটা কাঠামোই এবার হুমকিতে থাকবে। এই নীলনকশা ধরে ট্রাম্প এবং কংগ্রেস ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশন (ডিওই) এবং ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনস্ট্রেশনকে (এনওএএ) বাদ দিয়ে দেবেন।

পাশাপাশি বেসরকারিকরণ করবেন ট্রান্সপোর্ট সিকিউরিটি অ্যাডমিনসট্রেশন (টিএসএ), দ্য ন্যাশনাল ফ্লাড ইনস্যুরেন্স প্রোগ্রাম। ট্রাম্প-বিরোধীদের কথায়, এ প্রকল্প যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘ভয়ঙ্কর বিপর্যয়’ ডেকে আনবে। কেন্দ্রীয় প্রশাসনে বিপুলসংখ্যক উদারপন্থি কর্মকর্তাদের ছাঁটাই করে ডানপন্থিদের জায়গা করে দেওয়া হতে পারে।

এ প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রে পূর্বসূরি জো বাইডেনের গৃহীত নীতিও ভেঙে দেবেন। বাইডেনের আমলে রাষ্ট্রের অধঃপতন এবং মারাত্মক বিপর্যয় হয়েছে বলে প্রজেক্ট ২০২৫ এর ‘ম্যান্ডেট ফর লিডারশিপ’ অংশে তুলে ধরেছেন ট্রাম্পের আগের আমলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী দায়িত্ব পালন করা ক্রিস্টোফার মিলার।

আর ট্রাম্প এবার যে কেবল হোয়াইট হাউজে ফিরছেন তাই নয়, তার দল রিপাবলিকান পার্টি কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সেনেটে হারানো আধিপত্য ফিরে পেয়েছে। নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদেও তাদেরই জয়জয়কার হয়েছে।

সেনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার মানে, যেকোনও নীতি বাস্তবায়ন, আইন পাস ও বিচারপতি নিয়োগের কাজ সহজ হবে ট্রাম্পের জন্য। ফলে ট্রাম্প যেকোনও কাজ করতে খুব কমই বাধা পাবেন। সেকারণে নিজের সিদ্ধান্তগুলো সহজেই বাস্তবায়ন করে অত্যন্ত শক্তিশালী প্রেসিডেন্ট হয়ে উঠতে পারেন তিনি।

সবচেয়ে বেশি বিঘ্ন সৃষ্টিকারী বিষয় হয়ে উঠতে পারে ট্রাম্পের সাংবিধানিক ধারা ঢেলে সাজানোর পদক্ষেপ। এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্প সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে কেন্দ্রীভূত করাসহ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলোকে অনেকাংশে ক্ষুন্ন করতে পারেন। বড় বড় টেক কোম্পানিগুলোকে দিতে পারেন সহ-শাসনের ক্ষমতা (কো-গভার্নিং পাওয়ার)।

বিচারবিভাগ, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমগুলোর স্বাধীনতা কেড়ে নিতে পারেন এবং তাদেরকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগাতে পারেন। ট্রাম্প শপথ নেওয়ার আগেই গোপন এক কূটনৈতিক নথি থেকে এমন আভাস পাওয়া গেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে জার্মান রাষ্ট্রদূত এ নিয়ে সতর্কবার্তাও দিয়েছেন।

নির্বাচনি প্রচারণায় জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার বাতিল করার বিতর্কিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী, ‘কেউ মার্কিন ভূমিতে জন্ম নেয়, তিনি দেশটির নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার রাখেন।’ ট্রাম্প এ আইন পরিবর্তন করার ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, প্রথম দিনই তিনি এ অধিকার বাতিল করবেন।

ট্রাম্পের আরও একটি বিতর্কিত প্রতিশ্রুতি ছিল, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় অভিযুক্তদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা। এটিও তিনি তার প্রথম দিনগুলোতেই করবেন বলেছিলেন।

সমালোচকরা বলছেন, ট্রাম্প এ পদক্ষেপ নিলে তা আইন ও বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা কমিয়ে দেবে।

অর্থনৈতিক দিক থেকে ট্রাম্প দেশের জ্বালানি খরচ কমাতে জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন বাড়াতে চান। এর জন্য আরও বেশি জ্বালানি তেল উত্তোলনের পরিকল্পনা আগেই জানিয়েছিলেন তিনি।

পরিবেশবাদীরা বলে এসেছে, ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপ জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট তীব্র করবে। জো বাইডেন এরই মধ্যে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ট্রাম্পের ওই পরিকল্পনা ভেস্তেও দিয়েছেন। কিন্তু ট্রাম্প এখন দায়িত্ব নেওয়ার পর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার চেষ্টা নেবেন তেমন সম্ভাবনা প্রবল।

