বৃহস্পতিবার ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, মাঘ ৯ ১৪৩১, ২৩ রজব ১৪৪৬

ব্রেকিং

‘জুলাই চেতনা প্রত্যাখ্যানে সামাজিক মাধ্যমে কোনো বিধিনিষেধ নয়’ শিক্ষার অবস্থা এতই খারাপ, তিন মাসে কিছু করা সম্ভব নয়: উপদেষ্টা গাজীপুরে যানবাহন ভাঙচুর, কারখানায় আগুন দিলেন বেক্সিমকোর শ্রমিকেরা পরবর্তী ২০ বছর বাংলাদেশের রাজনীতিতে তরুণরা প্রভাব ফেলবে : তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েই বেশি ভাবছে: কমিশনার রাতের ভোটে জড়িতদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু ট্রাম্পের নীতি অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের সমস্যায় ফেলতে পারে বেশ কিছু পণ্য ও পরিসেবায় ভ্যাটের হার কমিয়েছে এনবিআর যুক্তরাষ্ট্রে স্কুল-গির্জা-হাসপাতালেও চলবে অভিবাসী ধরপাকড় দুশ্চিন্তা যখন ভালো

এডিটর`স চয়েস

‘জুলাই চেতনা প্রত্যাখ্যানে সামাজিক মাধ্যমে কোনো বিধিনিষেধ নয়’

 প্রকাশিত: ২৩:১৬, ২২ জানুয়ারি ২০২৫

‘জুলাই চেতনা প্রত্যাখ্যানে সামাজিক মাধ্যমে কোনো বিধিনিষেধ নয়’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা প্রত্যাখ্যান যারা করবে, তাদের বিরুদ্ধে সরকারের তরফে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ না করার কথা বলেছেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের নীতি পরামর্শক (সমন্বয় ও সংস্কার) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া প্রণয়নের সময় এ বিষয়ে ধারা রাখার দাবি তরুণসহ বিভিন্ন মহল থেকে থাকলেও এটি ‘খারিজ’ করে দেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।

বুধবার ঢাকায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ আয়োজিত এ অধ্যাদেশ বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এ বিষয় ছাড়াও নতুন খসড়ায় বিতর্কিত ‘সাইবার বুলিং’ ও ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে’ আঘাতের মত বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে ধর্মীয় বিদ্বেষ এবং জাতিগত ঘৃণার বিধান রাখা হয়েছে।

ফয়েজ আহমদ বলেন, আইনের খসড়া নিয়ে যখন তারা কাজ করেন, তখন সুশীল সমাজ, তরুণ ও সমাজের নানা প্রান্ত থেকে বিভিন্ন ধরনের দাবি এসেছিল।

“একটা সুস্পষ্ট দাবি এসেছিল এরকম যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটকে কোনোপ্রকার ডিনাইয়াল যারা করবে তাদেরকে ব্লক করা। কিন্তু আমরা, উপদেষ্টার পরামর্শে এই অনুরোধগুলোকে খারিজ করে দিয়েছি।”

একই সঙ্গে সরকার সামাজিক মাধ্যমের কোন কন্টেন্ট ব্লকও করতে পারে না বলেছেন তিনি।

বরং সামাজিক বিভিন্ন প্লাটফর্ম তথা ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউব এর কমিউনিটি গাইডলাইন তুলে ধরে তাদের কাছে অনুরোধ করতে পারে সরকার। ব্লক করা বা না করার সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটির, বলেন ফয়েজ আহমদ।

এছাড়াও সমালোচনার মুখে সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে নীতিগত অনুমোদন পাওয়ার পরেও খসড়া অধ্যাদেশে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৬ অগাস্ট ক্ষমাচ্যুত হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ভিন্নমত, বিরোধী মত দমনে প্রথমে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং পরে তা সংশোধন করে প্রণয়ন করা সাইবার নিরাপত্তা আইন ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনার অভিযোগে মামলা করে হয়রানি, আটক ও ‘গুমের’ অভিযোগও উঠেছে।

ক্ষমতার পালাবদলের পর অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ করার উদ্যোগ নিয়েছে। সে অধ্যাদেশের খসড়াটি পর্যালোচনার পর্যায়ে রয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের নীতি পরামর্শক বলেন, “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, এই ধরনের শব্দচয়ন থেকে আমরা সরে এসেছি। তো এই ধরনের শব্দচয়ন থাকলে আমরা যেটা করি, আমাদের বিচারিক ব্যবস্থাকে আমরা ওভার ভ্যালুড করে ফেলি।

