ইলমে দ্বীন শিখেও যেভাবে দ্বীন থেকে দূরে সরে যায় ছাত্ররা!

ইলমে দ্বীন এক নূরের নাম। এ নূর আলীম রব্বে কারীম থেকে সূত্র পরম্পরায় সিনা থেকে সিনা, কিতাব থেকে কিতাবে স্থানান্তরিত হয়।
অনেক ছাত্রই মাদরাসায় ভর্তি হয় পরিবারের চাপে। মাদরাসায় পড়েও পরিবারের চাপে। তার মাঝে দ্বীনের প্রতি না কোন দরদ থাকে, না কোন আগ্রহ।
‘মাদরাসায় পড়ে কী হবে?’ এমন হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তির সংখ্যাও নিতান্ত কম নয়। নিজেকে মাদরাসা ছাত্র পরিচয় দিতেও কুণ্ঠাবোধ করতে দেখা যায় কিছু ছাত্রদের মাঝে। নিজেকে আধুনিক এবং বাহিরের বিষয়ে অনেক বেশি জ্ঞানী ভাব প্রকাশেও উচ্ছাস লক্ষ্য করা যায় কিছু তালেবে ইলমের মাঝে।
নাস্তিক ও আধা নাস্তিকদের লেখা গল্প, উপন্যাস ইত্যাদিতে বুঁদ হয়ে থাকে।
এসব ছেলেরা সাধারণত কিতাবী পড়ালেখায় মনযোগি হয় না। উস্তাজদের নসিহত মন দিয়ে কখনোই শুনে না। মাদরাসা কর্তৃক ইসলাহী মজলিস, কিংবা কোন আল্লাহওয়ালা বুযুর্গদের সোহবতকে সব সময়ই হেয় দৃষ্টিতে দেখে। সুন্নত, নফল ইত্যাদি আমলকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। এরা মাদরাসায় পড়েও মাদরাসাকে ধারণ করতে পারে না। এই ছেলেগুলো এক সময় রুসমী আলেম হয়।
নামের সাথে আলেম উপাধি জুড়ে গেলেও এরা আসলে দ্বীন বিষয়ে অজ্ঞ। অনেক সময় দ্বীন বিদ্বেষীও হয়ে থাকে। এর মাঝে কিছু ছেলেরা ফারেগ হবার পর নিজের ভুল বুঝতে পারে। সঠিক পথে ফিরে আসে। অল্প সংখ্যক ছেলেরা বিপথগামী হয়।
এ বিষয়ে আমাদের করণীয় কী?
১
কাউকে জোর করে আলেম বানানো উচিত নয়। বরং সর্বোচ্চ হেদায়া পর্যন্ত পড়িয়ে তাদের দুনিয়াবী পড়াশোনায় দিয়ে দেয়া উচিত। তাহলে অন্তত নিজেকে আলেম মনে করে বিশাল জ্ঞানী ভাব ধরতে পারবে না। তাছাড়া এর মাঝে দ্বীনের কিছু মৌলিক জ্ঞান শিক্ষা হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা হেদায়াত নসীবে রাখলে দুনিয়াবী ইলম শিখিয়েও দ্বীনের মৌলিকত্ব ভুলে যাবে না।
২
উস্তাজদের উচিত ছাত্রদের নিয়ে প্রতি সপ্তাহে, না হলে অন্তত প্রতি মাসে ইসলাহী মজলিস বাধ্যতামূলক করা। যেখানে আকাবীরে উলামাগণের ইলমী ও আমলী মুজাহাদা, তাক্বওয়া পরহেযগারী, দ্বীনের হাকীকত, ইখলাস, লিল্লাহিয়্যাত, দুনিয়ার মাকসাদ ইত্যাদি বিষয়ে বুযুর্গ আলেম দিয়ে বয়ান করানো। আকাবীরে উলামাগণের জীবনী আলোচনা ও তাদের কিতাবাদী পড়তে উৎসাহ প্রদান করা।
৩
অভিভাবকদের উচিত নিজ সন্তানের খোঁজ খবর রাখা। মাদরাসা ছুটির সময় কার সাথে ঘুরে, কী পড়ে? কী করে? সবই মনিটর করা। শুধু মাদরাসায় দ্বীন শিখতে পাঠালেই হবে না, নিজ পরিবারেও দ্বীনের পরিবেশ রাখা জরুরী।
বাড়িতে দ্বীন বিষয়ক পর্যাপ্ত বই ও কিতাবাদী রাখা। ঐতিহাসিক উপন্যাস, সাহাবীদের গল্প, আকাবীরদের জীবনী ইত্যাদি গ্রন্থাদীও অনেক সময় দ্বীনের সমঝ তৈরীতে ভূমিকা রাখে।
৪
সর্বোপরি উস্তাজ অভিভাবক সবারই নিজ ছাত্র ও সন্তানদের জন্য দুআ অব্যাহত রাখা। আল্লাহ তাআলা যেন আমাদের ছাত্র ও সন্তানদের হেদায়াতের উপর অবিচল রাখেন। আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের ইজ্জতের কারণ বানান। অসম্মানের কারণ না বানান।
মুসলিম বাংলা