নিরাপদে বাড়ি ফিরতে চার শিক্ষার্থীর ‘গ্যাংআপ’

গ্যাংআপের পেছনের চার তরুণ মাহির আব্দুল্লাহ, ফাহিম আহমেদ, শাহরিয়ার আহমেদ শোভন ও মনীষ চন্দ রুদ্র।
দেশের আইনশৃঙ্খলার অস্থির অবস্থায় মানুষ যখন নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত, সেই সময় শিক্ষার্থীদের নিরাপদ যাতায়াতের বিষয়টি নিয়ে ভাবনায় পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া চার তরুণ। সেই ভাবনা থেকে গাঁটের টাকা খরচ করে এক সপ্তাহের চেষ্টাতেই তারা বানিয়ে ফেলেন একটি অ্যাপ- ‘গ্যাংআপ’।
এই গ্যাং হল নির্দিষ্ট ক্যাম্পাস থেকে নির্দিষ্ট এলাকায় বাসায় ফেরার জন্য শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট দল। আর এই অ্যাপে যুক্ত হয়ে মূলত শিক্ষার্থীরা নিরাপদ রাইড শেয়ার করতে পারছেন।
অ্যাপটি তৈরির পর থেকেই অভাবনীয় সাড়া পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। মাত্র ১১ দিনেই ওয়েবভিত্তিক অ্যাপটিতে যুক্ত হয়েছেন ২৫ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী।
আপাতত https://gangupnow.com/ এ ঢুকে নিজেদের গ্যাং বা গ্রুপ তৈরি করে বাসা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতে একই যানবাহন ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। গ্রুপ তৈরি করতে হলে বা কোনো গ্রুপে যুক্ত হতে হলে অবশ্যই ওই শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেওয়া একটি স্টুডেন্ট ইমেইল আইডি থাকতে হবে।
‘গ্যাংআপ’ এর উদ্যোক্তা চার তরুণই কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ছেন। এর মধ্যে মাহির আব্দুল্লাহ, ফাহিম আহমেদ ও মনীষ চন্দ রুদ্র ব্র্যাক ইউনিভিার্সিটির অষ্টম সেমিস্টারে এবং শাহরিয়ার আহমেদ শোভন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির পঞ্চম সেমিস্টারে পড়ছেন।
মঙ্গলবার রাতে গুগল মিটে একসঙ্গে কথা হয় এই চার তরুণের সঙ্গে। আলাপে তারা জানালেন, তাদের এই স্বপ্নযাত্রার পেছনের গল্প আর ভবিষ্যতের পরিকল্পনা।
শাহরিয়ার আহমেদ শোভন বলেন, “দেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে স্টুডেন্টদের মধ্যেও খুব একটা কনসার্ন আছে। অনেক ছিনতাই হচ্ছে, হামলা হচ্ছে। সেসব কারণে মূলত কনসার্নটা আসে। আমরা ভাবছিলাম স্টুডেন্টরা তো আনসেইফ, কী করা যায়। মাহির ভাই তখন ফাহিম ভাইয়ের সঙ্গে আইডিয়াটা শেয়ার করে।”
মাহির আব্দুল্লাহ বলেন, “আমরা মোটামুটি সেইম সার্কেল। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে পরপর কয়েকটা ঘটনা খুব প্যানিক করে। বিশেষ করে প্রকাশ্য রাস্তায় গুলি করে ছিনতাইয়ের ঘটনাটা। ২৩ ফেব্রুয়ারি আমরা সেদিন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ক্লাবের মেম্বারদের সাথে একটা আলোচনা করছিলাম। আমি সেই ক্লাবের মেম্বার। সেসময় একটা খবর স্টুডেন্টদের মাঝে ছড়ানোর পর অনেকে প্যানিকড হন। কারণ আমাদের তো অনেক সময় বাসায় ফিরতে ফিরতে অনেক দেরি হয়। তখন কী হবে।”
মাহির বলছিলেন, “সাধারণত দেখা যায় সাড়ে ৫টায় ক্লাস শেষ অনেকে ইউনিভার্সিটির গ্রুপগুলোতে পোস্ট দেন যে, কেউ মোহাম্মদপুর যাবে, আর কেউ যাবে কি না। এই যে ম্যানুয়ালভাবে যে বিষয়গুলো প্রসেস হচ্ছে, আমার মনে হল, একটু অটোমেটেড করা যায় কীভাবে। যাতে স্টুডেন্টদের কানেক্ট করে একটু সেইফলি বাসায় পৌঁছানো যায়। এরপর আইডিয়াটা ফাহিমের সঙ্গে শেয়ার করি। শোভনের সঙ্গে কথা বলে ফাহিম।”
“ওইদিন থেকেই আমরা কাজ শুরু করি। প্রথম কয়েকদিন অনেক কাজ করতে হয়েছিল। এটার কোনো অফিসিয়াল লঞ্চিং হয়নি। আমরা ফেইসবুকে একটা মাত্র পোস্ট করেছিলাম, ব্র্যাকের একটা গ্রুপে ১ মার্চ রাত সাড়ে ১২টায়। সারপ্রাইজিংলি, ওই পোস্টে আমরা চমৎকার সাড়া পাই। স্টুডেন্ট জেনারেশন বা জেনজি জিনিসটাকে কুল টেক হিসেবে ডিফাইন করা শুরু করেছে।”
মাহির বলেন, “আমরা আসলে একটা পরীক্ষার মত করতে চাচ্ছিলাম যে স্টুডেন্টদের প্রয়োজনটা আসলে কী। কিন্তু তাতেই অভাবনীয় সাড়া আসে। আমরা প্রথমে ১০টা বিশ্ববিদ্যালয়কে যুক্ত করে শুরু করেছিলাম। ১১ দিনেই ২৫টা বিশ্ববিদ্যালয়কে এর আওতায় আনা হয়েছে। ইউজার হয়েছে সাড়ে তিন হাজার প্লাস, গ্যাংয়ের সংখ্যা পাঁচশর বেশি।
“প্রতিদিনই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্টুডেন্টদের প্রচুর টেক্সট পাচ্ছি। তারা জানতে চায়, কবে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আমরা গ্যাংআপে যুক্ত করব। আমরা পরবর্তীতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে কানেক্ট হব। সেখানে আমাদের অনেক ইউজার হবে আশা করছি।”
অ্যাপ তৈরি করতে কী পরিমাণ কাজ করতে হয়েছে জানতে চাইলে শাহরিয়ার বলেন, “প্রথম দিকের ডেভেলপমেন্ট স্টেইজে আমাদের অনেক কাজ করতে হয়েছে। ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত সাত দিনের জার্নিটা অনেক লেনদি ছিল।
“রিলিজ দেওয়ার পর যখন ট্রাফিক আসতে থাকে প্রচুর তখনও কন্টিনিউয়াসলি অনেক কিছু করতে হচ্ছে। বেশ কয়েকবার সার্ভার চেইঞ্জ করতে হয়েছে। প্রাইভেসি কনসার্ন, সিকিউরিটি কনসার্ন ইত্যাদি নিয়ে অনেক কাজ। এখন কাজের ভলিউম একটু কম।”