রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, পৌষ ৮ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে মাদকের সচেতনতা ছড়িয়ে দিল ঢাকা আহছানিয়া মিশন

 আপডেট: ১৬:১৯, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে মাদকের সচেতনতা ছড়িয়ে দিল ঢাকা আহছানিয়া মিশন

যশোরের পুলিশ লাইন মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আজকের (রবিবার) সকালটা ছিল একটু অন্যরকম। স্কুলটির অডিটরিয়ামে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাদকের ভয়াবহতা নিয়ে এবং এ থেকে বেঁচে থাকার কৌশলসহ নানা বিষয়ের মননশীল আলোচনার আয়োজন ছিল।

ঢাকা আহছানিয়া মিশন ট্রিটমেন্ট অ্যান্ডি রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার যশোরের স্বাস্থ্য বিভাগ এখানে পরিচালনা করে "Awarness programme on substance use prevention and mental health" বিষয়ক সচেতনতামূলক আলোচনা সভা। এর সহযোগিতায় ছিল যশোরের মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আহছানিয়া মিশন যশোরের সেন্টার ম্যানেজার সৈয়দ মিজানুর ইসলাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মনতোষ কুমার নন্দী। প্রধান অতিথি ছিলেন যশোরের মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপপরিচালক মোঃ আসলাম হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে মঞ্চে ছিলেন যশোর জেলা এনজিও’র সমন্বয়কারী শাহজাহান নান্নু।

অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ হয়ে উঠেছিলেন ঢাকা থেকে আসা আহছানিয়া মিশনের সিনিয়র সাইকোলোজিস্ট রাখী গাঙ্গুলী। তিনি পর্যায়ক্রমে স্লাইড আকারে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে মাদকের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন। যেখানে উঠে আসে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থের একে অন্যের পরিপূরকতার বিষয়। কিভাবে নিজের মন ও শরীরকে ভালো রাখা যায়, মাদককে ‘না’ বলার কৌশল, নিজে ভালো থাকা এবং অন্যকে ভালো রাখার বিষয়ও তুলে ধরেন।

প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ‘যদি কখনো মানসিক চাপে কেউ ভূগতে থাকে এবং তা বুঝতে পারে তাহলে তা যেন সে তারা পরিবার কিংবা কাছের মানুষের সাথে আলোচনা করে। প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীর শরণাপন্ন হতে হবে।’ কোনো কিছু নিয়ে ওভার থিংকিং বা মাত্রাতিরিক্ত চিন্তা ভাবনা না করার পরামর্শ দেন তিনি। শিক্ষার্থীরাও তার কাছে নানা কিছু জানতে চান। রাখী গাঙ্গুলি সহজ-সাবলীলভাবে প্রশ্নের জবাব দেন যা মুগ্ধ করে সবাইকে। জীবনে রুটিন মেনে চলার প্রতিও জোর দেন রাখী। শরীরের সাথে মনের স্বাস্থ্য কিভাবে ভালো রাখতে হয় তার টিপসও ছাত্র-ছাত্রীরা পেয়ে যান তার কাছ থেকে।

মিজানুর আলোচনা করেন কিভাবে খান বাহাদুর আহছানুল্লাহ সাতক্ষীরার একটি ছোট জায়গায় দরিদ্র মানুষদের উপকারের জন্য সামাজিক সেবার কাজ শুরু করেন। এবং ১৯৫৮ সালে ঢাকায় আহছানিয়া মিশনের প্রতিষ্ঠা করেন। যা এখন বটবৃক্ষের মতো দাঁড়িয়ে ছায়া দিচ্ছে এবং উপকৃত করছে অসংখ্য মানুষকে।

যশোরের রিহ্যাব সেন্টার থেকে মাদকাসক্তির চিকিৎসা নিয়ে এখন আবার নিজের জীবনটাকে গুছিয়ে তোলার লড়াইয়ের কথা সবার সাথে শেয়ার করেন রিকভারিং অ্যাডিক্ট খাইরুল আমিন তুহিন। তিনি নিজের জীবনে মাদকের কারণে অনেক কিছু হারিয়েও হেরে না যাওয়ার গল্প শোনান সংক্ষেপে। জীবন সহজ নয় এবং ভালো থাকার লড়াইটাও কঠিন। তাই কখনো পড়ে গেলে, পিছিয়ে গেলে উঠে দাঁড়িয়ে আবার লড়াইয়ের ময়দানে শিক্ষার্থীদের ফিরে আসার কথা বলে উদ্দিপ্ত ও উজ্জীবিত করেন তুহিন।

যশোরের মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগের উপপরিচালক মোঃ আসলাম হোসেন তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্যে বলেন, ‘জীবনে চলার পথে বন্ধু সবারই প্রয়োজন। কিন্তু বন্ধু নির্বাচনে সবাইকে সতর্ক হতে হবে।’

স্কুলটির প্রধান শিক্ষক সুমন নন্দি তাদের প্রতিষ্ঠানে এমন চমৎকার সচেতনতামূলক একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য ঢাকা আহছানিয়া মিশনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। 

এই অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন যশোরের আহছানিয়া মিশনের দুই কাউন্সিলর মো:রাশিদুল আলম ও হাবিবুর রহমান।