বুধবার ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, মাঘ ১৬ ১৪৩১, ২৯ রজব ১৪৪৬

ব্রেকিং

আড়তের দখল নিয়ে ছাত্রদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের সংঘর্ষ-গুলি, আহত ৩০ ফের ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের এবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণ হচ্ছে গাছ কাটার আগে অনুমতি নিতে হবে: হাই কোর্ট দুর্বল ব্যাংক থেকে টাকা ফেরত পাবেন আমানতকারীরা: গভর্নর যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে’ যোগ দেবেন জায়মা রহমান বৈঠক থেকে বেরিয়ে গেলেন রানিং স্টাফ নেতারা, সিদ্ধান্ত হয়নি রেলের কর্মচারীদের `যৌক্তিক দাবি` আগেই মেনে নেওয়া হয়েছে: অর্থ উপদেষ্টা ৭ কলেজের অচলাবস্থা কাটবে কী করে, মাথায় আসছে না শিক্ষা উপদেষ্টার ইসির স্বাধীনতার গ্যারান্টি চাইলেন সিইসি সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা গাজায় ফিরেছে ২ লাখ ফিলিস্তিনি

ফিচার

প্রশাসনে ট্রাম্পের আঘাত এত ‘ক্ষিপ্র’ হবে, ভাবেননি অনেকে

 প্রকাশিত: ০৭:৫৪, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫

প্রশাসনে ট্রাম্পের আঘাত এত ‘ক্ষিপ্র’ হবে, ভাবেননি অনেকে

দায়িত্ব নিয়েই যুক্তরাষ্ট্রের শত শত সরকারি কর্মীকে সরিয়ে দেওয়া কিংবা ‘একঘরে’ করে রাখার কাজ শুরু করে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, যিনি আরও কয়েক হাজার কর্মীকে বরখাস্ত করার ক্ষমতাও পেতে চান।

শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে বলেছে, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেছেন এক সপ্তাহ হয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে তিনি সরকারের কিছু জায়গায় এমন সব পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা মার্কিন আমলাতন্ত্রের একটা বড় অংশকে হতবাক করে দিয়েছে।

জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের ১৬০ সদস্যকে এরই মধ্যে ‘বাড়িতে ফেরত’ পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পদত্যাগ করেছেন আইন বিভাগের প্রায় ২০ জন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। অন্যান্য কর্মকর্তার সঙ্গে বরখাস্ত করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড ও পরিবহন নিরাপত্তা প্রশাসনের (টিএসএ) প্রধানকে।

কর্মশক্তির বৈচিত্র্য প্রাধান্য পায়, এমন অনেক প্রতিষ্ঠান স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মীকে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বাইডেন প্রশাসনের নীতি বাতিল করে দেওয়া ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের ঝড়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চোখ-মুখে অন্ধকার দেখছেন অনেক কর্মকর্তা।

গত মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেছেন, বাইডেন প্রশাসনের নিয়োগ দেওয়া এক হাজারের বেশি কর্মকর্তাকে ছাঁটাই করার পরিকল্পনা রয়েছে তার।

রয়টার্স বলেছে, সরকারি কর্মীদের মধ্যে তৈরি হওয়া উদ্বেগের বিষয়ে তারা হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিল; কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি।

নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্পের মুখে এমন প্রতিশ্রুতি অনেকবারই শোনা গেছে যে, ক্ষমতায় গেলে তিনি সরকারের আকার ছোট করে আনবেন। তার রাজনৈতিক এজেন্ডার প্রতি অনুগত নয়, এমন আমলাদের অপসারণের কথাও তিনি বলতেন।

এর মধ্যে হোয়াইট হাউসে বসেই সরকারি কর্মীদের নিশানা বানিয়ে ‘বিদ্যুৎ গতিতে’ তিনি যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তাতে ওয়াশিংটনে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীরা অবাকই হয়েছেন। একই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে পাবলিক খাতের অনেক ইউনিয়ন, যারা কয়েক মাস ধরে ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের প্রহর গুনছিল।

কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীদের আইনজীবী হিসেবে কাজ করা ডন কুইন বলেন, “ট্রাম্পের আঘাত এতটা ক্ষিপ্র হবে, তা অনেক মানুষই ভাবতে পারেননি।

“স্বাভাবিকভাবেই সরকারি কর্মীদের মধ্যে একটা অবিশ্বাস, একটা ভয় ঢুকে গেছে। তারা নিজেদের জীবিকা নিয়ে, সংসার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।”

ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফেডারেল এমপ্লয়িসের নির্বাহী পরিচালক স্টিভ লেনকার্ট বলেন, বৃহস্পতিবার তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের ৩০ জন কর্মীর একটি ব্যাচের ক্লাস নেন। সেখানে কর্মীদের চোখে-মুখেও তিনি ভয় আর উদ্বেগের ছাপ দেখতে পেয়েছেন।

টিএসএ’র উদাহরণ টেনে লেনকার্ট বলেন, এ ধরনের সংস্থায় নেতৃত্ব প্রতিস্থাপন হতে সাধারণত কয়েক মাস সময় লাগে। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনই সেখানে রদবদল আনেন।

কোস্ট গার্ডের কমান্ড্যান্ট অ্যাডমিরাল লিন্ডা লি ফাগান, যিনি সশস্ত্র বাহিনী শাখার প্রথম নারী প্রধান ছিলেন, তাকেও ট্রাম্প সরিয়ে দিয়েছেন।

তাকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাখ্যায় হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বৈচিত্র্য, ন্যায়বিচার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির প্রতি অতিরিক্ত মনোযোগ ওই নারীকে সরানোর একটি কারণ।

গত মঙ্গলবার ট্রাম্প প্রশাসনের এক স্মারকে বলা হয়, বুধবার বিকাল ৫টার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের ডিইআই (ডাইভারসিটি, ইকুইটি ও ইনক্লুসিভ) কার্যালয়ের সব কর্মীকে ছুটিতে পাঠানো হবে, কারণ তাদের অফিস বন্ধ থাকবে।

শুক্রবার ফেডারেল এজেন্সি প্রধানদের বলা হয়েছে, প্রবেশনারি পিরিয়ডে আছেন, কিংবা যাদের চাকরির বয়স দুই বছর হয়নি, তাদের চিহ্নিত করতে হবে। কারণ এসব কর্মীকে অপসারণ করা সহজ।

সামরিক বাহিনী, অভিবাসনসংক্রান্ত নিরাপত্তা, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা ও জননিরাপত্তা সংক্রান্ত চাকরি ছাড়া অন্যান্য নিয়োগেও স্থগিতাদেশ দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প।

জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক কর্মকর্তা বলেন, গত বুধবার খুবই অল্প সময়ের নোটিসে তাদের ১৬০ জন কর্মীকে অফিসের কম্পিউটার-ল্যাপটপ বন্ধ করে ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ির পথ ধরতে বলে ট্রাম্প প্রশাসন। এসব কর্মী পররাষ্ট্র দপ্তর, পেন্টাগন ও মার্কিন সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় নিয়োজিত ছিলেন।

চলতি সপ্তাহে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন ট্রাম্প, যেখানে পদ-পদবিতে পরিবর্তন এনে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিজীবীদের সহজেই বরখাস্ত করা যাবে। ট্রাম্পের এই উদ্যোগে অনেক কর্মীর কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত আটকে দিতে সোমবার ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে কলাম্বিয়ার ফেডারেল ডিস্ট্রিক কোর্টে মামলা করেছে ‘দ্য ন্যাশনাল ট্রেজারি ইমপ্লয়িস ইউনিয়ন’, যারা যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭টি ফেডারেল এজেন্সি ও বিভাগের দেড় লাখ কর্মীর প্রতিনিধিত্ব করে থাকে।