বিনিয়োগ সম্মেলন: দেশ নিয়ে ‘বৈশ্বিক বয়ান’ বদলাতে চায় বিডা

ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রোববার সংবাদ সম্মেলন করে বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রস্তুতি তুলে ধরে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ‘বদলে যাওয়া বাংলাদেশের’ চিত্র তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রস্তুতি সারার কথা বলেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
সোমবার থেকে শুরু হওয়া চার দিনের সম্মেলনে আলোচনা আর মতবিনিময়ের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে থাকছে ব্যবসার পরিবেশ দেখার সুযোগও।
রোববার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এসে সম্মেলনের নানা দিক তুলে ধরেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।
সম্মেলন আয়োজনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের বিষয়ে বৈশ্বিক বয়ান যে অবস্থায় থাকার কথা, সেখানে নাই। সামগ্রিকভাবে আমাদের দেশে কিছু ভালো জিনিস আছে, কিছু জায়গায় ভালো করার সুযোগ আছে। কিছু জায়গায় তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো করছি।
“সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় ধারণাগত দিক থেকে বিশ্বব্যাপী যেখানে থাকার কথা, সেখানে নাই। এটাকে পাল্টে দিতে বিনিয়োগকারীদের সরাসরি নিয়ে আসতে হবে এখানে, যেন তারা দেখে নিজেরা অভিজ্ঞতা পান।”
যেসব বিনিয়োগকারীর সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হবে, তাদেরকে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন পর্যন্ত পরিচর্যার পরিকল্পনা এ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রণয়নের কথাও বলেন বিডা চেয়ারম্যান।
সাবেক এই ব্যাংকার বলেন, “এ বছরটা সংস্কারেরও। উনারা যখন আসবেন, তাদের এ বার্তাটা দিতে চাই- ‘আসুন, নতুন বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা নিন’।
“যে গল্পটা আপনারা শুনেছেন, সেটা বদলেছে। সেই গল্পটাকে আরও ভালো গল্প করার জন্য অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”
আগের বিনিয়োগ সম্মেলনের সঙ্গে এবারের পার্থক্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, অতীতে কী হয়নি, তা নিয়ে কথা বলে সময় নষ্ট করতে চান না তিনি। তবে এবার আসা ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়মিতভাবে যোগাযোগের পথ তারা তৈরি করবেন।
“এখানে প্রজেক্ট ওয়ার্কের মত পাব, সেটার ওপর ভিত্তি করে আমরা পরবর্তী ১২ মাস বা ১৮ মাসে এদেরকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার চেষ্টা করব।”
চৌধুরী আশিক বলেন, স্বল্প সময়ের কোনো বিষয় চিন্তা করে মানুষ বিনিয়োগ করে না। দীর্ঘ মেয়াদে চিন্তা করে আগায় বিনিয়োগকারীরা। সেজন্য এখনকার বাংলাদেশের ধারাবাহিকতায় ২০৩৫ সালে বাংলাদেশের চেহারা কেমন হবে, সেটা তাদের সামনে দিতে চান তিনি।
“বর্তমান বাংলাদেশ কী রকম সেটার সত্যিকারের চিত্রটা দেওয়া এবং ১০ বছর পর বাংলাদেশ কেমন হবে, সেটা কল্পনা করার মত সঠিক উপায়গুলো দেওয়ার চেষ্টা আমরা করব।”
শ্রম আইন নিয়ে কাজের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং বহুপাক্ষিক কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনার কথাও বলেন তিনি।
মহাকাশ গবেষণা নিয়ে নাসার সঙ্গে একটি চুক্তি সইয়ের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে চৌধুরী আশিক বলেন, “নাসার সঙ্গে একটা চুক্তি করার চিন্তা করছি। বেসামরিক মহাকাশ গবেষণা নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে চিন্তা করছি। যেদিন চুক্তি হবে, সেদিন বিস্তারিত জানাতে পারব।”
কী কী থাকছে সম্মেলনে
বিডা চেয়ারম্যান বলেন, বিনিয়োগ সম্মেলনের প্রথমদিন সকালে ৬০ জনের বেশি বিনিয়োগকারীকে নিয়ে একটি বিশেষ ফ্লাইট যাবে চট্টগ্রামে। সেখান তারা থেকে কোরিয়ান ইপিজেড ও মীরসরাই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবেন।
“এরা হচ্ছেন সেসব উদ্যোক্তা, যারা ভাবছেন তাদেরকে একটা কারখানা নির্মাণ করতে হবে। উনাদেরকে দেখতে হবে, কী ধরনের সাপোর্ট তাদের দরকার।”
ওই পরিদর্শনের পাশাপাশি প্রথম দিন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘স্টার্টআপ কানেক্ট’ নামে থাকছে দিনব্যাপী আয়োজন। প্রাথমিক পর্যায়ের স্টার্টআপের সঙ্গে ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টদের মিলনমেলা হবে সেখানে।
চৌধুরী আশিক বলেন, দ্বিতীয় দিন বিনিয়োগকারীদের পাঠানো হবে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে। তারা জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চলে সরাসরি গিয়ে দেখবেন। যারা ইতোমধ্যে অপারেশনে আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলবেন, পরিদর্শন করবেন।
ওইদিনের দ্বিতীয়ার্ধে বিশ্বব্যাংক ও বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কিছু আয়োজন থাকছে। সেখানে এফডিআই ও ব্যবসায় পরিবেশ নিয়ে বিডার কিছু চুক্তি সই হবে।
৯ এপ্রিল সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সেখানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একজন স্থানীয় ও একজন বিদেশিকে টেকসই উদ্ভাবনের জন্য পুরস্কার দেওয়া হবে। এছাড়া বাংলাদেশে ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে বিনিয়োগ করা একজনকে সম্মাননার পাশাপাশি সম্মানসূচক নাগরিকত্ব নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ফাঁকে তিন-চারটা আয়োজন চলতে থাকবে। এর মধ্যে তরুণ উদ্যোক্তাদের একটি মেলাও আছে, যেখানে প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা কিছু স্টার্টআপের সঙ্গে কথা বলবেন প্রধান উপদেষ্টা।
ওইদিন দ্বিতীয়ার্ধে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা অনুষ্ঠান ও মতবিনিময় হবে। বেশ কিছু কোম্পানি, যারা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেবেন, তাদের সঙ্গে হবে এমওইউ।
এদিন প্রধান উপদেষ্টা জার্মান, কোরীয় ও চীনা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলাদাভাবে বসবেন। বৈঠক করবেন কিছু প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গেও। সেখানে বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হবে।
বিডা চেয়ারম্যান বলেন, “৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক যাত্রা তুলে ধরা হবে, যেন বিনিয়োগকারীরা দেশ ও দেশের মানুষের মনোভাব বুঝে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।”
১০ তারিখে আলোচনা ও মতবিনিময়ের অনুষ্ঠানগুলো আগের দিনের মত চলতে থাকবে বলেও জানান চৌধুরী আশিক।
স্টারলিংকের পরীক্ষামূলক ব্যবহারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “৯ তারিখে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে স্টারলিংক সার্ভিস প্রোভাইড করবে। আপনারা সামাজিক মাধ্যমে যেটা দেখবেন, সেটা স্টারলিংকের মাধ্যমে সংযোগ দেওয়া হবে। যারা সামিটে যাবেন, তারাও ব্যক্তিগত ডিভাইসে যুক্ত করে অভিজ্ঞতা নিতে পারবেন।”