ট্রাম্প ট্রান্সজেন্ডার নারীদের অধিকারও সীমিত করতে চান। ট্রান্সজেন্ডারদের নারীদের খেলায় অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করাসহ তাদের ওপর বাইডেনের আরোপিত সব নীতি বাতিল করার কথা তিনি বলে এসেছেন।

লিঙ্গ পরিচয় নিশ্চিত করা এবং ট্রান্সজেন্ডারদের চিকিৎসা সহায়তা দিতে বাইডেন সরকারের উদ্যোগ ‘জেন্ডার-অ্যাফার্মিং কেয়ার’ বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তার এ ঘোষণা এরই মধ্যে এলজিবিটিকিউ প্লাস সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ সঞ্চার করেছে।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দেশজুড়ে গর্ভপাতের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের চেষ্টাও চলতে পারে। ডাকযোগে গর্ভপাতের বড়ি সরবরাহ বা বিতরণ করার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। ট্রাম্প কেন্দ্রীয় পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে এবং বিচার বিভাগে পছন্দের বিচারপতি নিয়োগের মধ্য দিয়ে গর্ভপাতের অধিকার ক্ষুণ্ন করতে পারেন।

এই সবকিছুর প্রেক্ষাপটে বলা যায়, ট্রাম্পের ফিরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে বিশাল এক পরিবর্তনের সূচনা, যা কেবল দেশে নয় বিশ্বেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।

২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয় কেবল তার নিজের রাজনৈতিক দক্ষতাই নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে গভীর বিভক্তির প্রতিফলন ঘটিয়েছে। ‘আমেরিকা সর্বাগ্রে’ নীতি নিয়ে ট্রাম্পের ফিরে আসা এবং দেশি বিষয়গুলো সামাল দেওয়ার পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্য নতুন সম্ভাবনার পাশাপাশি চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে।

ট্রাম্পের আগেরবারের শাসনামলে যে বিভেদ ও উত্তেজনা দেখা গিয়েছিল, এবার তা আরও গভীর হওয়ার আশঙ্কা আছে, যার প্রভাব পড়তে পারে ঘরে-বাইরে সবখানে।

বিশ্বচালকের আসনে কেমন হতে পারেন ট্রাম্প?

২০২৪ সালে নভেম্বরে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পরই বিশ্বে অনেকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল।

অবৈধ অভিবাসী বিতাড়ন থেকে শুরু করে সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণ, প্রতিবেশী দেশ কানাডা ও মেক্সিকোসহ চীনের পণ্য রপ্তানিতে নতুন করে উচ্চ হারে শুল্কারোপের হুমকি, জলবায়ু নীতি বাতিলের পরিকল্পনা এবং কানাডা, গ্রিনল্যান্ড ও পানামা খাল জোর করে নিতে চাওয়া নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ট্রাম্পের মন্তব্যই এ উদ্বেগ বা চিন্তার কারণ হয়েছে।

ফলে তার দ্বিতীয় মেয়াদ বিশ্বের জন্য কেমন হতে চলেছে তা এরই মধ্যে কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বৈদেশিক নীতির দিক থেকে ট্রাম্প এবার বিদ্যমান নানা নীতি, যেগুলো এরই মধ্যে ধ্বংসাত্মক এবং ব্যয়বহুল প্রমাণিত হয়েছে, সেগুলোরই আরও বিস্তার ঘটাতে পারেন। এতে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ প্রথমবারের চেয়ে যে কেবল জটিল হবে তাই নয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র, তাও তিনি ঘুরিয়ে দিতে পারেন।

তার ‘আমেরিকা সর্বাগ্রে’ নীতির পুনরুত্থান বিশ্বব্যাপী একটি অস্থির পরিবেশ তৈরি করতে পারে। তার এই নীতিতে বৈশ্বিক জোট এবং সহযোগিতার গণ্ডি সীমিত হয়ে পড়তে পারে এবং বিশ্ব অর্থনীতির ওপরও তা প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতির যেকোনও পরিবর্তন বিশ্ববাজারে বিশাল প্রভাব ফেলে।

ভোটপ্রচারে ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতিতে জোর দিয়ে ট্রাম্প আগামী দিনে বিদেশ থেকে আমদানি করা যাবতীয় পণ্য নিজের দেশে তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন। শুনতে লাভজনক বলে মনে হলেও এতে দু’টি সমস্যা আছে- এক: আমদানি করা যাবতীয় পণ্য তৈরির পরিকাঠামো নির্মাণ এবং দুই: শ্রম আইনের কড়াকড়ি।

