শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য ‘প্রত্যাখান’, মহাসড়ক থেকে সরে কলেজের সামনে তিতুমীর শিক্ষার্থীরা
সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবির বিষয়ে দেওয়া শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য ‘প্রত্যাখান’ করেছেন কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
তারা উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কলেজের সামনে থেকে ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ ব্যানারে মিছিল নিয়ে আমতলী এলাকায় গিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন।
এক ঘণ্টা অবরোধ শেষে আবার মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের সামনে এসে সড়কে বসে পড়েন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, উপদেষ্টার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তারা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন।
আন্দোলনরত আরেক শিক্ষার্থী নায়েক নূর বলেন, “আমরা আমতলীর প্রধান সড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে এক ঘণ্টার মত ছিলাম। এখন আমরা ক্যাম্পাসের দিকে ফিরে যাচ্ছি। আগামীকাল সকাল ১১ থেকে আবারও আমাদের অবরোধ কর্মসূচি চলবে।
“কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরা আমাদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন। তাদের নিয়ে কোনো কর্মসূচি হলে, তা জানানো হবে।”
সরেজমিনে দেখা গেছে, আমতলীতে বেশ দায়িত্বরত রয়েছেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। সেখানে রয়েছে একটি জলকামানও। বর্তমানে তিতুমীর কলেজের সামনে বাঁশ দিয়ে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন আন্দোলনরতরা।
তার আগে রোববার দুপুরে একনেক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের যে দাবি সেটিকে তিনি ‘বিশেষ বিবেচনা’ করেননি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘দাবি-দাওয়া পূরণের জন্য আসেনি’ মন্তব্য করে শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “আমরা এসেছি সুশাসিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের জন্য। সেই ফাঁকে ছোট ছোট রিফর্মগুলো করে ফেলতে চেষ্টা করব।
“আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে, সাতটা কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে চায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাতটা কলেজকে চায় না। এটা যুক্তিসঙ্গত। এ কারণে সাতটা কলেজকে পৃথকভাবে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে তৈরি করার জন্য একটা বিশেষজ্ঞ কমিটি আছে, ইউজিসি চেয়ারম্যানের অধীনে। সেই সাত কলেজের মধ্যে তিতুমীর কলেজও আছে। তাদের ব্যাপারেও বিশেষভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে সেখানে।
“এই সাত কলেজের ছাত্রছাত্রীদের যেসব বিড়ম্বনা এ কয়েক বছর ধরে, তাদের যে অসুবিধাগুলো; এগুলোর জন্য তিতুমীর কলেজসহ সবগুলো কলেজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তারা বসেছেন।”
বাংলাদেশে অনেক ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ আছে মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, “সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী কলেজ হল রাজশাহী কলেজ। বিএম কলেজ আছে, এমসি কলেজ আছে। কাজেই অনেক কলেজইতো আছে, প্রত্যেক কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়....।”
সরকারি খাতের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংখ্যা কমানো উচিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আসলেই তা সত্য। ৫৫টা বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি খাতে আছে। এর মধ্যে অর্ধেকই গত সাত বছরে হয়েছে। এত দ্রুত গতিতে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির রেকর্ড বাংলাদেশ স্থাপন করেছে।
“একটা বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা থেকে হতে গেলে কয়েক বছর লাগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাত আট বছরের পরিকল্পনা ও কয়েকটা কমিশনের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে স্থাপিত হয়েছিল।”
তিতুমীর কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাক্রমে যেন অসুবিধা না হয় এবং জনদুর্ভোগ না হয় সে রকম কর্মসূচি দিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনুরোধ জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, “তিতুমীর কলেজের অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসে ফিরে যেতে চায়। তারা জনদুর্ভোগ চায় না।”
তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরসহ সাত দফা দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা অনশন ও দফায় দফায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আসছেন।
এমন পরিস্থিতিতে শনিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতি বলা হয়েছিল, সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবির বিষয়টি সরকার ‘বিশেষভাবে বিবেচনা করছে’।
গেল ২৭ জানুয়ারি রাতে ‘তিতুমীর ঐক্যর তরফে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়। দাবি মানা না হলে বৃহস্পতিবার থেকে অবরোধের ঘোষণাও দেওয়া হয় তখন।
ওই রাতেই ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে আমরণ অনশন’ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে কলেজের মূল ফটকের সামনে অনশন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘তিতুমীর ঐক্যর’ সাত দফার মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ; ‘বিশ্ববিদ্যালয়’প্রশাসন গঠন করে ২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা এবং শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা কিংবা শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন করা।