লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলে অন্তত ১১ জনের মৃত্যু
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের সর্বগ্রাসী দাবানলে অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আগুনে এ পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি বাড়ি ও স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন লস অ্যাঞ্জেলেসের পরিস্থিতিকে ‘যুদ্ধের দৃশ্য’র সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আরও জোরালো বাতাসের বয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে, ফলে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় দাবানলের পরিস্থিতি সঙ্কটজনক, এমন ইঙ্গিতবাহী ‘রেড ফ্ল্যাগ’ সতর্কতা জারি করা হয়েছে; জানিয়েছে বিবিসি।
কর্মকর্তারা জানান, দাবানলে যাদের মৃত্যু হয়েছে প্রচলিত পদ্ধতিতে তাদের শনাক্ত করা সম্ভব না হলে এ প্রক্রিয়ায় কয়েক সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।
যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যরা মার্কিন গণমাধ্যমকে প্রিয়জন হারানোর পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন।
অ্যান্থনি মিচেল ও তার প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে জাস্টিন দাবানল থেকে বাঁচার জন্য বের হয়ে আসার সময় তাদের আলতাডেনার বাড়িতেই মারা যান, জানিয়েছে তার পরিবার।
হাজিমে হোয়াইট ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, তার ৬৭ বছর বয়সী বাবা মিচেল তাকে কল দিয়ে জানান, “আগুন বাড়ির উঠানে চলে এসেছে।”
অবসরপ্রাপ্ত বিক্রিয় কর্মী ও বিকলাঙ্গ মিচেল তার ছেলে জাস্টিনের সঙ্গে থাকতেন। বিশোর্ধ জাস্টিন একজন প্রতিবন্ধী। মিচেলের আরেক ছেলে জর্ডানও তাদের সঙ্গে থাকেন, কিন্তু ঘটনার সময় তিনি অসুস্থতাজনিত কারণে হাসপাতালে ছিলেন।
ভিক্টর শ-র মৃত্যু হয়েছে দাবানল থেকে নিজের বাড়ি বাঁচাতে গিয়ে।
ভিক্টর শ-র মৃত্যু হয়েছে দাবানল থেকে নিজের বাড়ি বাঁচাতে গিয়ে।
হোয়াইট জানান, পরে তিন খবর পান মিচেল ও জাস্টিনের মৃত্যু হয়েছে। এ খবরে তার কেমন লেগেছে বলতে গিয়ে হোয়াইট বলেন, “এক টন ইট যেন আমার উপরে এসে পড়ল।”
তিনি জানান, মিচেল চার সন্তানের বাবা, ১১ নাতিনাতনির দাদা ও ১০ পুতির প্রপিতামহ।
আলতাডেনার আরেক বাসিন্দা ভিক্টর শ-র মৃত্যু হয়েছে দাবানল থেকে নিজের বাড়ি বাঁচাতে গিয়ে।
মার্কিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক কেটিএলএ জানিয়েছে, ৬৬ বছর বয়সী শ-র মৃতদেহ তার বাড়ির পাশের রাস্তায় পাওয়া যায়, বাগানের গাছে পানি দেওয়ার একটি পাইপ তখনও তার হাতে ধরা ছিল। শ’পরিবার প্রায় ৫৫ বছর ধরে এই বাড়িটিতে বসবাস করে আসছিলেন।
বাড়িটিতে শ-র সঙ্গে তার ছোট বোন শারিও থাকতেন। শারি কেটিএলএকে জানান, মঙ্গলবার রাতে আগুন কাছে চলে আসায় তিনি তার সঙ্গে ভাইকেও নিয়ে বের হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি রাজি হননি ও আগুনের সঙ্গে লড়াই করতে চাইছিলেন।
রডনি নিকারসনের বিশ্বাস ছিল দাবানল ‘চলে যাবে’।
রডনি নিকারসনের বিশ্বাস ছিল দাবানল ‘চলে যাবে’।
আলতাডেনার আরেক বাসিন্দা রডনি নিকারসন নিজ বাড়িতেই মারা যান। তার কন্যার ভাষ্য অনুযায়ী, তারা বাবার বিশ্বাস ছিল দাবানল ‘অতিক্রান্ত হয়ে যাবে’। তারা বাবা ১৯৬৮ সালে বাড়িটি কিনেছিলেন এবং কয়েক দশকে অনেকগুলো দাবানল মোকাবেলার অভিজ্ঞতা তার ছিল।
তার কন্যা কিমিকো নিকারসন কেটিএলএকে বলেন, ‘আগুন চলে যাচ্ছে’ এমনটি অনুভব করে তিনি বাড়িতেই থেকে যান।
শেষবার কথা বলার পর থেকে ৮৩ বছর বয়সী এরলিনে কেলির আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে তার পরিবার লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসকে জানিয়েছে। ইতোমধ্যে ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে যাওয়ায় পরিবারের ধারণা দাবানলে তারও মৃত্যু হয়েছে।
পরিবারের সদস্য ব্রিয়ানা নাভারো জানিয়েছেন, এর আগে কোনো দাবানল তাদের আলতাডেনার বাড়ির কাছে না আসায় তার দাদীর বিশ্বাস ছিল এটিও আসবে না, এ কারণে তিনি বাড়ি ছাড়তে রাজি হননি।
পরে নাভারোর মা সামাজিক মাধ্যমে লস অ্যাঞ্জেলেসের ফায়ার অ্যালার্টের এক পোস্টে দেখেন, কেলির বাড়ির ঠিকানা দিয়ে তারা লিখেছে, আগুনে জ্বলতে থাকা এই বাড়ির ভেতরে একজন আটকা পড়েছেন।