ব্রেন টিউমার থেকে বাঁচার উপায়

মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধিই হতে পারে প্রাণঘাতী ব্রেন টিউমারের কারণ
মানবদেহের সবচেয়ে জটিল ও বিস্ময়কর অঙ্গ মস্তিষ্ক—যা আমাদের শরীরের সব শারীরিক ও মানসিক কার্যকলাপের নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র। প্রায় ১,৩৫০ গ্রাম ওজনের এই অঙ্গটি যেমন আমাদের চিন্তা, আবেগ ও আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে, তেমনি শরীরের প্রতিটি নড়াচড়ারও মূল দায়িত্ব তার।
এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে দেখা দিতে পারে একটি ভয়াবহ সমস্যা—ব্রেন টিউমার। শিশুদের মধ্যে এটি ক্যানসারের দ্বিতীয় প্রধান কারণ, তবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও এই রোগ হয়ে থাকে।
টিউমারের কারণ
ব্রেন টিউমারের নির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে বংশগত জিনগত ত্রুটি, পরিবেশ দূষণ এবং কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত বিকিরণ—এসব বিষয় রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
টিউমারের ধরন
মস্তিষ্কে কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি থেকে চাকা বা টিউমার তৈরি হয়। সাধারণত দুই ধরনের টিউমার হয়ে থাকে—
১. বিনাইন টিউমার (নির্দোষ): ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়, শরীরের অন্য অংশে ছড়ায় না।
২. ম্যালিগন্যান্ট টিউমার (ক্যানসার): দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং মস্তিষ্কের বাইরেও ছড়াতে পারে।
উপসর্গ ও রোগ নির্ণয়
প্রথম দিকে দেখা দিতে পারে মাথাব্যথা, বমিভাব, খিঁচুনি, আচরণগত পরিবর্তন, শরীরের দুর্বলতা, কথাবার্তায় অস্বাভাবিকতা, স্মৃতিভ্রষ্টতা ইত্যাদি।
এই ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত সঠিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিটি স্ক্যান, এমআরআই, এমআরএস, পিইটি স্ক্যান এবং বায়োপসির মাধ্যমে রোগ সহজে শনাক্ত করা যায়।
চিকিৎসা
টিউমারের ধরন ও রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ হয়। সাধারণত ব্যবহার করা হয়—
অস্ত্রোপচার
রেডিওথেরাপি
কেমোথেরাপি
ইমিউনোথেরাপি
বর্তমানে বাংলাদেশেও রেডিওসার্জারির মতো আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার বাড়ছে, যা কম সময়ে, নির্ভুলভাবে টিউমার ধ্বংসে সক্ষম।
প্রতিরোধে করণীয়
ব্রেন টিউমার থেকে রক্ষা পেতে চাইলে সচেতন জীবনযাপন জরুরি। যেমন—
ঝুঁকিপূর্ণ রেডিয়েশন বা রাসায়নিক পদার্থ এড়িয়ে চলা
মোবাইল ফোনে দীর্ঘক্ষণ কথা না বলা
শিশুদের মোবাইল আসক্তি থেকে দূরে রাখা
রাতে মোবাইল ফোন মাথার পাশে না রাখা
স্মার্টফোনের অতিরিক্ত বিকিরণ মস্তিষ্কের ক্ষতি করতে পারে, তাই যত কম ব্যবহার করা যায়, ততই ভালো।
ডা. কাজী মনজুর কাদের
বিভাগীয় প্রধান,
ক্লিনিক্যাল অনকোলজি অ্যান্ড মেডিকেল ফিজিকস বিভাগ,
ডেলটা হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা