আসাদের ওপর চাপ বাড়িয়ে হামা শহরের কাছে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা
সিরিয়ার আলেপ্পো শহর।
সিরিয়ার সরকারি বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে অগ্রসর হতে থাকা বিদ্রোহী বাহিনীগুলো প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ ও তার মিত্রদের ওপর চাপ বাড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর হামার কাছাকাছি চলে এসেছে, বিদ্রোহীরা নিজেরা ও সিরিয়ার যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী একটি গোষ্ঠী একথা জানিয়েছে।
বিদ্রোহীরা গত সপ্তাহে হঠাৎ করে আলেপ্পো শহর দখল করে প্রেসিডেন্ট আসাদকে কাঁপিয়ে দেয়।
বিদ্রোহীরা ও ব্রিটিশভিত্তিক পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, বিদ্রোহীরা হামা শহরের কয়েক মাইল উত্তরে মার শাহুরসহ কয়েকটি গ্রাম দখল করে নিয়েছে। সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম জানিয়েছে, ওই এলাকায় অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানো হচ্ছে।
২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় থেকেই হামা শহরটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে। এই শহরে বিদ্রোহীরা হামলা চালালে তা আসাদের ওপর আরও চাপ বাড়াবে। তবে এই পুনরুজ্জীবিত বিদ্রোহ দমন করতে আসাদের রুশ ও ইরানি মিত্ররা তাকে সহায়তা করতে ছুটে আসছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দামেস্ক যদি বলে তাহলে তেহরান সিরিয়ায় সেনা পাঠানোর কথা বিবেচনা করবে।
আরআইএ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সিরিয়ায় ‘সন্ত্রাসী আগ্রাসন’ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইরাকের প্রেসিডেন্ট শিয়া আল-সুদানি বলেছেন, সিরিয়ায় বাগদাদ ‘একজন নিছক দর্শক’ হয়ে থাকবে না। তিনি সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রার জন্য দেশটির সরকারি বাহিনীর ওপর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলাকে দায় দিয়েছেন, জানিয়েছে তার দপ্তর।
আসাদের সমস্যাকে আরও জটিল করে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি নেতৃত্বাধীন জোটের যোদ্ধারা সিরিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চলে সরকারি বাহিনীগুলোর সঙ্গে লড়াই শুরু করেছে। উভয়পক্ষই জানিয়েছে, এতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ রুট বরাবর একটি নতুন যুদ্ধক্ষেত্রের সূচনা হয়েছে।
গত সপ্তাহে বিদ্রোহীরা আলেপ্পো দখল করে নিয়েছে। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের আগে এটি ছিল দেশটির সবচেয়ে বড় শহর। কয়েক বছরের মধ্যে এটি বিদ্রোহীদের সবচেয়ে বড় আক্রমণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের মধ্যে বিদ্রোহীদের দখলে যাওয়া দেশের বেশিরভাগ অংশ পুনরুদ্ধার করে আসাদ বাহিনী। এক্ষেত্রে রাশিয়ার বিমান শক্তি এবং ইরানের সামরিক সহায়তা ও তাদের সমর্থিত আঞ্চলিক শিয়া গোষ্ঠীগুলোর সমর্থন বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে।
এখন রাশিয়া ইউক্রেইন যুদ্ধের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। আর সিরিয়ায় লড়াইরত ইরান সমর্থিত বাহিনীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হিজবুল্লাহ গত তিন মাস ধরে ইসরায়েলের অনবরত আক্রমণে প্রায় নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে।
সোমবার ইরান সমর্থিত শত শত ইরাকি মিলিশিয়া যোদ্ধা সিরিয়ার সরকারি বাহিনীকে সহায়তা দিতে দেশটিতে প্রবেশ করেছে। কিন্তু হিজবুল্লাহ এখন সিরিয়ার কোনো বাহিনী পাঠানোর পরিকল্পনা করেনি।
বিদ্রোহীদের একটি সূত্র রয়টার্সকে বলেছে, হামার কাছে তারা যে বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করছে তাদের মধ্যে ইরানের সমর্থিত মিলিশিয়া যোদ্ধারাও আছেন।
গত কয়েকদিনে রাশিয়া ও সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলো বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে হামলা জোরদার করেছে।