গাজায় ইসরাইলের বর্বরতা ॥ মুসলিম দেশগুলোর কলঙ্কজনক ভূমিকা!
প্রায় দুই মাস হতে চলেছে, ফিলিস্তিনী মুসলমানদের ওপর ইসরাইলের হত্যাযজ্ঞ ও বর্বরতা থামার নাম নেই। নিষ্পাপ নারী-শিশু, হাসপাতালের রোগী কেউ রেহাই পাচ্ছে না। মনে হচ্ছে শিশু ও হাসপাতালগুলোকে ইসরাইলীরা বিশেষ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। এ বেদনাদায়ক কথা যখন লেখা হচ্ছে ততদিনে হামলায় ১৫ হাজারের মতো ফিলিস্তিনী মুসলমানকে শহীদ করেছে ইসরাইল। যাদের প্রায় অর্ধেক শিশু। জখম হয়েছে আরও বহু নিরীহ লোক।
কিন্তু বিশ্ব নীরব। বিশ্ব মোড়লরা শুধু নীরবই নয়; বরং আমেরিকার বয়োজ্যেষ্ঠ রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন এখনো জোর দিয়ে বলে যাচ্ছেন, ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে। অর্থাৎ হাজার হাজার সাধারণ মানুষ হত্যা করাই হচ্ছে এদের আত্মরক্ষা; যদিও সে আত্মরক্ষাকারী নিজেই দখলদার ও অবৈধ। আমেরিকা ও তার অনুসারীদের এ অবস্থান অনেকটা অনুমেয়। কিন্তু সারা বিশ্ব অবাক হয়ে দেখছে, মুসলিম দেশগুলোর ভূমিকা। বিশেষত আরব দেশগুলোর ভূমিকায় স্তম্ভিত গোটা বিশ্ব।
ওআইসি ও আরব মুসলিম দেশগুলো ইসরাইলের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। এই তো কয়েকদিন আগে (১২ নভেম্বর ২০২৩) সৌদি যুবরাজ এমবিএসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আরব-আফ্রিকান ও ওআইসিভুক্ত ইসলামী দেশগুলোর নেতাদের সম্মেলন। সেখানে আরব আমিরাতসহ প্রভাবশালী মুসলিম দেশের বাধায় ইসরাইলের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। যদিও তুর্কিয়া, মালয়েশিয়া, ইরানসহ বিভিন্ন দেশ তেলবিক্রি বন্ধসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব তুলেছিল।
কিন্তু ইহুদীদের দোসর আরব-মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বিরোধিতায় তা পাশ হয়নি। যার কারণে সভা শেষে নতুন বা কার্যত কিছুই সামনে আসেনি। অথচ এরই মধ্যে পুরো দুনিয়ায় মজলুম ফিলিস্তিনীদের পক্ষে আওয়াজ উঠেছে। ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ইসরাইল-বিরোধী লক্ষ লোকের সমাবেশ হয়েছে।
এই ইস্যুতে বরখাস্ত হয়েছেন ব্রিটেনের ইহুদীবাদী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সরকারের ইসরাইল তোষণ-নীতির প্রতিবাদে ইস্তফা দিয়েছেন আমেরিকা-ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এমনকি মন্ত্রীও। দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশ জোর দাবি তুলেছে, ইসরাইল ও তার প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করতে। উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে ইসরাইলের সাথে সুসম্পর্ক ও তাকে সহযোগিতাকারী রাষ্ট্রগুলোর সুরও কিছুটা নরম হয়ে এসেছে।
কিন্তু মুসলিম ও আরব রাষ্ট্রগুলো, যাদের সবার আগে ভূমিকা নেওয়া দরকার, তারা মত্ত আছে আমোদ-ফুর্তি, ক্রিড়া-বিনোদন ও অর্থকড়ি নিয়ে। অর্থ ও ক্ষমতার মোহ তাদেরকে উন্মাদ করে তুলেছে। ভীতি পেয়ে বসেছে তাদের অন্তরে। যদিও এটা অবধারিত যে, ইহুদী বা বিজাতি-তোষণ ও ইসলাম বিরোধিতাকে হাতিয়ার বানিয়ে কোনো মুসলিম শাসকই ক্ষমতা স্থায়ী করতে পারবে না। বরং অতীতের অনেকের মতো এদেরও লাঞ্ছনাকর ভরাডুবি অবশ্যম্ভাবী। তবুও তারা তো আর অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেবার নয়।
যা হোক, আরব বা ক্ষমতাপাগল ভীরু মুসলিম শাসকদের জন্য ফিলিস্তিনের বিজয় বা ইসরাইলের পতন থেমে থাকবে না ইনশাআল্লাহ। কিন্তু যখন সেদিন আসবে তখন এদের অবস্থা কী হবে? নাকি ‘তূফানুল আকসা’ দেখে তাদের এখন থেকেই কম্পন শুরু হয়ে গেছে।
আলকাউসার