গুলশান ছাড়লেও ক্যাম্পাসের সামনের সড়কে তিতুমীর শিক্ষার্থীরা
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলনে নামা সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে সরে গেলেও নিজেদের ক্যাম্পাসের সামনের সড়কে অবরোধ অব্যাহত রেখেছেন।
শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে মিছিল নিয়ে গুলশান ১ নম্বর গোলচত্বরে সড়ক আটকে বসে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এরপর রাত পৌনে ৮টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের দিকে রওনা হন।
এর আগে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে নিজেদের ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান নিয়ে মহাখালী-গুলশান সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা। রাত সোয়া ৮টার সময়ও এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মিছিল নিয়ে মহাখালী ঘুরে গুলশান ১ নম্বর গোল চত্বর অবরোধ করেছিলাম।
“সেখানে এক ঘণ্টা অবরোধ চলে। রোববার থেকে পুরোদমে অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।”
এর আগে বিকাল সোয়া ৫টায় ক্যাম্পাস থেকে কয়েকশ শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তারা মহাখালী রেলগেট ক্রসিং ও আমতলী ঘুরে ফের ক্যাম্পাসের সামনে দিয়ে গুলশান ১ নম্বরের দিকে এগিয়ে যান।
নায়েক নূর নামের এক আন্দোলনকারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা ঢাকা উত্তর ব্লকেড ঘোষণা করেছিলাম। তার অংশ হিসেবে এই বিক্ষোভ মিছিল।”
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পেলে শনিবার বিকাল থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়ক ও রেলপথ অবরোধে 'বারাসাত বেরিকেড টু ঢাকা নর্থ' কর্মসূচি দিয়েছিলেন তারা।
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরসহ সাত দাবিতে এই আন্দোলন করছেন তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা।
দাবি আদায়ে গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে পরের দিন ভোর পর্যন্ত তারা মহাখালী-গুলশান সড়ক অবরোধ করে রাখেন। তাতে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়, চরম ভোগান্তিতে পড়েন হাজারো মানুষ।
শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে কলেজের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তায় দ্বিতীয় দিনের মতো সড়ক অবরোধ করেন তারা।
সেদিন রাত ৯টার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব নুরুজ্জামান।
দাবি-দাওয়া সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তুলে ধরবেন, তার এমন আশ্বাসেও পথ ছাড়েননি শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘তিতুমীর ঐক্যর’ সাত দফার মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ; ‘বিশ্ববিদ্যালয়’প্রশাসন গঠন করে ২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা এবং শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা কিংবা শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন করা।
এছাড়া ২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে ন্যূনতম আইন এবং সাংবাদিকতা বিষয় সংযোজন; অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনায় যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ: শিক্ষার গুণগতমান বাড়াতে আসন সংখ্যা সীমিত করা এবং আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার নির্মাণে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিত করার দাবিও রয়েছে শিক্ষার্থীদের।
এর আগে গত সোমবার রাতে ‘তিতুমীর ঐক্যর তরফে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়। দাবি মানা না হলে বৃহস্পতিবার থেকে অবরোধের ঘোষণাও দেওয়া হয় তখন।
আন্দোলনকারীরা এর আগে ৭ জানুয়ারি শিক্ষালয়টির প্রধান ফটকে 'তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়' লেখা ব্যানার টানিয়ে দেন।
একই দাবিতে গত ১৮ নভেম্বর মহাখালীর আমতলী, কাঁচাবাজার ও রেলক্রসিংয়ে শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। পরদিন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে 'ক্লোজডাউন তিতুমীর' কর্মসূচি দেন তারা।
এরপর ৩ ডিসেম্বর তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে ওই কমিটি 'যথাযথভাবে' কাজ করছে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।