এমপিও ভুক্ত শিক্ষকরা জানুয়ারি থেকে ইএফটি’র মাধ্যমে বেতন পাবেন: শিক্ষা উপদেষ্টা
এমপিও ভুক্ত শিক্ষকরা জানুয়ারি থেকে ইএফটি'র মাধ্যমে বেতন-ভাতা পাবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
তিনি বলেন, শিক্ষকদের বেতন ও অবসর সুবিধা প্রদানে ইএফটি পদ্ধতি হয়রানি ও ভোগান্তির অবসান করেছে। ইএফটি পদ্ধতিতে এমপিও’র অর্থ সুবিধা প্রদানের ফলে দুর্নীতি দূর হবে।
আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে অনুষ্ঠিত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিও’র অর্থ, অবসর ও কল্যাণ সুবিধা অনলাইনে ইএফটি পদ্ধতিতে প্রেরণ এবং এনসিটিবির ওয়েবসাইটে পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরসহ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন, অবসর ও কল্যাণ সুবিধা এখন ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ইএফটি) পদ্ধতিতে সরাসরি ব্যাংক হিসাবে প্রেরণ করার পদ্ধতি চালু হওয়ার ফলে শিক্ষক কর্মচারীদের দীর্ঘদিনের হয়রানি ও ভোগান্তির অবসান হলো।
তিনি বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য এই নতুন ইএফটি ব্যবস্থা সময় ও অর্থের সাশ্রয় নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি, শিক্ষাখাতে আর্থিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারের নগদ ব্যবস্থাপনাকে আরও সুসংহত করবে।
সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা সহজ করতে আইবাস ++ (ইন্টিগ্রেটেড বাজেট এন্ড এ্যকাউনটিং সিস্টেম) পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। আইবাস ++ অর্থ বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়িত স্ট্রেনদেনিং পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম টু এনবল সার্ভিস ডেলিভারি (এসপিএফএমএস) কর্মসূচির একটি স্কিম। এই পদ্ধতির মাধ্যমে সরকারি কর্মচারী, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি এবং সামাজিক নিরাপত্তা উপকার-ভোগীদের দ্রুত আর্থিক সেবা দেওয়া হয়। ইএমআইএস প্ল্যাটফর্মে শিক্ষক ও কর্মচারীদের তথ্য সংরক্ষণ করা হয়, যা থেকে বেতনের পে-রোল তৈরি করে আইবাস ++ এর মাধ্যমে ইএফটি পদ্ধতিতে সরাসরি ব্যাংক হিসাবে অর্থ পাঠানো হয়।
ইএফটি পদ্ধতির আওতায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রতি মাসের প্রথম কর্ম-দিবসে বেতন পাবেন। বেতন প্রদান সংক্রান্ত তথ্য এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানরা অনলাইনে বেতন-ভাতার বিবরণী দেখতে পারবেন।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসর ও কল্যাণ সুবিধাও ইএফটি পদ্ধতিতে দেওয়া হবে। তাদের বেতন থেকে যথাক্রমে ৬% ও ৪% অর্থ অবসর ও কল্যাণ তহবিলে জমা হবে এবং অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সুবিধার অর্থ সরাসরি তাদের ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হবে। আবেদনকারীরা প্রতিটি স্তরে তাদের আবেদন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি এসএমএসের মাধ্যমে জানতে পারবেন।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের জন্য ১৩,৪৯৫.১৬ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি কলেজের জন্য ৩২৯.৯৭ কোটি এবং স্কুলের জন্য ৯,১৬৫.১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের জন্য যথাক্রমে ৫,০৭৩.৫৮ কোটি ও ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
বর্তমানে দেশে এমপিওভুক্ত মোট প্রতিষ্ঠান সংখ্যা- ১৯,৮৪৭ এবং এমপিওভুক্ত মোট শিক্ষক ও কর্মচারীর সংখ্যা- ৩,৯৮,০৬৮ জন। এর মধ্যে ২,৮২৮টি কলেজে এমপিওভুক্ত শিক্ষকের সংখ্যা ৬৮,৯৪৯ জন ও কর্মচারীর সংখ্যা ২৮,২৫৭ জন; ১৭,৪৭৮টি বিদ্যালয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষকের সংখ্যা ২,১১,৪৪৩ জন ও কর্মচারীর সংখ্যা ৮৯,৪১৯ জন; ৮,২২৯টি মাদ্রাসায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকের সংখ্যা ১,৩৮,৫৫৯ জন ও কর্মচারীর সংখ্যা ৪২,১৩৪ জন এবং ২,২৮২টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকের সংখ্যা ১৬,৫৫৭ জন ও কর্মচারীর সংখ্যা জন ৫,৫৬৪ জন।
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য এই নতুন ইএফটি ব্যবস্থা সময় ও অর্থের সাশ্রয় নিশ্চিত করবে। পাশাপাশি, শিক্ষাখাতে আর্থিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারের নগদ ব্যবস্থাপনাকে আরও সুসংহত করবে।
ভবিষ্যৎ মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের সাথে আইবাস ++ সংযোগ স্থাপন এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য পার্সোনাল লেজার (পিএল) অ্যাকাউন্ট তৈরি করে ইএফটি পদ্ধতিতে বেতন প্রদানের পরিকল্পনা রয়েছে।