উদাহরণ হিসেবে মাস্কের ব্যাটারিচালিত গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থা টেসলার কথা বলা যায়। এর মূল কারখানা চীন থেকে রাতারাতি যুক্তরাষ্ট্রে সরানো সম্ভব নয়। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম আইন অনুযায়ী গাড়ি নির্মাণকারী শ্রমিকদের অনেক বেশি মজুরি দিতে হবে টেসলাকে। ফলে এতদিন কম দামে যে গাড়ি মাস্কের সংস্থা তৈরি করতে পারছিল, ট্রাম্পের ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতি মানতে গিয়ে প্রথমেই তা ধাক্কা খাবে।

ট্রাম্প প্রথাগত সব কিছুকে অগ্রাহ্য করতে সিদ্ধহস্ত। যে কোনওভাবে অর্থবিত্ত কিংবা অর্থনৈতিকভাবে শক্তি-সামর্থ্য অর্জনই তার কাছে সবচেয়ে বড় রাজনীতি বা কূটনীতি। জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি কিংবা সামরিক ও বেসামরিক সব ক্ষেত্রেই ট্রাম্প অগ্রাধিকার দেন অর্থনীতিকে। সেক্ষেত্রেও বিশ্বব্যবস্থাকে অগ্রাহ্য করে তিনি নির্দ্বিধায় অপকৌশলের আশ্রয় নেন।

তাই ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিতভাবে করারোপ কিংবা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ দিয়ে নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করতে এবারও ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ট্রাম্প এরই মধ্যে চীনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ, এমনকি ভারত ও অন্যদের ওপর উচ্চহারে করারোপ কিংবা বিধি-নিষেধ আরোপের হুমকি দিয়েছেন। এতে ক্রমেই এখন অস্থির হয়ে উঠতে শুরু করেছে বিশ্বের বিভিন্ন বাজারব্যবস্থা।

ট্রাম্পের এবারের শাসনকালে বিশ্ববাণিজ্যের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে নবগঠিত ব্রিকস জোটের সদস্যরা এরই মধ্যে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে। ডলারের দাপট রুখতে নতুন মুদ্রা আনার পরিকল্পনা করেছে ব্রিকসভুক্ত ভারত, রাশিয়া, চীন ও ব্রাজ়িলের মত দেশগুলো। এই চেষ্টা প্রতিহত করতে দেশগুলোর পণ্যে ১০০ শতাংশ আমদানি শুল্ক চাপানোর হুমকিও ট্রাম্প দিয়ে রেখেছেন।

পরাশক্তিগত দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে বাধ্য। কারণ চীনের অপ্রতিরোধ্য উত্থান এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের মাথা তুলে দাঁড়ানোকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদরা অশনিসংকেত বলেই মনে করেন। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য রিপাবলিকানদের তুলনায় ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন।

রিপাবলিকান দলীয় হলেও ট্রাম্প মূলত যুদ্ধবাজ নন। তিনি শক্তিশালী অর্থনীতিকেই যুক্তরাষ্ট্রের চালিকাশক্তি বলে মনে করেন, যুদ্ধ কিংবা সংঘাতকে নয়। ট্রাম্প দেশের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের পরিবর্তে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কৌশল প্রয়োগ করে অন্যদের দুর্বল অবস্থানে ঠেলে দিতেই বেশি আগ্রহী।

তিনি তার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য এবার কানাডা, মেক্সিকোর পণ্যে শুল্কারোপ এমনকি ডেনমার্ককে গ্রিনল্যান্ড ছেড়ে দিতে বাধ্য করতে ড্যানিশ পণ্যের ওপরও অত্যন্ত চড়া শুল্কারোপের হুমকি দিয়েছেন। যদিও প্রয়োজনে বল প্রয়োগের সম্ভাবনাও তিনি উড়িয়ে দেননি।

আর চীনের সঙ্গে প্রথম মেয়াদেই শুল্ক যুদ্ধ শুরু করেছিলেন ট্রাম্প। এবার তিনি চীনের বিরুদ্ধে আরও কড়া নীতি নেওয়ার কথাই বলেছেন। তাছাড়া ‘প্রজেক্ট ২০২৫’ অনুযায়ী, চীনকে রুখে দেওয়ারও পরিকল্পনা এবার আছে ট্রাম্পের। তাইওয়ান এবং দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপিন্স ও জাপানের মত মিত্রদের ওপর চীনের খবরদারি ঠোকানোর মধ্য দিয়ে সে চেষ্টা চলতে পারে।

