মঙ্গলবার ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মাঘ ২৯ ১৪৩১, ১২ শা'বান ১৪৪৬

শিক্ষা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স কোর্স তিন বছরের হচ্ছে

 প্রকাশিত: ১৭:০৭, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স কোর্স তিন বছরের হচ্ছে

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছরের অনার্স কোর্সকে তিন বছরে সংক্ষিপ্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। রোববার আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস উপলক্ষে ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান শিক্ষা উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এম আমিনুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চার বছরের অনার্স কোর্সকে তিন বছরের কোর্স করা হবে। বাকি এক বছরে ডিপ্লোমা ও কারিগরি ওপর ব্যাপকভাবে শিক্ষা দেওয়া হবে। তারপর তাদের দুটো সার্টিফিকেট দেওয়া হবে।” 

অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম মনে করেন, এই পরিবর্তনের ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে। তিনি এটিকে একটি “অভিনব ও অসাধারণ সিদ্ধান্ত” বলে আখ্যা দেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, প্রচলিত সামাজিক চিন্তাধারার কারণে এখনো অনেক পরিবার শুধু অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রির ওপর গুরুত্ব দেয়, যা ভবিষ্যতে চাকরির নিশ্চয়তা দেয় না।

বিবাহের সামাজিক প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, অনেক বাবা-মা কেবলমাত্র ছেলেকে বিএ বা এমএ পাস করানোর জন্য উৎসাহিত করেন, যাতে ভালো বিয়ে হয়। অথচ অনেক ক্ষেত্রে এসব ডিগ্রি অর্জন করেও অনেকে চাকরি খুঁজতে আগ্রহী নন, কারণ তারা পারিবারিক ব্যবসায় নিয়োজিত থাকেন বা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল।

 কারিগরি ও ডিপ্লোমা ডিগ্রির প্রতি সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে এখনো এই শিক্ষাকে অবজ্ঞা করা হয়, যা পরিবর্তন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, “এটা একটা ট্যাবু, স্টিগমা রয়েছে গোটা দেশের ভেতর- ডিপ্লোমা যদি পড়ে, কারিগরি যদি পড়ে, তাহলে এটা খুব খারাপ একটা বিষয় হবে। লোকের কাছে মুখ দেখাতে পারবে না।”

সরকার এ অবস্থার পরিবর্তন আনতে চায় এবং কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। অধ্যাপক আমিনুল বলেন, দেশে কারিগরি শিক্ষার মান অত্যন্ত নিম্নমানের, যেখানে প্রয়োজনীয় শিক্ষক, ট্রেইনার ও ল্যাবরেটরির অভাব রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না, কেবল তাত্ত্বিক শিক্ষা দিয়ে তাদের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।

তিনি আরও জানান, সরকার এখন এই ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। ল্যাবরেটরি, ট্রেইনার ও শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ানো হবে এবং কর্মমুখী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে তোলা হবে, যাতে তারা চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক সাইদুর রহমান, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব কবিরুল ইসলাম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ খান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সিদ্দিক জোবায়ের।

সরকারের এই নতুন উদ্যোগ শিক্ষাব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে বলে মনে করা হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের বাস্তবমুখী দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।