বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ফাল্গুন ২৮ ১৪৩১, ১২ রমজান ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ বাংলাদেশ ও চাদ: আইকিউএয়ার

 প্রকাশিত: ১৭:০৭, ১১ মার্চ ২০২৫

২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ বাংলাদেশ ও চাদ: আইকিউএয়ার

বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ২০২৪ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষে স্থান পেয়েছে।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ু মান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের তথ্য অনুসারে, সে বছর বাংলাদেশের গড় বায়ু দূষণের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউএইচওর নির্দেশিত মাত্রার চেয়ে ১৫ গুণ বেশি ছিল।

রয়টার্স লিখেছে, বৈশ্বিক দূষণ নিয়ে করা এ তালিকায় বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষ স্থানে রয়েছে আফ্রিকার দেশ চাদ। উদ্বেগজনক উচ্চ দূষণের দেশের তালিকায় ভারত, পাকিস্তান, কঙ্গোও রয়েছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত আইকিউএয়ারের তথ্য বলছে, গতবছর মাত্র সাতটি দেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর বাতাসের মানদণ্ড পূরণ করেছে। দেশগুলো হল- অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, বাহামা, বার্বাডোস, গ্রেনাডা, এস্তোনিয়া ও আইসল্যান্ড।

যুক্তরাষ্ট্র তার বৈশ্বিক পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার পর বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলে গবেষকরা সতর্ক করেছেন।

রয়টার্স লিখেছে, বিশ্বব্যাপী বায়ুর মান নিয়ে একটি অস্পষ্টতা রয়েছে। বিশেষ করে এশিয়া এবং আফ্রিকায়। উন্নয়নশীল অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও কনস্যুলেট ভবনে স্থাপিত বায়ু মান পর্যবেক্ষণ সেন্সরের উপর নির্ভর করত।

তবে বাজেট সংকটের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর সম্প্রতি এ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। গত সপ্তাহে সরকারি বায়ু মান পর্যবেক্ষণ ওয়েবসাইট থেকে ১৭ বছরের বেশি সময়ের তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে, যার মধ্যে চাদের তথ্যও ছিল।

আইকিউএয়ারের বায়ু মানবিজ্ঞান ব্যবস্থাপক ক্রিস্টি চেস্টার-শ্রোয়েডার বলেন, “বেশিরভাগ দেশের কিছু বিকল্প তথ্যসূত্র থাকলেও, আফ্রিকায় এর বড় প্রভাবে পড়বে। কারণ অনেক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই ওয়েবসাইটের তথ্যই একমাত্র বাতাসের মান পর্যবেক্ষণের উৎস ছিল।”

তথ্য-সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতার কারণে ২০২৩ সালের তালিকা থেকে চাদকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। তবে ২০২২ সালে দেশটিকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, যেখানে সাহারা মরুভূমির ধুলো ও অনিয়ন্ত্রিত ফসল পোড়ানো অন্যতম প্রধান কারণ ছিল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, পিএম২.৫-এর গড় বার্ষিক মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়।

সেখানে গত বছর চাদে ক্ষুদ্র ও বিপজ্জনক বায়ুবাহিত কণার গড় মাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৯১.৮ মাইক্রোগ্রাম, যা ২০২২ সালের তুলনায় সামান্য বেশি।

চাদ, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও কঙ্গোর পরেই তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে পিএম২.৫-এর গড় মাত্রা আগের বছরের তুলনায় ৭ শতাংশ কমে ৫০.৬ মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটারে নামলেও, বিশ্বের ২০টি সবচেয়ে দূষিত শহরের মধ্যে ১২টিই ভারতের।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শিল্পাঞ্চলীয় শহর বিরনিহাট তালিকার শীর্ষে রয়েছে, যেখানে পিএম২.৫-এর গড় মাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১২৮ মাইক্রোগ্রাম।

চেস্টার-শ্রোয়েডার সতর্ক করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বায়ু দূষণ বাড়িয়ে তুলছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকায় আরও ভয়াবহ ও দীর্ঘস্থায়ী বনাঞ্চলীয় দাবানল দেখা দিয়েছে, যা বায়ু দূষণকে তীব্র করছে।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউটের (ইপিআইসি) ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম-এর পরিচালক ক্রিস্টা হসেনকফ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় অন্তত ৩৪টি দেশ দূষণের নির্ভরযোগ্য তথ্য থেকে বঞ্চিত হবে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর যেসব শহরে বাতাসের মান নজরদারি করতো সেখানে সম্ভাব্য আয়ুষ্কাল বেড়েছে এবং তাদের কূটনীতিকদের দেওয়া ঝুঁকিভাতার খরচ কমেছে। তার মানে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজেদের স্বার্থেই বাতাসের মান নজরদারির কাজটি করতো।

এখন যুক্তরাষ্ট্রের পরপরাষ্ট্র দপ্তর তাদের একই কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ায় হসেনকফ মনে করছেন, এটি বিশ্বব্যাপী বায়ু মান পর্যবেক্ষণ কার্যক্রমের জন্য একটি ‘বড় ধাক্কা’।

আইকিউএয়ার জানায়, শুধুমাত্র সাতটি দেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। দেশগুলো হলো—অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, বাহামা, বার্বাডোস, গ্রেনাডা, এস্তোনিয়া ও আইসল্যান্ড।