“সেখান থেকে সরে এসে বিচার ব্যবস্থার ওপরে যাতে অযাচিত চাপ না পড়ে সেই জন্য শব্দ চয়ন অত্যন্ত সতর্কতা সাথে করেছি এই আইনে।”

ধর্মীয় বিদ্বেষ, জাতিগত ঘৃণার বিষয়গুলো থাকা উচিৎ কিনা, এমন প্রশ্ন উঠতে পারে তুলে ধরে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনসমাজ জনপরিসরে এই উত্তর দেবে যে আসলে বিষয়গুলো জনপরিসরে আছে কিনা। আমরা যদি দেখি, আছে। সেজন্য এটাকে অ্যাকোমডেট করার চেষ্টা ছিল।

“শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করেছি, এটাকে যতটা সম্ভব সংকুচিত করে আনা যায় এবং তার একটা প্রতিফলন আইনের ২৬ ধারায় দেখতে পাবেন।”

খসড়া অধ্যাদেশের ২৬ ধারায় সাইবার স্পেসে ধর্মীয় বা জাতিগত বিষয়ে ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক তথ্য প্রকাশ ইত্যাদির অপরাধ ও শাস্তি নিয়ে বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে বা ছদ্ম পরিচয়ে নিজের বা অন্যের আইডিতে অবৈধ প্রবেশ করে কোনো ধর্ম বা এর অনুসারীদের প্রতি ঘৃণা, বিদ্বেষ বা উস্কানিমূলক কোনো কিছু সাইবার স্পেসে প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করান, সেক্ষেত্রে এই ব্যক্তির এ ধরনের কাজ অপরাধ হবে।

এ ধরনের অপরাধে এ ব্যক্তি অনধিক ২ (দুই) বছর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

কোন ক্ষেত্রে ‘হেইট স্পিচ’ ধরা হবে বা এর সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে ফয়েজ আহমদ বলেন, “হেইট স্পিচের যে সংজ্ঞায়ন, সংজ্ঞায়নটা বাংলাদেশের প্যানাল কোডে আছে বলে সেটার রিপিটিশন এখানে হওয়ার দরকার নেই।”

গতানুগতিকভাবে এক নাগরিকের অন্য নাগরিককে হয়রানি করার যে সুযোগ সেটা বন্ধ করে শুধুমাত্র সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি এবং সরাসরি আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য এই আইন প্রযোজ্য করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।

ফয়েজ আহমদ বলেন, তল্লাশি কিংবা জব্দের ক্ষেত্রে কিংবা অন্যান্য ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট চাইলে সে আইনে মেরিট বিবেচনা করতে পারবেন এবং ম্যাজিস্ট্রেট যদি মনে করেন যে কোনো মেরিট নাই, মামলা তদন্ত হওয়ার আগে উনি খারিজ করে দিতে পারেন।

“আমরা আগেই বলেছি যে এই আইন এমন একটা উইন্ডো তৈরি করবে যে উইন্ডো আমাদের ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্ষা করবে।”

এছাড়াও আরও অনুরোধ ছিল এবং তা খারিজ করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “একটা অনুরোধ এরকম ছিল, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটটফর্মগুলো সাইবার স্পেস সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেয় তাহলে তাদের আইনের আওতাধীন করা। আমরা সার্বিক বিবেচনায় এই বিষয়টাকেও খারিজ করেছি।

“কারণ হচ্ছে, আপনারা জানেন যে বাংলাদেশের ডিজিটাল ইকোনমি এখনও গ্রোয়িং, ইন্টারনেট এখনও গ্রোয়িং, এই অবস্থায় আসলে আমরা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল, টিকটকসহ সবাইকে কোনো ধরনের জরিমানা বা শাস্তির আওতায় আনিনি। আমরা মনে করেছি, এটা ভবিষ্যতের বিবেচনার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।”

খসড়া অধ্যাদেশে পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তারের ধারাটি সংশোধন করে শুধু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হ্যাকিং এর শিকার হলে এ বিধান প্রযোজ্য হবে বলেও তিনি তুলে ধরেন।

আগামী ছয় সপ্তাহের মধ্যে ‘সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫’ চূড়ান্ত করার কাজ শেষ পর্যায়ে যেতে পারে বলেছেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি- আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী।

তিনি বলেন, “এখন সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে এবং পরামর্শ নিচ্ছি। আরও পরিমার্জন করে এটি তৈরি করা হবে।”