মঙ্গলবার ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, পৌষ ২৪ ১৪৩১, ০৭ রজব ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ভিড় বাড়ছে শিশু হাসপাতালে, ঠান্ডা বাতাস-ধুলোবালি এড়ানোর পরামর্শ

 প্রকাশিত: ১১:০৪, ৫ জানুয়ারি ২০২৫

ভিড় বাড়ছে শিশু হাসপাতালে, ঠান্ডা বাতাস-ধুলোবালি এড়ানোর পরামর্শ

নয় বছরের শিশু রুবেলের চার-পাঁচ দিন ধরে ঠান্ডা-কাশি, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শ্বাসকষ্ট; শনিবার মা হালিমা আক্তার তাকে নিয়ে যান বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে।

টিকেট কাউন্টারের সামনে কথা হল মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা হালিমা আক্তারের সঙ্গে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বললেন, “ছেলেটা সাত-সকালে স্কুলে যায়, তখন ঠান্ডা বাতাস কানে লাগে। এজন্য ঠান্ডা লেগে গেছে। কানে টুপিও পরতে চায় না।”

হাসপাতালটিতে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন বনশ্রীর শায়লা রহমান। তার আড়াই বছরের মেয়ে লাবনী তিন দিন ধরে ভুগছে ঠান্ডা-জ্বরে।

শায়লা বলেন, “ঠান্ডায় ওর দুটো নাকই বন্ধ হয়ে আছে। ১০০/১০১ ডিগ্রি এমন জ্বরও আছে। খাওয়া-দাওয়া করছে না একদম, সারা দিন কান্নাকাটি করে।”

রুবেল ও লাবনীর মত অনেক শিশুকেই শনিবার দেখা গেল শিশু হাসপাতাল ইনস্টিটিউটে। বেশির ভাগই এসেছে ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে।

এসব শিশুর অভিভাবকরা বলছেন, শীতের শুরু থেকেই তাদের ঠান্ডাজনিত সমস্যা কমবেশি লেগেই আছে। তিন-চার দিন ধরে ঢাকায় শীত জেঁকে বসায় সেই সমস্যা আরও বেড়েছে।

এমন অবস্থায় শীতের সময়টাতে শিশুদের সুস্থ রাখতে ঠান্ডা বাতাস ও ধুলোবালি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন হাসপাতালটির চিকিৎসকরা। বাইরে যেতে মাথা ঢেকে রাখার পাশাপাশি মাস্ক পরার কথা বলছেন তারা।

শনিবার শিশু হাসপাতালে দুই বছরের সন্তানকে নিয়ে এসেছিলেন মালিহা কেয়া, থাকেন পুরান ঢাকায়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বললেন, “বাচ্চাটার অনেক ঠান্ডা লাগছে, কোনোভাবেই সারছে না। ডাক্তার দেখাইলাম। রক্ত পরীক্ষা, বুকের এক্সরে দিছে, দেখি রিপোর্টে কী আসে।”

শিশু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে শিশুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন টিপু আহমেদ। এক সপ্তাহ ধরে তার সন্তানের ঠান্ডা ও কাশি হওয়ার কথা বললেন তিনি।

“হাঁচি, কাশি চলতেই আছে। বুকে গড়গড় শব্দ হয় খালি। ভাবছিলাম আস্তে আস্তে হয়ত ঠিক হয়ে যাবে, না পেরে হাসপাতালে নিয়ে আসলাম। নিউমোনিয়া হয়ে গেছে কি না, চিন্তা হচ্ছে। দেখি ডাক্তার কী বলে।”

বছরের প্রথম দিন থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশে জেঁকে বসেছে শীত। ঘনকুয়াশার সঙ্গে ঠান্ডা বাতাসে জবুথবু অবস্থা। বিভিন্ন জেলায় চলছে শৈত্যপ্রবাহ।

তবে ঢাকায় তিন দিন পর শনিবার কুয়াশার চাদর সরিয়ে সূর্যের দেখা মিলেছে। এদিন রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী কয়েকদিন শীতের অনুভূতি কমে আসতে পারে। তবে শীত থাকবে মাসজুড়েই।

নতুন বছরের শুরুতে তীব্র শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বায়ুদূষণের মাত্রাও। আন্তর্জাতিক বায়ুমান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী এই শীতে ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর থেকে ঝুঁকিপূর্ণ’ পর্যায়ে থাকছে।

শনিবার বিকাল ৪টায় ঢাকার বাতাসের একিউআই ছিল ১৮২; এ মানকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দৈনিক বায়ুমান সূচক অনুযায়ী, গত কয়েকদিন ঢাকার বাতাস ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ ছিল।

ধুলোবালি আর শীতে শিশুরা ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগলেও অনেকে আবার ঘরোয়াভাবেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

মিরপুরের ১২ নম্বর এলাকার শাকিল আহমেদ বলেন, শীতের শুরুতেই তার দুই ছেলের ঠান্ডাসর্দি লেগে যায়। মাঝে বিরতি দিয়ে আবার শুরু হয়েছে।

“সবসময়ই শীত আসলে ওদের ঠান্ডা লাগে। নিয়মিত নেবুলাইজিং করাচ্ছি, গরম পানি খাওয়াচ্ছি, যাতে বাতাস না লাগে ওই রকমভাবে বাইরে বের হতে দিচ্ছি। এমনি ঠিক হয়ে যাবে, তাই আর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাইনি।”

শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মাহবুবুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হাসপাতালটিতে মোট রোগীর সংখ্যা কমলেও বর্তমানে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগী। গত ডিসেম্বর থেকেই এমন রোগী আসছেন বলে জানান তিনি।

শীতের রোগবালাই থেকে সুরক্ষার ব্যাপারে এই চিকিৎসক বলেন, “ঠান্ডার সময় তো ঠান্ডা লাগবেই। শীতের সময় ধুলাবালি উড়ে বেশি। ধুলা আর ঠান্ডা মিলে শ্বাসকষ্ট উঠে যায়।

“ছোট শিশুদের বাইরে বের করা যাবে না। বের হলেও মাথা ঢেকে দিতে হবে, মাস্ক পরবে। ঠান্ডা কাটিয়ে নিয়ে নরমাল পানি খাওয়াতে হবে, আর উষ্ণ পানিতে গোসল করাতে হবে।”