বৃহস্পতিবার ০৩ এপ্রিল ২০২৫, চৈত্র ১৯ ১৪৩১, ০৪ শাওয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

রোজায় পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) রোধে করণীয়

 প্রকাশিত: ০৮:৪৯, ২২ মার্চ ২০২৫

রোজায় পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) রোধে করণীয়

পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন)

রমজান মাসে দীর্ঘ সময় না খেয়ে ও না পান করে থাকতে হয়, যা শরীরে পানিশূন্যতার (ডিহাইড্রেশন) কারণ হতে পারে। বিশেষ করে গরমের দিনে রোজা রাখলে শরীর থেকে দ্রুত পানি বের হয়ে যায়, ফলে ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, এমনকি গুরুতর শারীরিক সমস্যা হতে পারে। তাই রোজায় পানিশূন্যতা রোধে কিছু সতর্কতা ও করণীয় বিষয়গুলো অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

১. সাহরি ও ইফতারে পর্যাপ্ত পানি পান করা
সাহরির সময় অন্তত ২-৩ গ্লাস পানি পান করা উচিত। ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত মোট ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করা ভালো, তবে একবারে বেশি না খেয়ে ধীরে ধীরে ও ভাগ করে পান করা উচিত। অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি একবারে বেশি পান করলে পেটের সমস্যা হতে পারে, তাই স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি পান করাই শ্রেয়।

২. হাইড্রেটিং খাবার গ্রহণ করা
যেসব খাবারে প্রচুর পানি রয়েছে, যেমন শসা, তরমুজ, আঙুর, কমলা ও নারকেল পানি, সেগুলো খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। দই, স্যুপ ও চিনি ছাড়া ফলের জুস পান করাও উপকারী। ইফতারের সময় ডাবের পানি বা লেবু পানি পান করলে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা হয়।

৩. ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি করে এমন খাবার এড়িয়ে চলা
ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়, যেমন চা, কফি ও সোডা বেশি পান করলে শরীর দ্রুত পানি হারায়, তাই এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। অতিরিক্ত লবণ ও মসলাযুক্ত খাবার, বিশেষ করে ঝাল, ভাজাপোড়া ও লবণাক্ত খাবার শরীর থেকে পানি বের করে দেয়, তাই এসব খাবার কম খাওয়া ভালো। সাহরিতে খুব বেশি মিষ্টি খাবার খাওয়া উচিত নয়, কারণ চিনি শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করতে পারে।

৪. সঠিক খাদ্য পরিকল্পনা করা
সাহরিতে জটিল কার্বোহাইড্রেট যেমন ওটস, লাল চাল ও রুটি খাওয়া ভালো, পাশাপাশি প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, দই ও বাদাম এবং পানিসমৃদ্ধ খাবার রাখা উচিত। ইফতারে খেজুর, পানি বা শরবত দিয়ে শুরু করে তারপর প্রোটিন ও শাকসবজি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যকর। সারাদিন পানিশূন্যতা এড়াতে ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত।

৫. অতিরিক্ত পরিশ্রম এড়িয়ে চলা
গরমের মধ্যে অতিরিক্ত হাঁটা বা ব্যায়াম করলে শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যেতে পারে, তাই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। দুপুরের দিকে রোদে বের হওয়া এড়িয়ে চলা এবং ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার চেষ্টা করা উচিত। যদি ব্যায়াম করতে হয়, তবে হালকা ব্যায়াম ইফতারের পর করা ভালো।

৬. গরমের দিনে শরীর ঠান্ডা রাখা
যতটা সম্ভব ঠান্ডা পরিবেশে থাকার চেষ্টা করা উচিত। শরীর ঠান্ডা রাখতে কুসুম গরম পানিতে গোসল করা উপকারী হতে পারে। ঘেমে গেলে সঙ্গে সঙ্গে শরীর মুছে ফেলা এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা প্রয়োজন।

রমজানে সুস্থ থাকতে হলে শরীরের পানির ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরিকল্পিত খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত পানি পান ও শরীরের যত্ন নিলে পানিশূন্যতা সহজেই এড়িয়ে চলা সম্ভব। যদি কখনো পানিশূন্যতার লক্ষণ (মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ক্লান্তি, প্রস্রাব কমে যাওয়া) দেখা দেয়, তবে দ্রুত ব্যবস্থা নিন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।