সোমবার ১০ মার্চ ২০২৫, ফাল্গুন ২৬ ১৪৩১, ১০ রমজান ১৪৪৬

ব্রেকিং

মব জাস্টিস-বিশৃঙ্খলাকারীদের জায়গা থেকেই গ্রেপ্তার: তথ্য উপদেষ্টা ধর্ষণ মামলায় জামিন পাওয়ার অধিকার আমরা রাখবো না: আইন উপদেষ্টা তারেক রহমানের উদ্যোগে মাগুরার সেই শিশুর জন্য আইনজীবী প্যানেল ধর্ষণের বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঈদের আগেই চলতি মাসের বেতন পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা ৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণের বিচার করতে হবে: আইন উপদেষ্টা মাগুরার শিশুকে ধর্ষণ: ১৮০ দিনে বিচার শেষ করার নির্দেশ মাগুরার সেই শিশুর সব ছবি ইন্টারনেট থেকে অপসারণের নির্দেশ মাগুরার শিশুটিকে দেখলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বললেন ‘সরকার তৎপর’ কেরাণীগঞ্জে অন্তঃসত্ত্বা তরুণীকে ‘দলবেঁধে ধর্ষণ’, গ্রেপ্তার ২ ঈদের ট্রেনের আগাম টিকেট ১৪ মার্চ থেকে ধর্ষণের অভিযোগ, বাবা গ্রেপ্তার মাগুরায় শিশু ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে আদালত চত্বর ঘেরাও ছাত্র-জনতার গাজীপুরে শিশুকে ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ, যুবক গ্রেপ্তার যৌন নিপীড়ন: নরসিংদীতে পিটুনি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘চুনকালি’ সীমান্তে গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের লাশ হস্তান্তর করেছে বিএসএফ গাজায় ২০ লাখের বেশি মানুষের খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই : আল জাজিরা বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বদলাতে পারে: ভারতীয় সেনাপ্রধান

ফিচার

তরুণরাই মোড় পরিবর্তনের দিশারী

মাহবুব মোর্শেদ

 প্রকাশিত: ১৪:০৫, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

তরুণরাই মোড় পরিবর্তনের দিশারী

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ইতিহাসের নতুন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। জনগণের সামনে আবারো এসেছে গণতান্ত্রিক, স্বাধীন ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার সুযোগ। দেড় হাজার শহীদের রক্ত এবং অসংখ্য ছাত্র-জনতার অঙ্গহানির বিনিময়ে যে নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনা ২৪-এ রচিত হলো তা ৫ আগস্টের কয়েকদিন আগেও ছিল প্রায় অসম্ভব কল্পনা। সিন্দাবাদের ভূতের মতো আমাদের ঘাড়ে চেপে বসা ফ্যাসিস্ট শাসন অপরাজেয় ও দুর্লঙ্ঘ একথা ভেবে বসেছিলেন অনেকেই। বিশেষ করে সাত জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের পর ধীরে ধীরে আশাহত হয়ে পড়ছিলেন অনেকেই। ভেবেছিলেন, এই ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশের ভবিতব্য। কিন্তু, ইতিহাসের ললাটে গোপনে লিখিত হয়ে গিয়েছিল আরেক গন্তব্য। বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলন জেগে উঠেছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। 

অবশ্য বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্রজাগরণ, ছাত্রদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থান নতুন কিছু নয়। বরং, এটাই যেন নিয়ম। যখনই দেশ কোনো গভীর সংকটে নিপতিত হয়, সব আশা নিঃশেষিত হয়ে যায়, তখন ছাত্ররা সামনে চলে আসে। তাদের ডাকে আপামর জনতা পথে নামে। 

এটা হয়তো আমাদের কৃষি অধ্যুষিত সমাজের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য। একটা বিশেষ মনোগঠন। যে মনোগঠনের কেন্দ্রে আছে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সম্পর্কে এক আশাপ্রদ রূপকল্প।

কৃষক সমাজে বহু বছর ধরে এই রূপকল্প প্রচলিত যে, ভবিষ্যতে তাদের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সন্তানটি পরিবারের দায়িত্বভার গ্রহণ করবে। পরিবারটিকে নতুন এক ভবিষ্যতের দিকে পরিচালনা করবে। এই রূপকল্প আজও জাগরুক। শুধু গ্রামীণ সমাজে নয়, গ্রাম থেকে আসা শহুরে মধ্যবিত্ত সমাজেও পরিবারগুলো বিশ্বাস করে, ছেলেমেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করে পরিবারের দায়িত্ব নেবে এবং ভাগ্য ফেরাবে। 

পরিবারগুলোর এই খণ্ড খণ্ড স্বপ্নগুলো হয়তো ইতিহাসের বিশেষ দিনক্ষণে যৌথ স্বপ্নে পরিণত হয়। জনগণের একটি বড় অংশ সমস্বরে জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের দায়িত্ব ছাত্রদের হাতে তুলে দেয়। অথবা ছাত্ররা সেই দায়িত্ব তুলে নিলে জনসাধারণের পক্ষ থেকে এক বাক্যে তাতে সমর্থন জানিয়ে দেওয়া হয়। 

আমরা ১৯৫২ সালে, ১৯৬৯ সালে, ১৯৯০ সালে এমন ঘটনা ঘটতে দেখেছি। যখনই জাতি কোন গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়েছে এবং সেই সংকট থেকে উত্তরণের পথ দেখিয়েছে ছাত্ররা, তখনই সাধারণ জনগণ জেগে উঠেছে। প্রশ্নহীনভাবে পথে নেমে সংকট থেকে জাতিকে উদ্ধার করেছে।

তবে এই ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান আগের গণঅভ্যুত্থান ও আন্দোলনগুলোর চেয়ে অনেক বিস্তৃত ও গভীর ছিল। হতাহতের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। ছাত্ররা প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করেছিল যে তারা সত্যিই পরিবর্তন চায়। এবং সেই প্রাণের বিনিময়ে মানুষ তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হয়েছিল। জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিস্টদের তাড়িয়ে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছিল।

আমরা এখন সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকে গেছি। তরুণরা তাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন ও পুনর্গঠনের যে রূপরেখা হাজির করেছিল তা নিয়ে চারিদিকে ব্যাপক আলোচনা চলছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অভূতপূর্ব এক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করে চলেছে। সংস্কারের জন্য চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। দ্বিমত অবশ্যই থাকবে। সমাজে নানা মত থাকলে নানা পথও থাকবে। কিন্তু তরুণরা এমন এক বাস্তবতা তৈরি করেছে, মানুষের মনে এমন এক স্বপ্ন জাগিয়ে দিয়েছে যা থেকে ফিরে আসা খুব কঠিন। 

পুনর্গঠিত নতুন এক বাংলাদেশ তৈরি না হলে এবার বিপুলভাবে আশাহত হয়ে পড়বে জাতি।

ফলে এই কর্মযজ্ঞকে সফল করে তুলতে হবে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, গণজাগরণের মধ্য দিয়ে তরুণরা যে স্বপ্ন বপন করেছে তাকে জাগরুক রাখতে হবে। স্মরণে, উদযাপনে তারুণ্যের শক্তি যেন বাংলাদেশকে নতুন অভিযাত্রায় নিয়ে যেতে পারে সেজন্য যে কোনো মূল্যে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। 

হার না মানা যে শহীদেরা অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তাদের কথা মনে রেখে সহযোদ্ধাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে তারুণ্যের উৎসবে পরিণত করতে হবে।