উত্তর প্রদেশে মসজিদে ভূমি জরিপ নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত ৪
ভারতের উত্তর প্রদেশের সাম্ভাল শহরে একটি মসজিদের ভূমি জরিপ নিয়ে সহিংসতায় চারজনের প্রাণহানির পর সেখানে ইন্টারনেট পরিষেবা ও স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এনডিটিভি লিখেছে, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী রোববার সকালে মুঘল আমলের শাহী জামে মসজিদে জরিপ চালাতে গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে।
মসজিদটি একটি হিন্দু মন্দিরের জায়গায় নির্মিত হয়েছিল বলে দাবি করা হলে আইনি লড়াইয়ের সূচনা হয়। পরে আদালত ওই জামে মসজিদের ভূমি জরিপের নির্দেশ দেয়।
জরিপের প্রতিবাদকারীরা কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছোড়ে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিপেটার পাশাপাশি টিয়ার শেল ব্যবহার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় জনা বিশেক পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছে। এক কনস্টেবল মাথায় আঘাত পেয়েছেন, যার অবস্থা সংকটাপন্ন বলা হচ্ছে।
এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সহিংসতার ঘটনায় কঠোর জাতীয় নিরাপত্তা আইনে দুই নারীসহ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাজেন্দ্র পেনসিয়া পিটিআইকে বলেছেন, “দুইজনের মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট, দেশি পিস্তলের গুলিতে তারা মারা গেছে। তৃতীয় ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্তের পর বলা যাবে।”
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাম্ভাল মহকুমায় ২৪ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সোমবার দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।
পাশাপাশি সাম্ভালে অনুমতি ছাড়া বহিরাগত, সামাজিক সংগঠন বা জনপ্রতিনিধির প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
বিতর্কের সূচনা যেভাবে
হরিহর মন্দিরের জায়গায় জামে মসজিদ নির্মিত হয়েছে- এমন এক দাবির বিষয়ে শুনানি নিয়ে আদালত সেখানে ভূমি জরিপের আদেশ দিয়েছিল। সে অনুযায়ী গেল মঙ্গলবার সেখানে প্রশাসনের তরফে জরিপ চালাতে গেলে উত্তেজনা দেখা দেয়।
কর্মকর্তারা বলছেন, মঙ্গলবার জরিপ কাজ শেষ করা যায়নি। সে কারণে জোহরের নামাজের কথা মাথায় রেখে রোববার সকালে বাকি কাজের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
হিন্দু পক্ষের একজন আইনজীবী দাবি করেছেন, একসময় মন্দির থাকলেও তা ১৫২৯ সালে ‘বিনাশ করেন’ মুঘল সম্রাট বাবর। তাদের ভাষ্য, ‘ঐতিহাসিক সত্য’ উন্মোচনের জন্য এই জরিপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
অন্যদিকে একে উসকানি হিসেবে দেখছেন সমালোচনাকারীরা। তারা বলছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ ১৯৯১ সালের উপাসনাস্থল আইন অনুযায়ী ধর্মীয় স্থানের পবিত্রতা লঙ্ঘনের শামিল।
এনডিটিভি লিখেছে, সহিংসতা ঘটলেও পরিকল্পনা অনুযায়ী ভূমি জরিপ শেষ করেছেন কর্মকর্তারা।
মামলার আবেদনকারী আইনজীবী বিষ্ণু শঙ্কর জৈন বলেন, জরিপ দল সেখানে বিস্তারিত নিরীক্ষা চালিয়েছে। তারা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ভিডিও ধারণ ও ছবি তুলেছে। জরিপ প্রতিবেদন জমার জন্য আগামী ২৯ নভেম্বর দিন ঠিক করা আছে।
বিষ্ণু ও তার বাবা হরি শঙ্কর জৈন এর আগে বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ-কাশী বিশ্বনাথ মন্দির বিতর্কসহ উপাসনালয় সংশ্লিষ্ট বহু মামলায় হিন্দু পক্ষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
সমাজবাদী পার্টির (এসপি) প্রধান অখিলেশ যাদব এক্স পোস্টে লিখেছেন, সুপ্রিম কোর্টের উচিত ‘জরিপের নাম করে উত্তেজনা ছড়ানোর ষড়যন্ত্রের’ বিষয়ে অবিলম্বে নজর দেওয়া।
“সামাজিক সম্প্রীতি বিঘ্নিত করার লক্ষ্যে যারা স্লোগান দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে শান্তি ও সম্প্রীতি বিনষ্টের মামলা হওয়া উচিত এবং বার অ্যাসোসিয়েশনেরও উচিত তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। উত্তরপ্রদেশ সরকার ও প্রশাসনের কাছে আগেও কোনো আশা ছিল না, এখনও নেই।”
উত্তর প্রদেশ কংগ্রেসের প্রধান অজয় রায় বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে রাজ্যে ‘দিন দিন সহিংসতার ঘটনা বাড়ছেই’।
তার পাল্টায় বিজেপি বলছে, যারা বিচারিক আদেশের সঙ্গে একমত নয়, তাদের উচিৎ আইনের আশ্রয় নেওয়া।
রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলটির মুখপাত্র নলিন কোহলি বলেছেন, “আইন ভাঙার অধিকার কারো নেই। আদালত কোনো আদেশ দিলে তা কার্যকর করা হবে। যারা আদেশ সংশোধন করতে চান- তাদের জন্য বিচারিক প্রক্রিয়া চালু আছে।”