ষষ্ঠ-নবম শ্রেণি: শিখন মূল্যায়নের সঙ্গে ৭০ নম্বরের বার্ষিক পরীক্ষা
মাধ্যমিক পর্যায়ে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির চলতি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ৭০ নম্বরের প্রশ্নপত্রে তিন ঘণ্টার বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে, বাকি ৩০ নম্বর নির্ধারিত হবে শিখনকালীন মূল্যায়নের ওপর।
বুধবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবি ২০২৪ সালের শিখনকালীন মূল্যায়ন ও বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত এক নির্দেশিকায় এই তথ্য দিয়েছে।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এই মূল্যায়ন ২০২২ শিক্ষাক্রম অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা বর্তমান বইয়ের ওপর করা হবে।
নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী-
>> ষষ্ঠ থেকে নবম- এই চার শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন শিখনকালীন মূল্যায়ন ও বার্ষিক পরীক্ষা- এই দুই ভাগে করা হবে।
>> শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজস্ব তত্ত্বাবধানে শিক্ষকদের মাধ্যমে শিখনকালীন মূল্যায়ন ও প্রদত্ত প্রশ্নের নমুনা অনুযায়ী বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি করতে পারবে। তবে কোনোভাবেই নমুনা প্রশ্নের হুবহু ব্যবহার করা যাবে না।
>> প্রতিটি বিষয়ের মূল্যায়নের মোট নম্বর ১০০ হবে। এর মধ্যে শিখনকালীন মূল্যায়নের গুরুত্ব ৩০ শতাংশ আর পরীক্ষার গুরুত্ব ৭০ শতাংশ। বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল তৈরির সময় বিষয়ভিত্তিক জিপি নির্ধারণ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
শিখনকালীন মূল্যায়ন যেভাবে-
>> প্রতিটি বিষয়ের পাঠ্য বইয়ে নির্দেশিত একক কাজ, জোড়ায় কাজ, পোস্টার প্রেজেন্টেশনসহ সব কাজ শিখনকালীন মূল্যায়নের ‘মূল্যায়ন আইটেম’ হিসেবে বিবেচিত হবে। শিখনকালীন মূল্যায়নে বিষয়ভিত্তিক নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে।
>> সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচির আওতাধীন শিখনকালীন মূল্যায়নের যেসব কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে এবং যে গুলো সামনে হবে, সেগুলোর রেকর্ড যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। শিখনকালীন মূল্যায়নের সব কাজ বার্ষিক পরীক্ষা শুরুর আগে শেষ করতে হবে।
বার্ষিক পরীক্ষা যেভাবে
>> বার্ষিক পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি অনুযায়ী প্রতিটি বিষয়ে ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে সম্পন্ন হবে।
>> লিখিত পরীক্ষা ৩ ঘণ্টার হবে।
>> লিখিত পরীক্ষায় আগের মত বিদ্যালয়গুলোর প্রয়োজনীয় খাতা সরবরাহ করতে হবে।
ফলাফল প্রস্তুত পদ্ধতি
>> শ্রেণি উত্তরণে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বার্ষিক ফলাফল প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে প্রতি বিষয়ের মোট নম্বর ১০০ হবে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়নের আর লিখিত পরীক্ষার গুরুত্ব হবে ৭০ শতাংশ।
>> এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের একটি বিষয়ের ফলাফল প্রস্তুত করতে ওই বিষয়ের শিখনকালীন মূল্যায়নে তার প্রাপ্ত নম্বরের সঙ্গে লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ৭০ শতাংশ যোগ করে ওই বিষয়ের বার্ষিক ফলাফল বা গ্রেড নির্ণয় করতে হবে।
গ্রেডিং নির্ণয় হবে যেভাবে
>> কোনো বিষয়ে ৮০ থেকে ১০০ নম্বর পেলে ‘এ+’ বা ৫ পয়েন্ট, ৭০ থেকে ৭৯ নম্বর পেলে ‘এ’ বা ৪ পয়েন্ট, ৬০ থেকে ৬৯ নম্বর পেলে ‘এ-’ বা ৩ দশমিক ৫ পয়েন্ট, ৫০ থেকে ৫৯ পেলে ‘বি’ বা ৩ পয়েন্ট, ৪০ থেকে ৪৯ পেলে ‘সি’ বা ২ পয়েন্ট, ৩৩ থেকে ৩৯ পেলে ‘ডি’ বা ১ পয়েন্ট ও ০০ থেকে ৩২ পেলে এফ বা শূন্য পয়েন্ট পাবেন শিক্ষার্থীরা।
>> কোনো বিষয়ে সর্বনিম্ন ডি পেলে ওই বিষয়ে শিক্ষার্থীকে উত্তীর্ণ বলে বিবেচনা করা হবে। তিন বা তার বেশি বিষয়ে কোনো শিক্ষার্থী ‘ডি’ পেলে সে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হতে পারবে না।
তবে ‘বিষয়’ শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে প্রতিষ্ঠান প্রধান বিশেষ বিবেচনায় তাকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তরণের সুযোগ দিতে পারেন। এ সুযোগ শুধু ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য বিবেচিত হবে।
নতুন কারিকুলামে মাধ্যমিক পর্যায়ে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে পরীক্ষা ছিল না। শিক্ষার্থীদের শিখনকালীন ও বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে এক শ্রেণি থেকে আরেক শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করার নিয়ম ছিল।
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের তিন দিন পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এই সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা দায়িত্ব নেওয়ার পরই নতুন কারিকুলাম বাতিল করে পুরাতন কারিকুলামে ফেরার ঘোষণা দেন।
গত ১ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব রহিমা আক্তার স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে বলা হয়, নানা সমস্যার কারণে জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২ ‘বাস্তবায়নযোগ্য নয়’।
এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের বাঁধা হিসেবে শিক্ষকদের প্রস্তুতির ঘাটতি, পাঠ্য বিষয়বস্তু ও মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে অস্পষ্টতা, নেতিবাচক ধারণা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাবের কথা বলা হয় সেখানে।
সিদ্ধান্ত হয়েছে, পাঠ্যক্রম সংশোধন ও পরিমার্জন করে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে এবং আগামী বছর থেকে পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন আসবে।
মাধ্যমিকে ছয়টি করে বিষয়ভিত্তিক যে মূল্যায়ন কার্যক্রম এ বছর অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে, সেগুলো আর হবে না। ২০২৬ সালের এসএসসি ও সমানের পরীক্ষায় বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা অব্যাহত থাকবে। ২০২৫ সালে যথাসম্ভব সংশোধন ও পরিমার্জন আনা হবে পাঠ্যবইয়ে।