দক্ষিণ কোরিয়ায় উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে ১৭৭
দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৭৭ জন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, জেজু এয়ারের ওই ফ্লাইটে ১৭৫ জন যাত্রী এবং ৬ জন ক্রু ছিলেন। তাদের মধ্যে কেবল দুজন ক্রুকে জীবিত উদ্ধার করতে পেরেছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। উদ্ধার অভিযান এখনো চলছে।
থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে এসে রোববার সকাল ৯টার দিকে (স্থানীয় সময়) দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় উড়োজাহাজটি দুর্ঘটনায় পড়ে।
নেমে আসার সময় পাখির সঙ্গে সংঘর্ষে উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং গিয়ারে জটিলতা তৈরি হয়।চাকা না খোলায় অবতরণের পর বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজটি রানওয়েতে ছেঁচড়ে গিয়ে বিমানবন্দরের দেয়ালে ধাক্কা খায় এবং অগ্নিগোলকে পরিণত হয়।
ফ্লাইট ৭সি২২১৬ এর যাত্রীদের মধ্যে ১৭৩ জনই ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক, বাকি দুজন থাই।
মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রাজধানী সিউল থেকে ২৮৮ কিলোমিটার দূরে। দুর্ঘটনার পর সেখানে সব ধরনের ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
দক্ষিণ কোরিয়ার এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিবিসি লিখেছে, উড়োজাহাজটি বিমানবন্দরে অবতরণের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে পাখির সঙ্গে সংঘর্ষের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। ফলে পাইলট না নেমে আকাশে ভেসে থাকতে বাধ্য হন।
দুই মিনিট পর পাইলট ‘মে ডে’ ঘোষণা করলে (বিপদে পড়ার সংকেত) এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল অবতরণের অনুমতি দেয়। উড়োজাহাজটি উল্টো দিক থেকে রানওয়েতে নেমে এলেও ল্যান্ডিং গিয়ার কাজ না করায় চাকা ছাড়াই সেটি নেমে আসে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, জোড়া ইঞ্জিনের উড়োজাহাজটি চাকা ছাড়াই রানওয়ে দিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত ছেঁচড়ে যায়, তারপর রানওয়ে থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিমানবন্দরের দেয়ালে ধাক্কা খায়।
সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণে উড়োজাহাজটিতে আগুন ধরে যায় এবং এর ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দিকে।
মুয়ানের ফায়ার সার্ভিস প্রধান লি জুং-হিউন বলেন, দুর্ঘটনার পর কেবল লেজের কিছুটা অংশ আস্ত আছে, বাকি অংশ আর চেনার উপায় নেই।
জেজু এয়ার এক বিবৃতিতে বলেছে, “মুয়ান বিমানবন্দরের দুর্ঘটনায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আমরা জেজু এয়ারের পক্ষ থেকে তাদের প্রত্যেকের কাছে মাথা নত করে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
“এই ঘটনায় সাড়া দিয়ে যা যা করতে পারবো তার সবাই করবো আমরা। এই বিপর্যয়ের জন্য আমরা দুঃখিত।”
বিবিসি লিখেছে, ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত জেজু এয়ার দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম শীর্ষ বাজেট এয়ারলাইন। তাদের কোনো উড়োজাহাজ এই প্রথম প্রাণঘাতী দুর্ঘটনায় পড়ল।
এমন এক সময়ে এই দুর্ঘটনা ঘটল, যখন দক্ষিণ কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়া ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট চোই সুং-মককে দায়িত্ব নেওয়ার দুই দিনের মাথায় এই সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
তার কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন এবং জরুরি ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন।