বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, মাঘ ২ ১৪৩১, ১৫ রজব ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

পদত্যাগপত্রে যা লিখলেন টিউলিপ

 আপডেট: ০৯:৪৭, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

পদত্যাগপত্রে যা লিখলেন টিউলিপ

দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ব্যাপক সমালোচনার মধ্য দিয়ে যাওয়া টিউলিপ সিদ্দিক অবশেষে যুক্তরাজ্যের আর্থিক সেবা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর থেকেই তার পদত্যাগের দাবি উঠছিল। এরমধ্যেই মঙ্গলবার রাতে পদত্যাগ করেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ। তাকে নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকার তদন্তও করেছে। তবে তদন্তে কোনো অনিয়মের প্রমাণ মেলেনি বলে পদত্যাগপত্রে লিখেছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কাছে দেওয়া পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেন, “সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আমার প্রতি যে আস্থা দেখিয়েছেন সেজন্য ধন্যবাদ।

“আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করে দেখার যে আহ্বান জানিয়েছিলাম, তাতে তাৎক্ষণিক সাড়া দেওয়ায় আমি আপনার (স্টারমার) ইনডিপেনডেন্ট এথিকস অ্যাডভাইজর স্যার লাউরি ম্যাগনাসের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার বর্তমান ও অতীতের আর্থিক ও আবাসনসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার সুযোগ দেওয়ার জন্যও আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব।”

পদত্যাগপত্রে টিউলিপ লেখেন, “আপনি (স্টারমার) জানেন যে, বিষয়টি নিয়ে আমার অনুরোধে যে গভীর পর্যালোচনা হয়েছে, সেখানে স্যার লাউরি নিশ্চিত করেছেন মন্ত্রী হিসেবে কোনো বিধি আমি লঙ্ঘন করিনি। যেমনটি তিনি (লাউরি ম্যাগনাস) বলেছেন, আমি আমার সম্পদ ও আবাসন সম্পত্তি নিয়ে কোনো অনিয়ম করেছি, সেরকম কোনো প্রমাণ নেই। অথবা এমন কোনো প্রমাণ নেই যা দিয়ে বোঝায় আমার কোনো সম্পদ আইনগত বা বৈধ উৎসের বাইরে থেকে পাওয়া।

“আমার পারিবারিক সম্পর্কের বিষয়টি উন্মুক্ত। মন্ত্রী হওয়ার সময় আমি আমার বিভিন্ন সম্পর্ক এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের বিষয়গুলো সরকারকে বিস্তারিত জানিয়েছি।”

তিনি বলেন, “বিস্তর আলোচনার পর কর্মকর্তারা আমাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, আমি যেন ঘোষণাপত্রে এটা উল্লেখ করি যে, আমার খালা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। স্বার্থের সংঘাত যেন না ঘটে, সেজন্য বাংলাদেশ সম্পর্কিত বিষয়সমূহ এড়িয়ে চলার পরামর্শও আমাকে দেওয়া হয়েছিল।

“আপনাকে (স্টারমার) নিশ্চিত করতে চাই, আমি এসব পরামর্শ মেনে চলেছি এবং পুরোপুরি স্বচ্ছতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি।”

৪২ বছর বয়সী লেবার পার্টির টানা চারবারের এমপি টিউলিপ লেখেন, “যাহোক, এটা স্পষ্ট যে ব্রিটেনের আর্থিক সেবা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমার দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়াটা সরকারের মনোযোগ নষ্টের কারণ হতে পারে।

“তাই আমি মন্ত্রিত্বের পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে লেবার সরকারের প্রতি আমার আনুগত্য স্পষ্ট এবং সবসময় তা অব্যাহত থাকবে।

“আপনার সরকারের দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ দিতে চাই। পেছন থেকে হলেও যেকোনোভাবে হোক আমি আমার সহযোগিতা চালিয়ে যাব।”

রয়টার্স লিখেছে, টিউলিপকে লেখা স্টারমারের একটি চিঠিও প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

সেখানে স্টারমার লিখেছেন, “আপনার (টিউলিপ) পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার পাশাপাশি আমি এটাও স্পষ্ট করে বলতে চাই, স্বাধীন উপদেষ্টা হিসেবে স্যার লরি ম্যাগনাস আমাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন যে, তিনি মন্ত্রী হিসেবে আপনার বিরুদ্ধে নিয়ম লঙ্ঘন ও আর্থিক অনিয়মের কোনো অভিযোগের ঘটনা পাননি।”

লন্ডনে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট উপহার নেওয়া এবং বাংলাদেশে একটি প্রকল্পে বড় অঙ্কের দুর্নীতিতে তার নাম আসার পাশাপাশি রাজধানীতে প্লট নিতে অনিয়মের অভিযোগও ওঠে টিউলিপের বিরুদ্ধে। এসব খবর আসার পর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে তাকে পদত্যাগের আহ্বানের পাশাপাশি কিংবা প্রধানমন্ত্রীকে তাকে বাদ দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়।

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার মত টিউলিপের বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঘুষ আর অনিয়মের মাধ্যমে পাওয়া বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার তারা অবৈধভাবে অন্য দেশে পাচার করেছেন।

পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলেছে লন্ডনের কয়েকটি বাড়ি, যেগুলো টিউলিপ এবং তার পরিবারের সদস্যদের উপহার দেওয়া হয়েছে কিংবা বিনা পয়সায় থাকতে দেওয়া হয়েছে। আর সেগুলো তাদের দিয়েছেন ধনাঢ্য বাংলাদেশিরা, যাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার যোগ আছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে কিংস ক্রসের একটি ফ্ল্যাট, যেটা ২০১৪ সালে টিউলিপকে উপহার দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ নামের এক ব্যবসায়ী, যিনি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ। এখন ওই ফ্ল্যাটের দাম ৭ লাখ পাউন্ড। ওই ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে টিউলিপ থাকেন অন্য বাসায়।

ব্রিটেনের সিটি মিনিস্টার হিসেবে আর্থিক খাতের দুর্নীতি বন্ধ করা টিউলিপের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। সেখানে টিউলিপের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠতে শুরু করে।

তবে প্রথম থেকেই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন ৪২ বছর বয়সী টিউলিপ। অভিযোগগুলো তদন্ত করতে তিনি এজন্য নিজেকে স্বাধীন তদন্তকারী সংস্থার কাছে সমর্পণ করেন।