রোজা ও ইফতার এর ফজিলত
রমযান মাস মূলত অন্যকে খাওয়ানোর মাস। এটা দুভাবে করা যায়, প্রথমত দরিদ্রকে খাওয়ানো। হাদীসে এসেছে, দরিদ্রদেরকে খাওয়ানোর জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) রমযান মাসে বেশি করে দান করতেন। দ্বিতীয়ত সিয়াম পালনকারীকে ইফতার করানো।
হাদীসে এসেছে- مَنْ فَطَّرَ صَائِمًا كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ غَيْرَ أَنَّهُ لَا يُنْقَصَ مِنْ أَجْرِ الصَائِمِ شَيْئًا، ‘যদি কেউ কোনো সিয়াম পালনকারীকে ইফতার করায়, তাহলে সে উক্ত সিয়াম পালনকারীর সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। তবে এতে উক্ত সিয়াম পালনকারীর সওয়াব একটুও কমানো হবে না।’ সুনানুত তিরমিযি, হাদীস-৮০৭ (ইমাম তিরমিযি বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় আসার পর সর্বপ্রথম ঘোষণা করলেন - يَا أَيُّهَا النَّاسُ، أَفْشُوا السَّلَامَ، وَأَطْعِمُوا الطَّعَامَ، وَصَلُّوا وَالنَّاسُ نِيَامٌ، تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ بِسَلَامٍ ". হে লোকেরা! বেশি করে সালামের প্রসার কর। অন্যদেরকে খাবার দাও। রাতে ঐ সময়ে নামাজ পড় যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। তাহলে নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। সুনানুত তিরমিযি, হাদীস- ২৪৮৫
সম্মানিত পাঠক! সিয়াম পালনের নিয়্যত সম্পর্কে আমরা বিভিন্ন ক্যালেন্ডারে, পুস্তিকাতে যে সব নিয়্যত দেখি এবং পড়ি এসব সম্পূর্ণ বানানো কথা। হাদীসে এ সব নেই। কারণ নিয়্যত হচ্ছে মনে মনে সংকল্প করা। সংকল্প করার জন্য কোনো বাক্য বলতে হয় না। তবে ইফতার গ্রহণের পূর্বে দুআ রয়েছে।
ইফতারের পূর্বে ইফতারকে সামনে নিয়ে এই দুআ পড়াঃ يَا وَاسِعَ الْمَغْفِرَةِ اِغْفِرْ لِىْ ‘হে মহান ক্ষমা দানকারী, আমাকে ক্ষমা করুন।’ শুয়াবুল ঈমান ৩৯০৩ আর ইফতারের সময় এই দুআ করাঃ اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلى رِزْقِكَ أفْطَرْتُ ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্যই সিয়াম পালন করেছি এবং আপনার দেয়া রিযিকের দ্বারাই ইফতার করছি।’ আবু দাউদ, হাদীস-২৩৬০
ইফতারের পর এই দুআ পড়াঃ ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ ‘পিপাসা দূরীভূত হয়েছে, রগগুলো সিক্ত হয়েছে। সওয়াব লেখা হয়েছে ইনশা-আল্লাহ।’ আবু দাউদ, হাদীস-২৩৫৯ কারো বাড়িতে ইফতার করলে এই দুআ পড়াঃ أَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُوْنَ وَأَكَلَ طَعَامَكُمُ الأَبْرَارُ وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ الْمَلاَئِكَةُ ‘সিয়াম পালনকারীগণ তোমাদের সাথে ইফতার করেছেন এবং নেককারগণ তোমাদের খানা আহার করেছেন। ফিরিশতাগণ তোমাদের জন্য শান্তি কামনা করেছেন।’ আবু দাউদ, হাদীস-৩৮৫৬
অতএব আমাদের সকলেরই চেষ্টা করা উচিত নিজেদের খাবার থেকে সামান্য কমিয়ে নিয়মিত অন্যদেরকে ইফতার করানো। বিশেষত দরিদ্র, কর্মজীবি, রিকশাওয়ালা, দিনমজুর অনেকেই কষ্ট করে সিয়াম পালন করে এবং ইফতার করতেও তাদের অনেক কষ্ট হয়। তাই সাধ্যমত নিজের খাবার একটু কমিয়ে এদেরকে খাওয়ানো প্রয়োজন।
লেখক: মুফতি মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন
সাতাউক মধ্যগ্রাম, লাখাই, হবিগঞ্জ
ফেসবুক: Mohammad Nasiruddin (মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন)
আমলের কথা জানতে ইউটিউবে সার্চ করুন, 01712961470