কুয়েট ক্যাম্পাসে শিক্ষা উপদেষ্টা, অনশনে অনড় শিক্ষার্থীরা

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-কুয়েটের অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সি আর আবরার কথা বলার পরও কোনো সমাধান হয়নি।
বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে তিনি কুয়েট ক্যাম্পাসে পৌঁছান। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। পরে প্রায় ৪০ মিনিট অনশনরত ও অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষা উপদেষ্টা।
কিভাবে ছয় দফা থেকে উপাচার্য পদত্যাগের এক দফা দাবিতে পরিণত হলো, সেই বিষয়টি শিক্ষার্থীরা জানান। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থী গালিব, তৌফিক, সৈকত, রাহাত ও মহিবুজ্জামান উপল উপাচার্যের অপসারণ ছাড়া কোনোভাবেই অনশন কর্মসূচি থেকে সরে আসবেন না বলেও উপদেষ্টাকে জানান।
এর আগে মঙ্গলবার বিকালে ফোন করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা।
বুধবার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে শিক্ষা উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, “এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, পরিস্থিতি এ পর্যায়ে এসে গেছে। ছাত্রদের অনশন করতে হচ্ছে। আমি এখানে একজন পিতা হিসেবে এসেছি। আমি তাদের বলেছি যারা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে তারা যেন পানি পান করে। আর যারা সুস্থ আছে, তারা অনশন পালন করুক। কিন্তু তারা সেটা শোনেনি।”
“তারপরও আমি তাদের অনুরোধ করছি, তারা যেন অনশন ভাঙে। আমি আশা করছি যত দ্রুত সম্ভব তাদের এই সমস্যা সমাধান হবে।”
উপদেষ্টা বলেন, “তারা চাচ্ছে আমরা এখনই কোনো ঘোষণা দেই; যার মাধ্যমে তারা অনশন ভাঙতে পারে। আমি তাদের বোঝাতে চেষ্টা করেছি আইনি কিছু বিষয় রয়েছে। আমরা যাই করি না সেটা আইন দ্বারা নির্দিষ্ট হতে হবে।”
পরে কুয়েটের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের কয়েকজন সদস্য তাদের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ জানালে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, “আমি এসেছি শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে, অন্য কারো সঙ্গে এখন কোনো কথা নয়।”
এদিকে আমরণ অনশন কর্মসূচির তৃতীয় দিনে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন অনেক শিক্ষার্থী। তবে উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন তারা। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) গঠন করা কমিটির তিন সদস্যের দল বুধবার কুয়েটে আসার কথা রয়েছে।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়; এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়। রাতে খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।
এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে ঢাকায় এসে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার ও উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়।
২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
সংঘর্ষের ঘটনায় প্রকৃত দোষী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করাসহ পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য গঠিত কমিটি গত রোববার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এর মধ্যে কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নগরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার হোসেন আলী নামের এক ব্যক্তি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে মামলা করেন।
এরপর আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা ১৩ এপ্রিল বিকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিলে আন্দোলন আবারও দানা বাঁধতে থাকে।
পরদির অর্থাৎ ৪ এপ্রিল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে আগামী ২ মে থেকে সব আবাসিক হল শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া ও ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়।
এর মধ্যে এরপর ১৫ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবির ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা কুয়েটের ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভেঙে হলগুলোয় প্রবেশ করেন।
১৬ এপ্রিল দুপুরে উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। বিকালে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে প্রতীকী গদিতে আগুন জ্বালানোর কর্মসূচি পালন করেন।
এরপর ২০ এপ্রিল উপাচার্যের পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেওয়া হয় এবং বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনে বসার ঘোষণা দেন।