অপরদিকে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি বিশাল। সে ব্যবধান অতি দ্রুত ঘুচাতে তৎপর ট্রাম্প। এর পাশাপাশি ‘এইচওয়ানবি’ ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ভারতের লাখ লাখ মানুষের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।

কারণ নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ট্রাম্প ভিসার সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দিতে পারেন। তাছাড়া রাশিয়াসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশ থেকে সামরিক যুদ্ধ সরঞ্জাম কিংবা ভারি অস্ত্রশস্ত্র কেনার কারণে ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞাও জারি করতে পারেন।

ট্রাম্প গতবছর নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীদের মধ্যে দিন দিন উদ্বেগ বেড়েছে। কারণ ট্রাম্প এবার ক্ষমতায় বসেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসীদের গণহারে বের করে দেওয়ার অভিযান শুরু করবেন বলে আগেই জানিয়েছিলেন। এই অভিযানে যারা বেকায়দায় পড়তে পারেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে।

ট্রাম্পের এবারের আমলে অপরাধে জড়িত অভিবাসী থেকে শুরু করে সেইসব অবৈধ অভিবাসী- যারা বহু বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস এবং কাজ করে আসছেন; এমনকি কোনও অপরাধের ইতিহাস নেই, তাদেরও গ্রেপ্তার এবং বিতাড়িত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অভিবাসনের ওপরও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের কথা ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার কয়েকঘণ্টা আগের ভাষণেই বলেছেন। সুতরাং গোটা বিশ্বজুড়েই এবার ট্রাম্পের এই অভিবাসন এবং ভিসা নীতির ভুক্তভোগী হবে বহু মানুষ।

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিমালাও এবার বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ২০২৪ সালে ট্রাম্প জীবাশ্ম জ্বালানিতে দ্রুত ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের যে কথা বলা হচ্ছে তা অতিরঞ্জিত, এটি ‘আমাদের সমস্যা নয়’। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। এবার আবারও তা করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে তিনি ফিরে এসেছেন।

অন্যদিকে বিশ্ব রাজনীতিতে ট্রাম্পের ফের আগমন নতুন মেরুকরণের সূচনা করতে পারে। তিনি পশ্চিমা সামরিক জোট নেটোতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা পুনর্বিবেচনা করতে পারেন। বিশেষত ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে, যা ইউরোপের দেশগুলোর প্রতিরক্ষানীতিতে পরিবর্তন আনতে পারে।

অপরদিকে ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের ভূমিকা কেমন হবে, তা নিয়ে ইউরোপের দেশগুলো বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। কারণ ট্রাম্প এই যুদ্ধ থামানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তবে রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ আছে। কারণ ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের ‘ঘনিষ্ঠ’। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই অবস্থান নেটোর ঐক্যকে দুর্বল করতে পারে। আর যুদ্ধ বন্ধ করতে ট্রাম্প যদি চান ইউক্রেইন আত্মসমর্পণ করুক, তাহলে গোটা ইউরোপ বিপদে পড়বে।

মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি কমাতে চান ট্রাম্প। ইরান, সৌদি আরব এবং অন্যান্য আরব দেশের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ অঞ্চলগুলোতে মার্কিন সেনাবাহিনীর উপস্থিতি কমলে সেখানে স্থানীয় শক্তিগুলো প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হবে।

তবে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের অভিযান ও আরব বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থান স্পষ্ট নয়। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় পাকাপোক্ত হওয়ার আগেই ইসরায়েল ও গাজার যুদ্ধবিরতি হওয়ার উল্লেখযোগ্য ঘোষণা এসেছে। এ সাফল্যের পেছনে ট্রাম্প টীমের হস্তক্ষেপও ছিল।

কিন্তু ইসরায়েলের যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ট্রাম্পের রয়েছে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব। তিনি ইসরায়েলকে পূর্ণ সমর্থনও দেন, যা তার আগের প্রশাসনেই দেখা গেছে। সেদিক থেকে এবারও উদ্বেগ আছে। ট্রাম্প ইসরায়েলকে সমর্থন দেওয়া অব্যাহত রাখতে পারেন। তার এ অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে জটিল করতে পারে এবং এ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা নস্যাৎ হতে পারে বলে আশঙ্কা আছে।

সর্বোপরি ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে ফেরা চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কসহ দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে প্রভাব ফেলবে। ট্রাম্প কিভাবে তার দ্বিতীয় মেয়াদে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনা করেন এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য কেমন নীতি নেন সেটিই এখন দেখার বিষয়।