গাজার ধ্বংসস্তূপ: অবিস্ফোরিত বোমা সরাতে যাবে এক দশক
গাজায় ইসরায়েলের ফেলা হাজার হাজার বোমা এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে অবিস্ফোরিত অবস্থায় চাপা রয়েছে, যেগুলো অপসারণ করতে প্রায় এক দশক সময় লেগে যেতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা।
গাজায় প্রায় ১৫ মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে একমত হয়েছে হামাস ও ইসরায়েল। চুক্তি অনুযায়ী রোববার সকাল থেকে গাজায় বোমা নিক্ষেপের ইতি ঘটার আশা সবপক্ষের।
একই সময়ে অবশ্য গাজা উপত্যকা পুনর্গঠনের একটা জটিল ও যন্ত্রণাদায়ক যাত্রাও শুরু করতে হবে ফিলিস্তিনিদের। কারণ ইসরায়েলের হামলার মুখে গাজার ১৯ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, ৯০ শতাংশ বাড়িঘর ধ্বংস হয়েছে এবং সেখানকার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা অবকাঠামো পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।
জাতিসংঘের বরাত দিয়ে আল জাজিরা ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আই নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা থেকে চার কোটি ২০ লাখ টনের বেশি ধ্বংসাবশেষ সরাতে হবে। এতে সময় লেগে যেতে পারে ১০ বছর; আর অর্থ লাগবে প্রায় ৭০ কোটি ডলার।
বিভিন্ন দেশে অবিস্ফোরিত বোমা অপসারণের কাজ করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘মাইন অ্যাডভাইজরি গ্রুপ’ (এমএজি)। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (প্রোগ্রাম) গ্রেগ ক্রোদার মনে করেন, “অবিস্ফোরিত এসব বোমা অপসারণ কিংবা নিষ্ক্রিয় করতে প্রায় ১০ বছর সময় লাগবে। খরচ হবে কোটি কোটি ডলার।”
এসব বোমায় হতাহতের ঝুঁকির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “অনেকেই আছেন, যারা যথাযথ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করবেন না।
“তারা বাড়িতে যাবেন; একটি ট্রাক ভাড়া করবেন এবং হাত দিয়েই ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরু করে দেবেন। এসব কাজে অনেক শিশুও হাত লাগাবে, যেটা আরেকটা বড় ভয়ের ব্যাপার।”
এনভায়রনমেন্টাল কোয়ালিটি অথরিটি অব প্যালেস্টাইনের বরাতে আল জাজিরা বলছে, গাজায় অন্তত ৮৫ হাজার টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর মধ্যে অনেক বোমাই ধ্বংসস্তূপের নিচে অবিস্ফোরিত অবস্থায় চাপা পড়ে আছে।
গ্রেগ ক্রোদার মনে করেন, “প্রধান সমস্যা হলে, গাজা পুনর্গঠন করতে অনেক সময় লেগে যাবে। এর মানে হল, সেখানে মৌলিক সেবাগুলো পুনরায় চালু হতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে।
“শত শত তো অবশ্যই, খুব সম্ভবত হাজার হাজার বোমা অবিস্ফোরিত রয়ে গেছে।”
এমন আশঙ্কার ব্যাখ্যায় তিনি ২০০৮ সালের উদাহরণ তুলে ধরেন। বলেন, ওই সময় গাজায় চার সপ্তাহ যুদ্ধ চলে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরবর্তী দুই বছর অবিস্ফোরিত বোমার মাধ্যমে তিন শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটে।
তিনি বলেন, “গাজা ঘনবসতিপূর্ণ একটি শহর, যেখানে ১৫ মাস অনবরত বোমা ফেলা হয়েছে। সম্মুখ লড়াইও চলেছে সেখানে।
“গাজা কতটা দূষিত হয়েছে, সেটা নির্ণয় করা সত্যিই জটিল ব্যাপার। কারণ ভবনগুলো ধসে পড়েছে এবং অবিস্ফোরিত বোমাগুলো কংক্রিটের নিচে চাপা পড়ে আছে।”
কী পরিমাণ বোমা অবিস্ফোরিত থাকতে পারে, সেটির ধারণা দিতে গিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলছেন, “বিস্ফোরিত না হওয়ার ঘটনা সাধারণত শহর অঞ্চলেই বেশি ঘটে। গাজায় সেটা ১০ থেকে ৩০ শতাংশ হতে পারে। তবে এটি মূলত নির্ভর করে বোমার ধরনের ওপর।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বোমা নিষ্ক্রিয় কিংবা অপসারণ করা বেশ জটিল। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতাকে অপরিহার্য বলছেন তারা।
ক্রোদার বলেন, “এই কাজে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করতে হবে। কারণ এতে অনেক ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতি এবং দক্ষ লোকবল প্রয়োজন।
“এছাড়া ইসরায়েলের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে; আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে তহবিলও পেতে হবে।”
গাজার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা পুনর্গঠনেও দীর্ঘ সময় চলে যাবে। সেখানে সেইভ দ্য চিলড্রেনের হয়ে কাজ করা স্বাস্থ্যকর্মী বেকি প্লাট বলছেন, “গাজার এমন চেহারা এর আগে কখনো দেখিনি।
“অল্প সময়ের মধ্যে গাজা কীভাবে পুনর্গঠন করা হবে, তা আমি কল্পনাও করতে পারছি না।”