শনিবার বিকাল থেকে ঢাকা উত্তরে অবরোধের ডাক তিতুমীর শিক্ষার্থীদের

স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পেলে শনিবার বিকাল থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়ক ও রেলপথ অবরোধের ডাক দিয়েছেন সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচির নাম দিয়েছেন 'বারাসাত বেরিকেড টু ঢাকা নর্থ', যা বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে রোববার সকালে কয়েক ঘণ্টা শিথিল রাখা হবে।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা।
রাতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণার সময় কলেজের সামনের মহাখালী-গুলশান সড়কে তাদের অবরোধ চলছিল। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তিতুমীরের ছাত্রীরাও।
সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর প্লাটফর্ম 'তিতুমীর ঐক্যের' নেতা গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "শনিবার বিকাল ৪টার মধ্যে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না এলে আমরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকা অবরোধ করব। সড়ক ও রেলপথ এর আওতায় পড়বে।"
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে রোববার ভোর ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি শিথিল থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, "এরপর থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।"
কলেজের ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "গণঅনশনে সাত শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছেন। একজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়েছে।”
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরসহ সাত দাবিতে এই আন্দোলন করছেন তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে কলেজের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তায় দ্বিতীয় দিনের মতো সড়ক অবরোধ করেন তারা।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে ভোর পর্যন্ত তারা সড়ক অবরোধ করেন। তাতে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়, চরম ভোগান্তিতে পড়েন হাজারো মানুষ।
সেদিন রাত ৯টার দিকে কলেজের প্রধান ফটকের সামনে আন্দোলনরতদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. নুরুজ্জামান।
দাবি-দাওয়া সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তুলে ধরবেন, তার এমন আশ্বাসেও পথ ছাড়েননি শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার ভোরে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছেড়ে দিলেও তাদের কয়েকজন আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যান।
জুমার নামাজের পর তাদের সতীর্থরা একটি মিছিল নিয়ে মহাখালীর আমতলী ঘুরে এসে সড়ক অবরোধ করেন। তবে ছুটির দিন হওয়ায় এদিন আশপাশের সড়কে তেমন প্রভাব পড়েনি।
আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম ‘তিতুমীর ঐক্য’র সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ, ‘বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রশাসন গঠন করে ২৪-২৫ সেশনের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা, শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত না হলে অনতিবিলম্বে শতভাগ শিক্ষার্থীর আবাসিক খরচ বহন করা।
এছাড়া ২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ন্যূনতম আইন এবং সাংবাদিকতা বিষয় সংযোজন, অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন পিএইচডিধারী শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষার গুণগতমান শতভাগ বাড়াতে আসন সংখ্যা সীমিত এবং আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার বিনির্মাণে জমি ও আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিত করার দাবিও রয়েছে শিক্ষার্থীদের।
এর আগে গত সোমবার রাতে ‘তিতুমীর ঐক্য’র তরফে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো গঠনে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়। দাবি মানা না হলে বৃহস্পতিবার থেকে মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধের ঘোষণাও দেওয়া হয় তখনই।
আন্দোলনকারীরা এর আগে ৭ জানুয়ারি শিক্ষালয়টির প্রধান ফটকে 'তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়' লেখা ব্যানার টানিয়ে দেন।
একই দাবিতে গত ১৮ নভেম্বর মহাখালীর আমতলী, কাঁচাবাজার ও রেলক্রসিংয়ে শত শত শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। পরদিন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে 'ক্লোজডাউন তিতুমীর' কর্মসূচি দেন তারা।
এরপর ৩ ডিসেম্বর তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে ওই কমিটি 'যথাযথভাবে' কাজ করছে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।