হামাসকে ‘বের করে দেওয়ার জন্য’ দোহাকে চাপ যুক্তরাষ্ট্রের
গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি ও একটি জিম্মি চুক্তির সর্বশেষ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের দোহা দপ্তর বন্ধ করে দেওয়ার জন্য কাতারকে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র।
দোহায় হামাসের উপস্থিতি আর গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছে ওয়াংশিংটন; শুক্রবার রয়টার্সকে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের একজন ঊধ্র্বতন কর্মকর্তা।
যুক্তরাষ্ট্র ও মিশরের পাশাপাশি পারস্য উপসাগরীয় ক্ষুদ্র রাষ্ট্র কাতার গাজায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে বিরতির ব্যবস্থা করার জন্য চলমান আলোচনায় বড় ধরনের ভূমিকা পালন করছে। তবে এ আলোচনা এখন পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েই আছে। অক্টোবরের মাঝামাঝি শুরু হওয়া আলোচনাও ব্যর্থ হয়েছে, হামাস স্বল্প মেয়াদি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, “জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার জন্য প্রস্তাবগুলো বারবার প্রত্যাখ্যান করার পর এর (হামাসের) নেতাদের যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অংশীদার (দেশের) রাজধানীতে আর স্বাগত জানানো উচিত নয়। কয়েক সপ্তাহ আগে হামাস আরেকটি জিম্মি মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর আমরা এটি কাতারকে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছি।”
প্রায় ১০ দিন আগে কাতার যুক্তরাষ্ট্রের এসব দাবি হামাসের নেতাদের জানিয়ে দিয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা দাবি করেছেন। হামাসের রাজনৈতিক দপ্তর কবে বন্ধ করতে হবে এই নিয়ে ওয়াশিংটন কাতারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল আর তারা দোহাকে বলেছে, এখনই সেই সময়।
হামাস নেতাদের তাদের দেশ আর স্বাগত জানাবে না, কাতার এমন কোনো কথা তাদের বলেনি বলে দাবি করেছেন গোষ্ঠীটির তিন নেতা। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রও এই নিয়ে মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
কাতার হামাস নেতাদের দেশটি ছেড়ে যাওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে কি না, তা পরিষ্কার হয়নি।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলের আক্রমণ বন্ধ করার চেষ্টায় শেষ উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্প দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচতি হয়েছেন। এতে শেষ কয়েক সপ্তাহের জন্য হোয়াইট হাউজে থাকা বাইডেনের উদ্দেশ্যসাধনের শক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।
আগের যুদ্ধবিরতি আলোচনার পর্বগুলোতে মে মাসে বাইডেনের দেওয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তারের একটি সংস্করণ হামাস মেনেও নিয়েছিল, কিন্তু এরপরও গাজায় ভবিষ্যৎ সামরিক উপস্থিতি নিয়ে ইসরায়েল নতুন কিছু দাবি তোলে যা নিয়ে মতবিরোধে ওই চুক্তি বাধাগ্রস্ত হয়।
এই আলোচনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠাভাবে জড়িত একটি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, হামাস সেই সময় অনুভব করে ইসরায়েল একটি চুক্তির ‘শেষ মুহূর্তে’ গোল পোস্ট সরিয়ে নিয়েছে। এতে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে এই ভেবে যে, তারা কোনো ছাড় দিলে ইসরায়েল আরও নতুন নতুন দাবি তুলবে।
গত বছরের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার নভেম্বরে প্রথম দোহায় আলোচনার মাধ্যমে দুই পক্ষের মধ্যে সাত দিনব্যাপী একটি যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। ওই সময় হামাসের বন্দি কয়েক ডজন জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলে বন্দি কয়েকশ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তখন গাজায় মানবিক ত্রাণের সরবরাহও বেড়েছিল। কিন্তু দ্রুতই দুই পক্ষের মধ্যে ফের যুদ্ধ বেঁধে যায় আর তারপর থেকে কোনো বিরতি ছাড়াই এখনো চলছে।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজায় এ পর্যন্ত ৪৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আর ফিলিস্তিনি ছিটমহলটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং সেখানে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
কাতার একটি প্রভাবশালী পারস্য উপসাগরীয় দেশ। নেটো সামরিক জোটের বাইরে থাকা এই দেশটিকে ওয়াশিংটন গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাতারের একটি চুক্তির অংশ হিসেবে দেশটি হামাসের রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয় দিয়েছিল।